বিশ্বকাপে কানাডাকে প্রথমবারের মতো দেখা গিয়েছিল ১৯৮৬ সালে। সে বারে খেলা তিন ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছিল তারা। এমনকি নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে একটিও গোলের দেখা পেয়েছিল না কানাডা। এরপর পেরিয়ে গেছে তিন দশকেরও বেশি সময়। ৩৬ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে, কাতার বিশ্বকাপে আবারো টিকিট পায় তারা। বাছাইপর্বে উত্তর আমেরিকার প্রথম দল হিসেবে এ বারের বিশ্বকাপে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে কানাডা।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিশ্বকাপে এসেই প্রথম ম্যাচে প্রায় চমক দেখিয়েই ফেলেছিল কানাডা। বেলজিয়ামের রক্ষণভাগে ভালই পরীক্ষা নিয়েছিল আলফান্সো ডেভিসের দল। সেই ধারায় একটি পেনাল্টিও পেয়ে যায় তারা। কিন্তু থিবো কর্তোয়ার কাছে হার মানে ডেভিসের সেই শট। কানাডার হয়ে বিশ্বকাপে প্রথম গোল করার সুবর্ণ সুযোগ মিস করেন আলফানসো ডেভিস। একই সাথে, আক্রমণ প্রতি আক্রমণে বেলজিয়ামকে কিছু ক্ষণের জন্য স্তব্ধ করে দিলেও দিন শেষে পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে কানাডা।
প্রথম ম্যাচের আক্ষেপ ঝেড়ে ক্রোয়েশিয়াদের বিপক্ষে দারুণ কিছু করে দেখানোর দিকে উজ্জীবিত ছিল কানাডা। যেই ভাবনা সেই কাজ। ম্যাচের ৬৭ সেকেন্ডেই গোল করে বসেন কানাডার আলফানসো ডেভিস। যা এই বিশ্বকাপের এখন পর্যন্ত করা দ্রুততম গোল। একই সাথে, কানাডার ফুটবল ইতিহাসের অনন্য এক কীর্তিতে ঢুকে যান ডেভিস। কারণ কানাডার বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম গোলটা যে তাঁর পা থেকেই এসেছে।
কিন্তু কানাডার মুহূর্ত বলতে অতটুকুই। শুরুর রঙিন মুহূর্ত মিইয়ে যায় পরের সময়ের ব্যর্থতায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোল হজম করে বসা ক্রোয়েশিয়া ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরতে শুরু করে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াতে কিছুটা বিলম্ব হলেও নিজেদের ফিরে পায় প্রথম অর্ধেই। ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে নিজেদের সমতায় আনে ৩৬ মিনিটে। পেরিসিচের বাড়ানো বল থেকে গোল করেন ক্রামারিচ।
কানাডার জালে প্রথম গোল করার পরই মোমেন্টাম ঘুরে যায় ক্রোয়েশিয়ার দিকে। পরের গোল আসে ৬ মিনিট বাদেই। এবার গোল করেন মার্কো লিভাজা। এক গোলে পিছিয়ে থাকলেও এ গোলের পরে ২-১ গোলে লিড নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে গত বিশ্বকাপের রানার্সআপরা।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর পর থেকেই ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে কানাডার খেলোয়াড়রা। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগ আর টপকে গোল করতে পারেনি কানাডা। উল্টো ম্যাচের ৭০ মিনিতে গোল হজম করে বসে তারা। এবারের গোলটিও করেন ক্রামারিচ। নিজের দ্বিতীয় গোলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় ৩-১ গোলে যায় ক্রোয়াটরা। আর একদম শেষ মুহূর্তে অতিরিক্ত সময়ে গোল করে ব্যবধানটা ৪-১ এ নিয়ে যান মেয়ার। এর কিছুক্ষণ বাদেই রেফারি খেলার শেষ বাঁশি বাজিয়ে দেন।
এই হারের পর এক ম্যাচ আগেই কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল কানাডা। আর ক্রোয়েশিয়া উঠে গেল পয়েন্ট টেবিলের এক নম্বরে। ক্রোয়েশিয়ার পরের ম্যাচ বেলজিয়ামের বিপক্ষে। আর নিয়মরক্ষার শেষ ম্যাচে কানাডা মুখোমুখি হবে মরক্কোর বিপক্ষে। কানাডার জন্য নিয়ম রক্ষার ম্যাচ হলেও, এ দুটি ম্যাচেই নির্ধারিত হবে এই গ্রুপ থেকে কোন দুটি দল যাবে শেষ ষোলতে।