ডেড এন্ডের রোনালদো ভার্সন

সময়ের সেরাদের একজন কিংবা ইতিহাসের অন্যতম সেরা কোন ফুটবলার আপনার দলের খেলতে নামলে কি আশা করবেন? নিশ্চয়ই চাইবেন দলের সেরা পারফর্মার হয়ে উঠুক। বয়সটা ৩৭ হলেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্ব ম্লান হয়ে যায়নি। আর তাই ব্যতিক্রম হয়নি তার ক্ষেত্রেও।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে গত মৌসুমে খেলা পর্তুগিজ তারকা নি:সন্দেহে ক্লাবটির সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। ক্রিশ্চিয়ানোর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সত্ত্বেও দলের অন্যরা ছিলেন নিষ্প্রাণ, বিশেষ করে ডিফেন্ডাররা বারবার শিশুতোষ ভুল করে ডুবিয়েছেন দলকে।

একজনের উপর ভর করে একটা, দুইটা ম্যাচ জেতা যায়, কিন্তু শিরোপা তো জেতা যায় না৷ ঠিক তাই হয়েছে ম্যানইউনাইটেডের ভাগ্যেও। শিরোপা তো দূরে থাক; যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ঐতিহ্যে মিশে আছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, সেই ইউনাইটেড এবার পারেনি ইউরোপীয় আসরটিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে।

দলের এমন ভঙ্গুর অবস্থা দেখে একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাই দল ছাড়ার ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। আর এরপর থেকেই ট্রান্সফার উইন্ডোর মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছেন পর্তুগিজ স্ট্রাইকার। রোনালদোর এমন সিদ্ধান্তে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

কারো মতে রোনালদোর দল ছাড়তে চাওয়ার অধিকার আছে, কেউবা আবার ভাবছেন এমন দুঃসময়ে দল ছাড়াটা উচিত নয় তার। তবে ট্রান্সফার উইন্ডো শেষ হতে এক মাসেরও কম সময় বাকি। এমতাবস্থায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার সম্ভাবনা প্রতিনিয়ত ক্ষীণ হচ্ছে।

রোনালদো অনেক আগেই স্পষ্ট বলে দিয়েছেন তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতে চান আর তাই নতুন ক্লাবে যোগ দিতে ইচ্ছুক। কিন্তু এখন পর্যন্ত, রেড ডেভিলরা পর্তুগিজ তারকার জন্য করা প্রতিটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইতোমধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রি-সিজন ক্যাম্পেইন শেষ হয়েছে। কিন্তু দলের সেরা তারকা হওয়া সত্ত্বেও থাইল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় যাননি পর্তুগিজ অধিনায়ক। এরপর দল ইংল্যান্ডে ফিরলে রোনালদো যোগ দিয়েছিলেন তাদের সাথে।

এর আগে অবশ্য নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্লাব ম্যানেজম্যান্টের সাথে আলোচনা করেছেন রোনালদো এবং তাঁর এজেন্ট। সেই আলোচনায় স্যার অ্যালেক্স ফারগুসন নিজে এসেছেন। কিন্তু প্রিয় শিষ্যকে ক্লাবে থাকতে পুরোপুরি রাজি করাতে পারেননি। সংশয়পূর্ণ সভা শেষে কোন ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ।

তবে রোনালদো ক্লাব প্র্যাকটিসে যোগ দিয়েছেন, সর্বশেষ রায়ো ভালেকানোর সাথে প্রীতি ম্যাচ খেলেছেন। এখানেও অবশ্য বিতর্ক ছুঁয়ে গিয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। রায়ো ভালেকানোর বিপক্ষে ম্যাচে প্রথমার্ধ খেলার পর তাকে উঠিয়ে নেন এরিক টেন হাগ।

এর কিছুক্ষণ পরে ডিয়েগো দালত, রোনালদো সহ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে যান। আর এমন কাজ মোটেও পছন্দ হয়নি কোচের।

এই ডাচ ট্যাকটিশিয়ান জানান, ‘আমি অবশ্যই এটা সমর্থন করি না। এটা গ্রহনযোগ্য নয়। আমরা সবাই মিলেই একটা দল; প্রত্যেকের ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকা উচিত।’

গুঞ্জন আছে যে, মৌসুমের প্রথম ম্যাচে হয়তো রোনালদোকে শুরুর একাদশে রাখবেন না কোচ এরিক টেন হাগ। জোডান সানচো, মার্কাস রাশফোর্ড কিংবা অ্যান্থনি মার্শিয়ালকে দেখা যেতে পারে নাম্বার নাইন পজিশনে। আবার এই ডাচ ভদ্রলোকের জন্য আরেক দুশ্চিন্তা হয়ে এসেছে মার্শিয়ালের ইনজুরি। রোনালদো ছাড়া দলের একমাত্র পিউর স্ট্রাইকার তিনি। সবমিলিয়ে বেশ জটিল অবস্থা।

ফুটবল খেলাটা যেমন নাটকীয়, তেমনি নাটকীয় খেলোয়াড়দের দলবদল। ট্রান্সফার উইন্ডো-তে আরো প্রায় তিন সপ্তাহ বাকি; রোনালদোকে সেসময় ক্লাব ছেড়ে যাবেন? নাকি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতে না পারলেও ওল্ড ট্র্যাফোর্ড বিনির্মাণে অংশ নিবেন?

যেকোনো কিছু ঘটতে পারে এখন; এসব অজানা প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আগামী কয়েক সপ্তাহে সবার নজর থাকবে রোনালদোর দিকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link