বলা হয় – ‘ক্রিকেট ইজ আ ফানি গেম’। কত বিচিত্র ঘটনাই না ঘটে বাইশ গজে। শুধু কি ঘটনা? কতো বিচিত্র জায়গাতেই না ক্রিকেট খেলা হয়েছে। ফুটবল মাঠে, সাগর পাড়ে, কখনও বা বরফে। কিন্তু এই সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে ১৯০৮ সালে অনুষ্ঠিত এক ম্যাচ। সেবার মিডলসেক্স ও সারে মুখোমুখি হয়েছিল লন্ডন কলিসিয়াম থিয়েটারের মঞ্চে!
লন্ডন কলিসিয়াম (কলিসিয়াম থিয়েটার হিসেবে পরিচিত) লন্ডনের অভিজাত থিয়েটারগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ১৯০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর যাত্রা শুরুর পর ক্রমেই এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। নির্মাতাদের কাছে এই মিউজিক হলটির আদুরে নাম ছিল ‘জনগনের বিনোদন-প্রাসাদ’।
থিয়েটারটির মালিক স্যার অসওয়াল্ট স্টোলের উদ্যোগেই আয়োজিত হয়েছিল এই ম্যাচ। তার বিশ্বাস ছিল শীতের তীব্রতায় মাঠের চেয়ে মঞ্চেই ক্রিকেটটা বেশি জমজমাট হবে। মঞ্চটা বেশ বড়ও ছিল। দর্শক সারির সামনে থেকে শুরু কওে পিছনের দেয়াল পর্যন্ত ৮৫ ফিট। প্রশস্থতা ছিল ১৩০ ফিট। তারপরও ২২ গজের পিচটা নেমে এসেছিল মাত্র ১৫ গজে!
বল দর্শকদের উপর আছড়ে না পড়ে তার জন্য সামনের দিকটায় শক্ত একটা জাল দেয়া ছিল। আম্পায়ারকে একই সাথে বল বয়ের বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল। খেলোয়াড়দের থেকে আলাদা করার জন্য আম্পায়ার ছিলেন ভিন্ন পোশাকে। যদিও তার ঘুমের পোশাকের ব্যাখ্যা এখনও অজানা।
জায়গা’র সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতি দলে ছিলেন চারজন করে খেলোয়াড়। অ্যালবার্ট ট্রটের নেতৃত্বে চারজন পেশাদার খেলোয়াড় পাঠিয়েছিল মিডলসেক্স। ছক্কা মেরে বল লর্ডসের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া এই ফাস্ট বোলার অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড দু’দেশের হয়েই খেলেছেন। দলের বাকি সদস্যরা হলেন -জ্যাক হার্নান, ১৯ বছর বয়সী প্যাটসি হেনড্রেন ও এডওয়ার্ড মিঙ্গন। সারে কোন তারকা না থাকলেও চারজন কাউন্ট্রির মূল একাদশে খেলতেন – অ্যালান মার্শাল, লিওনার্ড গুডার, উইলিয়াম ডেভিস ও বিল হিচ।
কিছু বিচিত্র নিয়মও দেখা গিয়েছিল এই ম্যাচে। হয় সিঙ্গেল বের করো নয়, চার মারো – বিগ হিটের আলাদা কোন মর্যাদা ছিল না।
এমন একটা ম্যাচে সবকিছু পরিকল্পনা মতো হওয়াটা বেশ শক্ত; তা হয়ওনি। জাল দিয়েও বলকে বশে আনা যায়নি তাই শেষমেশ এটা ছাড়াই চলে খেলা। স্বেচ্ছাসেবী ফিল্ডার হিসেবে কাজ করেন দর্শকরাই।
প্রতি রাতেই একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে খেলা চলতো। বিজ্ঞাপনের খাতিরে ম্যাচের অবস্থা কলিসিয়ামের বাইরের নোটিশবোর্ডে ঝুলিয়ে দেয়া হত। প্রথম দিনের খেলা শেষে পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারী ডেইলি মিরর একে ক্রিকেট নামে ডাকতেই অস্বীকৃতি জানায়। তাদেও মতে ম্যাচটি ছিল ‘ভিগোরো’ যা মূলত অস্ট্রেলিয়ায় প্রচলিত। বেসবল আর ক্রিকেট বলের খিচুড়ি বানিয়ে খেলাটা খেলতো নারীরা।
সাতদিন খেলার পর ২৯ ফেব্রুয়ারি গিয়ে জয় পায় মিডলসেক্স। দুদলই পাঁচ পাউন্ড করে পায়। মিডলসেক্সকে দেয়া হয় বড় একটা বিয়ার-পাত্র।
লন্ডন কলিসিয়ামের এই আয়োজন আদৌ সফল হয়েছিল কি না সেটা কোন সূত্র থেকে জানা যায়নি। তবে, পরে আর কখনওই এরকম ম্যাচ আয়োজিত না হওয়ায় ব্যবসায়িক দিকটা সহজেই অনুমান করা যায়। ক্রিকেট ছাড়াও একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় টেনিস, ঘোড়দৌড়, পোলো সহ আরও কিছু খেলা।
প্রশ্ন হল, মাঠের খেলা মঞ্চে চলে আসলে সেই উত্তেজনা কি থাকে?