ক্রিকেটার কেন আসামী!

মানুষ মাত্রই ভুল করে। ক্রিকেটাররাও এর ব্যতিক্রম নয়। আধুনিক ক্রিকেটে তাই জেলে যাওয়া ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়। ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন, জেল খেটেছেন। তবে, এর বাইরেও কিছু ক্রিকেটার আছেন, যারা একেবারেই আজব সব কারণে গ্রেফতার হয়েছেন। তেমনই কয়েকজন ক্রিকেটারকে নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

  • সুরেশ রায়না (ভারত)

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। মুম্বাইয়ের এক নাইট ক্লাবে গিয়েছেলেন একটা পার্টিতে। তখনই পুলিশের রেইড। তখনই আটক হন রায়না। কি তাঁর দোষ? তিনি কোভিড ১৯-এর প্রটোকাল ভেঙেছেন। তাঁকে আইপিসি সেকশন ১৮৮ ও সেকশন ৩৪-এর অধীনে গ্রেফতার করা হয়। রায়না ও তাঁর অবশ্য জানায়, কোভিড ১৯ বিষয়ক এই প্রটোকল তাঁদের জানা ছিল না।

  • রুবেল হোসেন (বাংলাদেশ)

রীতিমত ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল বাংলাদেশের এই পেসারের বিরুদ্ধে। শুধু গ্রেফতার নয়, তিনদিন তাঁকে হাজতেও থাকতে হয়। জামিন পেয়ে তিনি ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলতে যান, সেখানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলকে ঐতিহাসিক এক জয় উপহার দেন। অভিযোগদাতা নাজনীন আক্তার হ্যাপি অবশ্য এরপরে অভিযোগ তুলে নেন। তাঁর আইনজীবী দাবী করেন, হ্যাপি আর আইনী লড়াই চালিয়ে যেতে চান না।

  • বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)

এটাও খুব আগের কোনো ঘটনা নয়। ২০১৭ সালে মদ্যপ অবস্থায় তিনি ব্রিস্টলের এক পানশালার বাইরে মারামারির ঘটনায় জড়ান ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। সিসি টিভি ফুটেজ তখন বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়েছিল। স্টোকসের সাথে তখন অ্যালেক্স হেলসও ছিলেন। ব্রিস্টলের পুলিশ দু’জনকেই গ্রেফতার করে। ঘটনায় দু’জনকেই সায়মিক ভাবে নিষিদ্ধ করে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। লম্বা সময় মামলাও চলে।

  • বিনোদ কাম্বলি (ভারত)

২০১৫ সালের ঘটনা। গৃহকর্মীকে লাঞ্ছনার অপরাধে স্ত্রী আন্দ্রেয়া হিউয়িটের  সাথে গ্রেফতার হন কাম্বলি। ওই গৃহকর্মী সোনি নাফেসিন সারসাল দাবি করেছিল, তাকে তিনদিন ধরে বাড়িতে যেতে না দিয়ে বাসায় আটকে রাখেন এই দম্পতি। এমনকি, বেতন দাবি করলে তাঁকে মারধোরও করা হয়। যদিও, কাম্বলির স্ত্রী দাবি করেন, গৃহকর্মী ছিলেন মাদকাসক্ত, দম্পতি বাড়ি থেকে বের হলেই নাকি তিনি মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতেন।

  • শাহাদাত হোসেন (বাংলাদেশ)

তিনিও বিনোদ কাম্বলির মতই গৃহকর্মী নির্যাতনের মত ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে স্ত্রীর সাথে ১১ বছর বয়সী গৃহকর্মীকে নির্যাতন করায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাটা এতটাই গুরুতর ছিল যে, তাঁকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) নিষিদ্ধ করে। পরে অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছিলেন।

এরপর ২০১৯-২০ মৌসুমে জাতীয় ক্রিকেট লিগের এক ম্যাচে সতীর্থ আরাফাত সানি জুনিয়রকে চড়-লাথি মারার ঘটনা ঘটান। এবার বিসিবি তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে।

  • প্রবীন কুমার (ভারত)

এই ঘটনাটা বেশ ভুতুড়ে। প্রতিবেশি ও তাঁর ছেলের গায়ে হাত তোলার অভিযোগে গ্রেফতার হন প্রবীন কুমার। ওই ডাক্তারের সাথে রাস্তায় মারামারি করে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন এই পেসার।

 

যদিও, প্রবীন এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘এটা বানোয়াট দাবি। ও আমার গলার চেইন টান দিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আসলে এটা স্থানীয় রাজনীতির জন্য হয়েছে। ওখানে আমি থাকে না। ওখানে আবার দুই-তিনটা বাড়ি আছে। ওখানে গিয়েছিলাম বাড়ির রঙের কাজ দেখতে।’ যদিও, এই ঘটনার পর প্রবীনের ক্যারিয়ারের আয়ুও ছোট হয়ে আসে। তবে, ঘটনায় তাঁর আট লাখ রুপির হারানো চেন আর পাননি প্রবীন।

  • ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস ও আকিব জাভেদ (পাকিস্তান)

পাকিস্তান দল তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ছিল। তখন কয়েকজন উগ্র সমর্থক খবর রটিয়ে দেন যে এই তিনজন নাকি সিগার নিয়ে তাঁদেন কাছে আসেন। পুরো ভিত্তিহীন এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতারও করে ফেলে। তবে, ডাক্তারি পরীক্ষার পর তাঁরা নির্দোষ বলে প্রমাণিত হন।

  • অমিত মিশ্র (ভারত)

অমিত মিশ্রও ভিত্তিহীন-বানোয়াট তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেটা ২০১৫ সাল, মিশ তখন ভারতীয় দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলছিলেন। তখন, তার ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়। মামলাও হয়।

অভিযোগকারী বলেছিলেন, তাকে নাকি মিশ্র কেবল অশালীন মন্তব্য করেননি, তাঁর দিকে গরম পানির কেটলি ছুড়ে মেরেছেন। তবে, এই অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। মিশ্র হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।

  • আরাফাত সানি (বাংলাদেশ)

২০১৭ সালের ঘটনা। সেবার পাঁচ জানুয়ারি বাঁ-হাতি স্পিনার আরাফাত সানির স্ত্রী দাবি করা নাসরীন আক্তার তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলা করেন। একই মাসের ২৪ তারিখ সানিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রায় দুই মাস জেল খেটে তিনি জামিনে মুক্তি পান মার্চের ১৫ তারিখ।

  • ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড)

১৯৮৬-৮৭ মৌসুম। অস্ট্রেলিয়ায় কুইন্স্যোন্ডের হয়ে খেলতে এসেছিলেন ইয়ান বোথাম। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থে ম্যাচ। জিতলেই প্রথম বারের মত শিরোপা জিতবে কুইন্সল্যান্ড।

পার্থের বিমানে কি একটা বিষয় নিয়ে তর্ক করছিলেন অধিনায়ক ইয়ান বোথাম ও গ্রেগ রিচি। বিমানের অন্য এক যাত্রী রিচিকে উদ্দেশ্য করে কি একটা যেন বলে উঠেছিলেন। বোথামও ছিলেন সেখানে। মন্তব্য শুনে একটু ক্ষেপে যান। ওই যাত্রীর কাঁধে হাত রেখে বলেন, ‘তুমি কি নিজের চড়কায় তেল দিতে পারো না!’

খুব সাধারণ একটা ঘটনা। বিমানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চলে আসেন। তিনি প্রথমে বোথামকে একটা ব্যাট দেন সাইন করার জন্য। এরপর তাঁকে গ্রেফতার করেন। জেলে যেতে হয় বোথামকে। সেখানে নাকি ডেনিস লিলি ছয়টা বিয়ারের বোতল নিয়ে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। ৪০০ ডলার জরিমানা দিয়ে বোথাম মুক্তি পান।

বোথাম ছাড়া পেলেও ম্যাচটা হারে কুইন্সল্যান্ড। বোথামের সাথে চুক্তিও বাতিল করা হয়। আত্মজীবনীতে বোথাম লিখেছেন, ‘এটা হৃদয়বিদারক একটা সমাপ্তি ছিল। কিন্তু, ততদিনে আমি ইংল্যান্ডকে মিস করা শুরু করেছিলাম। ওরা না ছাড়লে আমি নিজেই হয়তো চলে যেতাম।’

  • উমর আকমল (পাকিস্তান)

তখন ২০১৫ সাল। পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান উমর আকমলের মনটা ভাল ছিল না। মাত্রই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েছেন। মনে বল ফেরাতে তিনি গেলেন এক পার্টিতে। যেন তেন পার্টি নয়, সেটা ছিল এক অবৈধ মুজরা পার্টি। সেখানে নাম না জানা আরো কয়েকজন পাকিস্তানি ক্রিকেটারও ছিল। পাকিস্তানের হায়দ্রারাদের এক বাঙলোতে চলছিল পার্টি। আকমলরা মুজরা নাচ দেখছিলেন।

প্রতিবেশিদের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ চলে আসলো। সবাইকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হল থানায়। খবর চাউর হওয়া মাত্র পিসিবিরও টনক নড়ে। যদিও, তখন কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো ছাড়া বড় কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংস্থাটি।

আকমলের জন্য জেল কোনো নতুন ঘটনা নয়, এর আগে ২০১৪ সালেও ট্রাফিক পুলিশের সাথে কথাকাটির এক পর্যায়ে তিনি কর্তব্যরত ওই পুলিশের ইউনিফর্ম ছিড়ে ফেলেন। তাঁকে তখনই গ্রেফতার করে তিনটি ভিন্ন ধারায় মামলা ঠুঁকে দেওয়া হয়।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link