স্টিভেন্স নামের পুরোনো চাল

ড্যারেন স্টিভেন্স চাইলে বলতেই পারেন, বয়স মাত্রই একটা সংখ্যা। কিংবা চাইলে দু লাইন কবিতাও আওড়াতে পারেন, ‘বয়সেরও পদধূলি আমায় কাবু করতে পারেনি, যতটা পেরেছে ক্রিকেট বলের মোহ’।

ড্যারেন স্টিভেন্স বাংলা পারেন না। তাই আপাতত কাব্য ব্যাপারটাকে মূলতবি করে রাখলাম। আগে জেনে নেই, তিনি করেছেনটা কি!

৪২ বছর ৭ দিন বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন!

ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের দীর্ঘ ইতিহাসে এত বেশি বয়সে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড নেই আর কারও। তাঁর কাছাকাছি বয়সে যিনি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন, সেই ওয়াল্টার কিটন নিজের কীর্তিটা গড়েছিলেন ১৯৪৯ সালে! অদ্যাবধি রেকর্ডটা কিটনেরই ছিল, যতক্ষণ না স্টিভেন্স কেন্টের হয়ে ইয়োর্কশায়ারের বিপক্ষে রেকর্ডটা ভেঙে দিলেন!

৭১ বছরের রেকর্ড! এই বয়সে ভেঙেছেন! ভাবা যায়!

স্টিভেন্সের রেকর্ড গড়ার ম্যাচে দল কেন্টের অবস্থা বিশেষ সুবিধার ছিল না। স্টিভেন্স যখন প্যাড পরে ব্যাট নিয়ে পিচে নামছেন, স্কোরবোর্ডে কেন্টের নামের পাশে তখন ৩৯/৫! হেডিংলিতে সেদিন ইয়োর্কশায়ারের বোলাররা রীতিমত তান্ডব চালাচ্ছিলেন।

তবে সেখান থেকে অধিনায়ক স্যাম বিলিংসকে নিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন ড্যারেন স্টিভেন্স, যোগ করেন ৩৪৬ রান!

স্টিভেন্সের নিজের রান ছিল সে ইনিংসে ২৩৭ রান। রানের চাইতে কথা হবে স্টিভেন্সের খেলার ধরণ নিয়ে। ২৩৭ রানের ইনিংস খেলতে তিনি বল খরচ করেছিলেন মাত্র ২২৪ টি; ছিল ২৮টি চার ও ৯টি ছয়!

মজার ব্যাপার হল, ইনিংসটাতে তিনি ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন নিজের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত ইনিংসটাকে, ১৪ বছর আগে যেটি তিনি খেলেছিলেন গ্লামারগানের বিপক্ষে, ২০৮ রান!

এই ম্যাচে রেকর্ড হয়েছিল আরও। স্টিভেন্স আর বিলিংসের জুটিটা ছিল কেন্টের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ষষ্ঠ উইকেট জুটি! এর আগের সর্বোচ্চ রানের জুটিটাও জানিয়ে রাখি। সেটি ছিল অরবিন্দ ডি সিলভা আর মার্ক এলহামের ৩১৫ রানের জুটি, প্রতিপক্ষ ছিল নটিংহ্যামশায়ার।

বিলিংস আর স্টিভেন্সের ৩৪৬ রানের জুটিটা অবশ্য যেকোন উইকেটে হেডিংলিতে সর্বোচ্চ রানের জুটিই।

স্টিভেন্সের গল্পে ফিরে আসি। বয়স হয়েছিল ৪২। তাঁর এই বয়সেই কত কত ক্রিকেটাররা কোচ বনে যান, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বনে যান। কিন্তু তিনি খেলছেন, শুধু খেলছেনই না রীতিমত তান্ডব তালাচ্ছেন। ২২৪ বলে ২৩৭ রান এই বয়সে কি কম কথা!

স্টিভেন্স অবশ্য এই রেকর্ডে ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছেন। ১৪৯ আর ১৫৬ রানের সময় দুবার তাঁর ক্যাচ ফেলে দেন ইয়োর্কশায়ারের ফিল্ডাররা। তবে সেই ভাগ্যের ছোঁয়াকে পুরোপুরিভাবে কাজে লাগিয়েছেন স্টিভেন্স।

ড্যারেন স্টিভেন্সের গল্পটা অবশ্য জীবনের গল্পের মতই। রেকর্ড গড়ার ম্যাচের আগে স্টিভেন্স শেষ সেঞ্চুরিটা পেয়েছিলেন ২০১৭ সালে। কেন্ট তো মাঝে তাকে দলে রিটেইনও করতে চায়নি। কিন্তু হঠাৎ পরিশ্রমী স্টিভেন্সের খেলা কেন্টকে ইউটার্ন নিতে বাধ্য করে। কেন্ট তো চুক্তি নবায়নও করে এরপর!

ড্যারেন স্টিভেন্স কিন্তু আমাদের অচেনা মানুষ নন। বাংলাদেশে খেলে গেছেন তিনি বিপিএলে।

এখনও লড়াইটা ছাড়েননি স্টিভেন্স। এই মৌসুমে রেকর্ড ভাঙা এই ডাবল সেঞ্চুরি করার পরও চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন্টের হয়ে শেষ ম্যাচেও ইনিংসে ৫ উইকেটসহ ম্যাচে ৯ উইকেট আছে তার। এখন দেখার বিষয়, কতোদিনে বয়স স্টিভেন্সের ওপর ছাপ ফেলতে পারে!

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link