সুযোগের সদ্ব্যবহারের চূড়ান্ত নমুনা

‘সুযোগ পেলেই দেখিয়ে দেব’ সম্ভবত এমনই কোন এক মন্ত্রে উজ্জীবিত আয়ারল্যান্ডের অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফার। বছর পাঁচেক হল আয়ারল্যান্ড পেয়েছে টেস্ট স্ট্যাটাস। সোজা শব্দে তাঁরা এখন আইসিসির পূর্ণ সদস্য। তা হলে কি হবে, এখনও বড় ম্যাচ খেলার সুযোগ মেলে অতি নগন্য। আর সে সুযোগগুলোকে রাঙিয়ে তোলেন ক্যাম্ফারদের মত সম্ভাবনাময় ক্রিকেটাররা।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। সে আসরে বরাবরের মতই আয়ারল্যান্ডকে খেলতে হচ্ছে বাছাই পর্ব। খানিকটা বিপাকেই রয়েছে দলটি বলা চলে। প্রথম ম্যাচে বেশ একটা বাজে হারের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে তাই স্কটল্যান্ডের সাথে জেতা চাই। তবে জিততে চাই, বললেই তো আর ম্যাচ জেতা যায় না। সবাই তো আর ম্যাচ জেতাতেও পারেন না।

তবে কার্টিস ক্যাম্ফাররা পারেন। তাঁরা যেকোন পরিস্থিতিতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবার সুযোগটা পান কম। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে বড় দলগুলোর বিপক্ষে নিয়মিত খেলার সুযোগ পায় না আয়ারল্যান্ড। তাইতো অভিজ্ঞতায় থেকে যায় ভীষণরকম ঘাটতি। তবে সে ঘাটতিও আমলে নেওয়ার সুযোগ কই। নিজেদের দিনে ক্যাম্ফাররা আগুন ধরিয়ে দিতে পারেন সর্বত্র।

২০২১ সালেই আয়ারল্যান্ড দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক কার্টিস ক্যাম্ফারের। এর পরপর রীতিমত বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়ে যান। ওই যে ক্যাম্ফাররা ওঁত পেতে থাকেন। তাঁরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন তীর্থের কাকের মত। অপলক শিকারি হয়ে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করেন। আর অপেক্ষার ফল কখনোই নিরাশ করে না। সেই সাথে পরিশ্রমও নিশ্চয়ই কখনও বৃথা যায় না।

নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই রীতিমত চমকে দিয়েছিলেন ক্যাম্ফার। করেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসের দ্বিতীয় হ্যাট্রিক। সারা দুনিয়াতে একটা সোরগোল পড়ে গেল। এর আগে কেবল ব্রেট লি’র মত তুখোড় বোলার টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিশ্বকাপে হ্যাট্রিক করেছিলেন। সেটাও আবার বিশ্বকাপের প্রথম আসরে। এরপর ছয়টি আসর কেটে যায়, আর কোন বোলার দেখা পায়না হ্যাট্রিকের।

সেই খরা কাটিয়েছিলেন ক্যাম্ফার। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে সেই হ্যাট্রিক ছাড়াও নিয়েছিলেন আরও একটি উইকেট। সেবার অবশ্য পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারেনি আইরিশরা। তাই খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি কার্টিস ক্যাম্ফার। তিন ম্যাচ খেলে নিজের ঝুলিতে বাগিয়েছিলেন ছয়টি উইকেট। দল পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারলে নিশ্চয়ই তিনি আরও কিছু উইকেট পুরতে পারতেন নিজের পকেটে।

তাছাড়া ব্যাট হাতেও মোটামুটি গোছের রান করেছেন। ৭৮ খানা রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। গেল আসর যেখানটায় শেষ করেছিলেন ক্যাম্ফার, ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন এবারের আসর। এবার অবশ্য নজর কাড়ছেন ব্যাট হাতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরাজয়ের ম্যাচে তিনি করেছিলেন ২৭ রান। আর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে তিনি খেলে ফেললেন অনবদ্য, অপরাজিত ৭২ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস। ইতোমধ্যেই ব্যাটার ক্যাম্ফার ছাড়িয়ে গিয়েছেন নিজেকে।

৭২ রানের সে ইনিংস এক ওভার বাকি থাকতেই আয়ারল্যান্ডকে পৌঁছে দেয় জয়ের বন্দরে। এর আগে অবশ্য দুইটি উইকেটও শিকার করেছিলেন কার্টিস ক্যাম্ফার। এই জয়ে পরবর্তী রাউন্ডের আশা বাঁচিয়ে রাখল। ২২৫ স্ট্রাইক রেটের এই ইনিংসটিই প্রমাণ করে একজন ব্যাটার হিসেবেও সমান সিদ্ধহস্ত কার্টিস ক্যাম্ফার।

তাছাড়া এই যে সুযোগ পেলেই নিজের ছাপ ফেলে রেখে যাওয়ার তাড়নাটাই যেন ক্যাম্ফারদের আলাদা করে। তাঁরা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে ছাপিয়ে যেতে চান। বিশ্ব দরবারে নিজেদের ছাপ ফেলে রেখে যেতে চান। সবাইকে বলে যেতে চান, ‘নজর দিন, সুযোগ দিন’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link