সময়টা ২০১৪ সাল। বছরের প্রথম দিন। ঘুম ঘুম চোখে বিছানা ছেড়ে উঠলেন শহীদ আফ্রিদি। উঠে ফোনটা হাতে নিয়েই পেলেন দু:সংবাদ। জানতে পারলেন, তাঁর দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা আর নেই। আর এমন এক ক্রিকেটার সেই রেকর্ড ভেঙেছেন, যার নাম সাবেক এই পাকিস্তানি অধিনায়ক আগে কখনোই শোনেননি।
তখন দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স ঠিক আজকের মত মহীরূহই ছিলেন। তবে, তখনও দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা বিরাট ব্যবধানে নিজের করে নিতে পারেননি।
কুইন্সটাউনের ম্যাচটাকে তাই বাস্তবের না মনে হয়ে ভিডিও গেমস বলে বিভ্রম হয়েছিল। একজন ব্যাটসম্যান ৪৭ বলে অপরাজিত করেছিলেন ১৩১ রান। চার ছিল তাতে মাত্র ছয়টি। ছক্কায় অবশ্য কোনো কার্পণ্য রাখেননি। ১৪ বার বলটাকে আছড়ে ফেলেছিলেন বাউন্ডারির ওপারে।
এর চেয়েও বড় ব্যাপার হল, সেঞ্চুরি করেছিলেন মাত্র ৩৬ বলে। তখনকার তিনি এত কম বলে আর কেউই সেঞ্চুরির দেখা পাননি। তিনি ভাঙেন ১৭ বছর পুরনো এক রেকর্ড। দানবীয় ব্যাটিংয়ের চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন মাত্র ২৩ বছর বয়সেই।
বাঁ-হাতি সেই ব্যাটসম্যানটি হলেন কোরি অ্যান্ডারসন। নিউজিল্যান্ডের সেই ব্যাটসম্যানটি আজকের দিনে আর নিউজিল্যান্ডের নেই। শোনা যাচ্ছে পুরাদস্তুর আমেরিকান বনে গেছেন, ক’দিন পর নাকি সে দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে মাঠেও নামবেন।
তবে, ২০১৪ সালের বছরের প্রথম দিনে যখন কীর্তিটা গড়েছিলেন, তখন তিনি ছিলেন আগা-পশ্চাৎ কিউই। আর ব্যাটিংয়ের সাথে পেস বোলিংয়ের সমন্বয় তাঁকে রাতারাতি স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, ক্রিস কেয়ার্নস জ্যাকব ওরামদের যোগ্য উত্তরসূরি বানিয়ে দিয়েছিল। সেই তকমাটা কার্যত তিনি রাখতে পারেননি। তবে, অন্তত সেইদিনটা রাঙিয়ে দিতে পেরেছিলেন।
‘নায়ক’ সিনেমায় অনিল কাপুর যেমন একদিনের জন্য মূখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, তেমনি সেদিন কোরি অ্যান্ডারসনও বনেছিলেন একদিনের রাজা।
১৯৯৬ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৬ বছর বয়সী শহীদ আফ্রিদি। পাকিস্তানি তারকার এই রেকর্ডটা অক্ষত ছিল দীর্ঘ ১৭ বছর। এরপর সেটা ভাঙেন এই কোরি অ্যান্ডারসন।
সেদিন আসলে গোটা নিউজিল্যান্ড দলই হয়ে উঠেছিল অতিমানবীয়। জেসি রাইডারের সাথে ১৯১ রানের জুটি গড়েছিলেন অ্যান্ডারসন। আর সেখানে ওভার প্রতি তারা ১৫.২৮ রান তুলেছিলেন। রাইডারও ঝড় তুলেছিলেন। করেছিলেন ৫১ বলে ১০৪ রান। অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বেজায় খুশি ছিলেন সেদিন। বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটের মাঠে এমন ক্লিন স্ট্রাইক আগে আর দেখিনি।’
আফ্রিদি সেদিন বলেছিলেন, ’৩৬ বলে সেঞ্চুরি করতে হলে অবিশ্বাস্য রকম ভাল খেলতে হয়। আর রেকর্ড গড়াই তো হয় ভাঙার জন্য। জানতাম আমার রেকর্ডও একদিন ভাঙবে।’ অ্যান্ডারসন অবশ্য সেদিন তেমন কিছু বলেননি। তবে, অ্যান্ডারসনের রেকর্ড যদিও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। পরের বছরের শুরুতেই অ্যান্ডারসনকে টপকে মাত্র ৩১ বলে সেঞ্চুরি করেন ডি ভিলিয়ার্স। প্রতিপক্ষ যথারীতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই রেকর্ড আজও অক্ষত আছে।
রেকর্ডটার মত অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারও খুব বেশি লম্বা হয়নি। ওয়ানডেতে ওটাই এখন অবধি তাঁর প্রথম ও শেষ সেঞ্চুরি। টেস্টে একটা সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন অবশ্য। ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ – এই তিন বছরে তিনি যথাক্রমে নিজের ক্যারিয়ারের সর্বশেষ ওয়ানডে, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি খেলেন।
আজ তিনি ভাগ্যের অন্বেষণ করছেন মার্কিন মুল্লুকে। দেখা যাক, এই যাত্রাটা কেমন হয়!