২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তানি তরুণ পেসার মোহাম্মদ হাসনাইনের ক্যারিয়ারে দেখা দেয় দুর্যোগের ঘনঘটা। বিগ ব্যাশ লিগে সিডনি থান্ডার্সের হয়ে খেলার সময় অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন তিনি। আম্পায়ারদের প্রতিবেদনের সত্যতা পাওয়ার পর তাকে নিষিদ্ধ করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।
অবশ্য তুলনামূলক দ্রুততার সাথেই নিজের বোলিং অ্যাকশনে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন হাসনাইন। এরপর আইসিসির ক্লিয়ারেন্স পেয়ে আবারো ফিরে আসেন ক্রিকেটে। তরুণ এই ক্রিকেটার দ্য হান্ড্রেড টুর্নামেন্টেও দল পেয়েছিলেন। দ্য ওভাল ইনভিন্সিবল এর হয়ে মাঠে নামেন তিনি। আর এখানেই তাঁর বোলিং অ্যাকশনের পুরোনো বিতর্ক আবার সামনে উঠে আসে।
অবশ্য এবার কোন ফিল্ড আম্পায়ার বা ম্যাচ অফিশিয়াল সংশ্লিষ্ট কেউ নয়, মোহাম্মদ হাসনাইনের বিরুদ্ধে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনে বল করার অভিযোগ করেছেন মার্কাস স্টোয়িনিস। অজি অলরাউন্ডার নিজেও খেলছেন ১০০ বলের টুর্নামেন্টে। সেখানে সাউদার্ন ব্রেভের হয়ে ওভাল দলের মুখোমুখি হন তিনি।
এই ম্যাচে মোহাম্মদ হাসনাইনের বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় মার্কাস স্টোয়িনিসকে। অবশ্য আউট হওয়ার ব্যাপারটি মানতেই পারেননি তিনি। মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দেন যে অবৈধ অ্যাকশনে বোলিং করেছেন হাসনাইন। পাকিস্তানি পেসারের ডেলিভারি স্টাইল নকল করে স্টোয়িনিস চাকিংয়ের দিকে ইঙ্গিত করেন।
তবে মার্কাস স্টোয়িনিসের এমন অভিব্যক্তি মেনে নিতে পারেনি অনেক ক্রিকেট ভক্ত। টুইটার সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেট ব্যবহারকারীরা স্টয়নিসের বিরুদ্ধে নিজেদের মন্তব্য প্রকাশ করেন।
‘দ্য এজ’ পত্রিকার লেখক ড্যানিয়েল ব্রেটিগ নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে বলেন, ‘এটা (স্টোয়িনিসের ইঙ্গিতপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি) বাজে ছিল। বোলিং অ্যাকশন নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট সংস্থা রয়েছে এবং তাদের একটা প্রক্রিয়া আছে। কেউ চাইলেই প্রতিপক্ষের সততা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলতে পারে না।’
এছাড়া অন্যরা স্টোয়িনিসের কাজটিকে বিব্রতকর এবং হতাশাজনক বলে অভিহিত করেছে। কেউ কেউ আবার স্টয়নিসকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করে শাস্তির কথা বলছেন।
যদিও মোহাম্মদ হাসনাইনের জন্য এমন অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম নয়। এর আছে আরেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার মোজেস হেনরিকস একইভাবে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন তাকে নিয়ে। বিবিএলের সর্বশেষ আসরে হাসনাইনকে ‘চমৎকার থ্রো’ বলে ব্যঙ্গ করেন এই ব্যাটসম্যান। অজি লিগে হাসনাইনের খেলা প্রথম ম্যাচ থেকেই বোলিং অ্যাকশনে সন্দেহ দেখা গিয়েছে বলে জানান হেনরিকস।
মোজেস হেনরিকস বলেন, ‘আমরা জানতাম যে কতৃপক্ষের কাছে এটি (হাসনাইনের ত্রুটিপূর্ণ বোলিং অ্যাকশন) ইতোমধ্যে রিপোর্ট করা হয়েছে। তবে আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে মনে করি যে, আম্পায়াররা ক্রিকেট মাঠে আসলে আরো বেশি কিছু করতে পারে। কিন্তু তারা নিজেদের কাজের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া এবং জনমত নিয়ে একটু বেশি দুশ্চিন্তা করে থাকে।’
তাছাড়া এই ডানহাতি যুক্তি দিয়ে বলে দিয়েছন যে, পাক পেসার যা করছিল তা খেলার স্পিরিটের সাথে যায় না। অবশ্য হেনরিকস মেনে নিয়েছেন যে তিনি সম্ভবত কিছুটা আবেগপ্রবণ এবং হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এবং তাই টুর্নামেন্টের মাঝ পথে এসব মন্তব্য প্রকাশ করেছেন।
আবার নিজেকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু সবাই জানে, আমি খারাপকে খারাপ এবং ভালোকে ভাল বলতে পারি। আমি আমার মত প্রকাশে কখনো দ্বিধা করিনা।’
এখন দেখার বিষয় ম্যাচ অফিশিয়ালরা এই পুরো ব্যাপারটি নিয়ে কি করেন। তারা হয়তো স্টয়নিসকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দোষে দণ্ডিত করতে পারেন। আবার একইভাবে হাসনাইনকেও হয়তো আরো একবার পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যেতে হবে।
দুর্দান্ত সব পেস বোলার তৈরি করা পাকিস্তানের ঐতিহ্য। সেই সাথে বিতর্কিত আর নাটকীয়তার জন্ম দেওয়াও সেই ঐতিহ্যের অংশ। মোহাম্মদ হাসনাইন সেসব বিতর্ক এড়িয়ে ক্রিকেটে নিজের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন কি না সেটিই আপাতত প্রশ্ন।