চেক কাব্যে ডাচ পতন

গ্রুপপর্বে তিন ম্যাচে সর্বোচ্চ আট গোল করে দ্বিতীয় রাউন্ডে এসেছিল নেদারল্যান্ডস। মেম্ফিস ডিপাই, উইজনাল্ডাম, ডামফ্রাইসরা রীতিমতো উড়ছিলেন। অন্যদিকে চেক প্রজাতন্ত্র এসেছিল তৃতীয় স্থানে থাকা সেরা চার দলের একটি হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের আগে পরিস্কারভাবে এগিয়ে ছিল ডাচরা।

কিন্তু, মাঠে নামার পর এসব খাতাকলমের হিসেব তো কাজে লাগে নাহ, যারা মাঠে ভালো খেলবে জিতবে তারাই। ম্যাথিয়াস ডি লিটের লালকার্ডের ধাক্কাটা সামলে না উঠতে পারার সুযোগ নিয়ে প্যাট্রিক শিক আর টমাস হোলসের গোলে বহু প্রতীক্ষার পর ইউরোর শেষ আটে উঠলো চেক প্রজাতন্ত্র।

১৯৯৬ ইউরোতে ফুটবল বিশ্বে নিজেদের উত্থানের জানান দেয় চেকরা। তরুণ পাভেল নেদভেদ, কারেল পোবোরস্কি, ভ্লাদিমির স্মিসার, প্যাট্রিক বার্গারদের মতো ফুটবলারদের নৈপুণ্যে সেবার ইউরোর ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে যায় চেকরা। যদিও অলিভিয়ের বিয়েহর্ফের গোল্ডেন গোলে জার্মানির কাছে হার মানতে হয় তাঁদের।

এরপরও ভালো খেলার ধারাবাহিকা ধরে রাখে ২০০৪ ইউরোতেও। সেবার দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলাতেও ডাচদের হারিয়েছিল চেকরা। শুরুতে পিছিয়ে পড়লেও মিলান বারোস এবং নেদভেদের গোলে দারুণ জয় পায় তারা। সেবারের ইউরোতে তৃতীয় হয় তাঁরা।

সেবারই শেষ, এরপর ক্রমশই চোরাবালিতে ডুবে গেছে চেক ফুটবল। মাঝে রসিস্কি-বারোস-চেকরা চেষ্টা করেছেন, কিন্তু দলগত খেলায় তো সবাইকেই অবদান রাখতে হয়। ২০১৬ ইউরোতেও গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়ে চেকরা। এরপরই নড়েচড়ে বসে চেক ফুটবল ফেডারেশন, কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় জারোস্লাভ সিলহাভিকে। তিনি এসেই দলে তরুণ প্রতিভাদের সু্যোগ দেন, তাদেরকে লড়াইয়ের মন্ত্রণা দেন। তাতেই উদ্ভব হয় চেকদের নতুন সোনালি প্রজন্মের।

চেক প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে বড় তারকা প্যাট্রিক শিক। অথচ এবারের ইউরোর আগে পাঁড় ফুটবল সমর্থক না হলে তার নাম জানার কথা নয় কারোই। স্পার্তা প্রাগে ক্যারিয়ার শুরু করা এই ফুটবলার গত মৌসুমেই রোমা ছেড়ে যোগ দিয়েছেন জার্মান ক্লাব বায়ার লেভাকুসেনে। প্রথম মৌসুমটা মন্দ কাটাননি, ২৯ ম্যাচে করেছেন ৯ গোল। কিন্তু ইউরোতে এসে নিজের প্রতিভার জানান দিচ্ছেন গোলের বন্যা বইয়ে।

প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাঝমাঠ থেকে করেছেন অনবদ্য এক গোল, গোল পেয়েছিলেন পরের ম্যাচেও। গ্রুপপর্বের ফর্মটা ধরে রেখেছেন নকআউটেও, ডাচদের বিদায় নিশ্চিত করা দ্বিতীয় গোলটা তারই। চার গোল করে এখনো পর্যন্ত ইউরোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। তবে এ ম্যাচে তাকেও ছাড়িয়ে গেছেন টমাস হোলস।

স্পার্তা প্রাগের এই মিডফিল্ডার টমাস সৌসেককে সাথে ডিফেন্স জমাট রাখার পাশাপাশি ছিন্নভিন্ম করেছেন ডাচ রক্ষণভাগ। নিজে এক গোল করার পাশাপাশি শিকের গোলের অ্যাসিস্টও তার। ফলশ্রুতিতে ম্যাচের ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতেছেন তিনি।

ম্যাচের বাজিটা ছিল ডাচদের পক্ষেই, পাশাপাশি স্টেডিয়াম পরিপুর্ণ ছিল কমলা রঙে। ডাচরা জয়ের লক্ষ্যে শুরু থেকেই আক্রমণ শানালেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে তা স্তিমিত হয়ে গেছে। প্রথমার্ধে চেক গোলপোস্টে একটি শটও নিতে পারেননি ডিপাইরা।

দ্বিতীয়ার্ধে মালেন সহজ সুযোগ মিস করলে বুঝা যায় দিনটি আজকে কেবলই চেকদের। ডি লিটের লালকার্ড সেটা ত্বরান্বিত করেছে কেবল, একজন বেশি খেলার সুবিধা নিয়ে হোলস এগিয়ে দেন চেকদের। পরে শিকের গোলে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় ২০০৪ এর মতো এবারো ডাচদের বিপক্ষে অপরাজিত থেকে যাবে চেকরা।

কোয়ার্টার ফাইনালে শিকদের প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক। নেদভেদ-রসিস্কিদের সোনালি প্রজন্মকে ছাপিয়ে যেতে পারবে কিনা শিক- হোলসদের নতুন প্রজন্ম সেটা সময়ই বলে দেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link