ক্রিকেট মাঠের ‘ভায়রা ভাই’

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘ভায়রা ভাই’ এখন খুব পরিচিত টার্ম। সেটা এই ভায়রা ভাইয়ের প্রতি কখনো ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে আবার কখনো কখনো ট্রল করা জন্যেও। মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেই ভায়রা ভাই। একই পরিবারের দুই মেয়েকে বিয়ে করে এই বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই তারকা।

তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ভায়রা ভাইদের সংখ্যা নেহায়েৎ কম না। এমনকি, বাংলাদেশেও তাঁরা একমাত্র জুটি নন। ক্রিকেটের ইতিহাসে বেশ কয়েকজন ভায়রা ভাই জুটিকে দেখা গেছে। এমনকি তাঁরা এক সাথে আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছেন।

  • মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ভায়রাভাই জুটি। দুজনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের বড় স্টার। দু’জনেই করেছেন বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব। ২০১৫ বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে বড় কিছু জুটিও করেছে দু’জন। দুজনের ব্যাটে ভর করে কম ম্যাচ জিতেনি বাংলাদেশ। লম্বা সময় তাঁরা জাতীয় দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক হিসেবেও ছিলেন দায়িত্বে।

আবার এদের ব্যর্থতার দিনে ট্রল করতেও ভুলিনি আমরা। এমনকি ‘ভায়রা ভাই কোটা’ শব্দটিও ব্যবহার করতে দ্বিধা বোধ করিনি কখনো। ২০১১ সালে রিয়াদ বিয়ে করেন জান্নাত কাওসার মিষ্টিকে। তারপর তিন বছর পর মিষ্টির বোন জান্নাতুল কেফায়েত মন্ডিকে বিয়ে করে মুশফিকুর রহিম।

  • নাথান অ্যাস্টল ও ক্রেইগ ম্যাকমিলান (নিউজিল্যান্ড)

দু’জনকেই নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি বলা যায়। একবার নাথান অ্যাস্টল ও ক্রেইগ ম্যাকমিলান মিলে ৭.৪ ওভারে ১৩৬ রানের জুটি গড়েন। সেখানে এক ওভারে নেন ২৭ রান। ম্যাকমিলান ক্যারিয়ারে যে ৫৫ টি টেস্ট খেলেন তার ৪৮ টিতে সঙ্গী ছিলেন অ্যাস্টল। এমনকি দু’জন দল থেকে বাদও পড়েন একই সাথে।

অবশ্য তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দু’জনের বিয়ে হয় একই পরিবারের দুই বোনের সাথে। অ্যাস্টলের স্ত্রী কেলি আর ম্যাকমিলানের স্ত্রী চেরি।

  • কামরান আকমল ও ‍উমর আকমল (পাকিস্তান)

কামরান আকমল ও উমর আকমল এক সাথে পাকিস্তান দলেও খেলেছেন। মাঠের বাইরেও তাঁরা আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধা। শ্বশুর হলেন সাবেক পাকিস্তানি ওপেনার মোহাম্মদ ইলিয়াস। তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৯ সালের মধ্যে পাকিস্তানের হয়ে ১০ টি টেস্ট খেলেছেন। একটি সেঞ্চুরি ও দু’টি হাফ সেঞ্চুরি করেন।

ইমরান ফারহাত ছিলেন স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। ১২ বছর জাতীয় দলে খেললেও বড় একটা সময় ছিলেন যাওয়া-আসার মধ্যে। সর্বশেষ খেলেছেন ২০১৩ সালে। তাঁর মতই অফ ফর্মের কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান কামরান আকমল। ২০১০ সালে সর্বশেষ খেলেন। আর তাঁর ফেরা হয়নি।

  • আকরাম খান ও ফারুক আহমেদ (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশের সাবেক দুই ক্রিকেটার ও বর্তমান নির্বাচক আকরাম খান ও ফারুক আহমেদও বিয়ে করেছেন একই পরিবারে। মজায় বিষয় হচ্ছে আকরাম খান জুনিয়র হলেও তিনি বিয়ে করেন ওই পরিবারের বড় মেয়ে সাবিনা আকরামকে। এরপর পরিবারের ছোট মেয়ে শাহরিয়া ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন ফারুক আহমেদ। আবার জাতীয় দলের হয়ে দু’জনই খেলেছেন দু’জনের অধিনায়কত্বে।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে এই দু’জন খেলেছেন এক সাথে। আকরাম খান খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করেন আট টেস্ট ও ৪৪ টি ওয়ানডে নিয়ে। অন্যদিকে ফারুক আহমেদের ক্যারিয়ার সাত ওয়ানডের। খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করে দু’জনেই কাজ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)। দু’জনই নির্বাচক হিসেবেও কাজ করেন। ফারুক আহমেদ আবার জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার শাহরিয়ার নাফিসের খালাতো ভাই।

  • সেলিম মালিক ও ইজাজ আহমেদ (পাকিস্তান)

দু’জনই বড় একটা সময়ে পাকিস্তানের মিডল অর্ডারে ভরসার প্রতীক হয়েছিলেন। এক সাথে দু’জন ১৭৪ টা ওয়ানডে ও ৩৯ টা টেস্ট খেলেছেন। ব্যাটিংয়ে ইজাজের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন সেলিম মালিক। তবে, ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে নিজের সুনাম খোয়ান মালিক।

অন্যদিকে সুনামের সাথে আজো কোচ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন ইজাজ আহমেদ। দু’জনই একই পরিবারের দুই মেয়েকে বিয়ে করেন।  সেই সূত্রে তাঁরা ভায়রা ভাই।

  • স্ট্যানলি জ্যাকসন ও জ্যাক উইলসন (ইংল্যান্ড)

হ্যারিসন-ব্রডলিদের দুই মেয়ে। বড় বোন বিয়ে করেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক স্ট্যানলি জ্যাকসনকে। সেটা ১৯০২ সালের কথা। তিনি ২০ টেস্ট খেলে ইংল্যান্ডের হয়ে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেন, একবার পাঁচ উইকেটও পান। এরপর লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে বিশ্বযুদ্ধে যান।

স্ট্যানলি জ্যাকসন

বিশ্বযুদ্ধ শেষে ছোটবোন বিয়ে করেন জ্যাক উইলসনকে। এই উইলসনও ক্রিকেটার। ইয়র্কশায়ারের হয়ে খেলেন ১১ টি ম্যাচ। তিনিও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ছিলেন রয়্যাল নাভাল এয়ার সার্ভিসে। যদিও, ক্রিকেটার হিসেবে নয় তিনি বেশি জনপ্রিয় ছিলেন ঘোড়ার জকি হিসেবে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link