জগত বড় বৈচিত্র্য। পাথড়ের মত হৃদয় গলিয়ে, অশ্রুজল গড়িয়ে মাটি ছোঁয়। যে মস্তিষ্ক জুড়ে ছিল, লড়াই লড়াই লড়াই। সে মস্তিষ্কে এখন আর সেই দৃঢ়তা নেই। পায়েও যে আগের মত সেই কারিকুরি নেই। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর তাই বিদায়ের ঘন্টা বেজে ওঠে। এবার যে তার যেতে হবে।
অনেক তো হল, আর কত! লিসবনের সেই রোনালদো পাড়ি দিয়েছে এক মহাসমুদ্র। জীবনের দীর্ঘ সময় আনন্দের ফেরিওয়ালা হয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। কয়েক কোটি মানুষ তার জীবন থেকে অনুপ্রেরণার উৎস খুঁজেছে। এখনও খোঁজে হয়ত। ভেঙে পড়া ক্রিশ্চিয়ানোর চিত্র তাদের সকলের কাছেই নতুন।
তবে তাতেও বরং জীবনের শিক্ষা কম নয়। সময় গড়ালে চেনা চিত্র অচেনা হয়। অচেনা হয়ে যায় ভীষণ পরিচিত। জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা প্রতিটা নক্ষত্রের একদিন পতন ঘটে। মহাকাশের অতল অন্ধকারের কোথাও একটা হারিয়ে যায়। রেখে যায় এক বুক পরিমাণ স্মৃতি।
তেমন স্মৃতিই রেখে যাচ্ছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। লিওনেল মেসির সাথে তার রেকর্ডের লড়াই চলেছে। মেসিকে ছাপিয়ে যেতে তিনি অবশ্য পারেননি। কিন্তু গোটা একটা প্রজন্মকে মাতিয়ে রেখেছিলেন। পর্তুগাল থেকে ইংল্যান্ড, সেখান থেকে স্পেনে কাটিয়েছেন স্বর্ণালী সময়। ইতালিতে খুঁজেছেন নতুন চ্যালেঞ্জ। গোধুলীর ঠিক আগে ফিরেছিলেন ঘরে।
ঘর একবার ছেড়ে গেলে তা আর আগের মত থাকে না। জীবনের এই কঠিন সত্যটাও রোনালদোর ক্যারিয়ারের উদাহরণ হিসেবে লেপ্টে আছে। ‘হার্ড ওয়ার্ক’ বদলে দিতে পারে সবকিছু, সে দীক্ষাও নিশ্চয়ই দিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। প্রতিভা ছিল তার, প্রভিভার থেকেও বেশি প্রবল ছিল ইচ্ছাশক্তি।
তুমি চাইলেই সম্ভব- এই দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন বটে। তবে তার ক্যারিয়ারও বুঝিয়ে দিয়ে গেল, ভাগ্য়েও থাকতে হয় অনেক কিছু। ক্যারিয়ারের সম্ভাব্য সবগুলো ট্রফিই তিনি জিতেছেন। আক্ষেপটা স্রেফ স্বর্ণালী সেই বিশ্বসেরার ট্রফি। সেটা হয়ত অপূর্ণতা হিসেবে থেকে যাচ্ছে।
যেটা ছিল না, সেটা না পাওয়া থাক গানের সাথে শেষ ট্রেনে হয়ত বাড়ি ফিরছেন রোনালদো। রক্তিম পর্তুগালের জার্সিতে আর হয়ত খুব বেশিদিন দেখা যাবে না তাকে। তিনি ক্যারিয়ারকে আরেকটু লম্বা করতে চাইলে তা বরং লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। সমালোচনা তখন কটু কথায় রুপান্তরিত হবে।
বয়সটা সত্যিকার অর্থেই হয়েছে। ক্লান্ত শরীরটা এখন নদীর ধারের বেঞ্চিতে বসতে চায়। বুক ভ সতেজ অক্সিজেন নিতে চাইছে ফুসফুস। রোনালদো এসব কিছু বোঝেন হয়ত। কিংবা অবচেতন মস্তিষ্ক তাকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়না। ফিসফিস করে বলে চলে লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই।