পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনি টেস্ট দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছেন ডেভিড ওয়ার্নার। সাদা পোশাকে অজি ক্রিকেট ইতিহাসে ওয়ার্নার অধ্যায় এখন অতীত হওয়ার পথে। তবে এ ওপেনার বিদায় নিচ্ছেন অনেক কীর্তি, পুরোনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ার সুখস্মৃতি নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট তো বটেই, টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনার হয়ে থাকবেন ডেভিড ওয়ার্নার।
এখন পর্যন্ত ৪৪.৫৮ গড়ে ৮৬৯৫ রান করেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। যা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার হিসেবে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এর আগে ৮৬২৫ রান নিয়ে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন ম্যাথু হেইডেন। অবশ্য অজি ওপেনার হিসেবে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডটা এখন পর্যন্ত তাঁরই থাকছে। টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩০ টা শতক হাঁকিয়েছেন এ ব্যাটার। আর ওপেনার হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ টা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার।
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ওপেনার হিসেবে চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা ওয়ার্নারের। অ্যালিস্টার কুক, সুনীল গাভাস্কার ও গ্রায়েম স্মিথের পর টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনার হিসেবে তাঁর রানই চতুর্থ সর্বোচ্চ। তবে এই তিনজনকে ওয়ার্নার ছাপিয়ে গেছেন স্ট্রাইকরেটে। টেস্ট ক্যারিয়ারে ৭০.৩১ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন এই ওপেনার। ন্যূনতম ৮০০০ রান করা ওপেনারদের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ওপেনার হিসেবে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের রেকর্ডটা বীরেন্দ্র শেবাগের, ৮২.২৩।
২০১১ সালের ডিসেম্বরে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ওয়ার্নারের। ১২ বছরের এই ক্যারিয়ারে ওপেনার হিসেবে কতটা আধিপত্য বিস্তার ওয়ার্নার করেছেন, তার প্রমাণ মিলবে আরেকটি পরিসংখ্যানে। অভিষেকের পর ওপেনার হিসেবে ২৬ টি সেঞ্চুরি করেছেন ওয়ার্নার।
এই সময়কালে যে সংখ্যাটা নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশের ওপেনারদের সেঞ্চুরির চেয়েও বেশি। ওয়ার্নারের অভিষেকের পর নিউজিল্যান্ডের সব ওপেনার মিলে সেঞ্চুরি করেছেন ২২ টা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনাররা মিলে করেছেন ১৮ টা আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ১২।
টেস্ট ক্যারিয়ারে ঘরের মাটিতেই বেশি সফল ছিলেন ওয়ার্নার। ৫৮.৬৩ গড়ে করেছেন ৫৩৩৬ রান। ঘরের মাটিতে ন্যূনতম ৩০০০ রান করা ওপেনারদের মধ্যে ওয়ার্নারের গড়টাই সর্বোচ্চ। এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ২১ জন ওপেনার হোম কন্ডিশনে ৩০০০ রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন। ওয়ার্নার সেই ২১ ওপেনারের মধ্যে ব্যাটিং গড়ের দিক দিয়ে রয়েছেন সবার শীর্ষে। ওয়ার্নারের পর এই তালিকায় পরের নামটা লেন হাটন। ইংলিশ এই ওপেনার ঘরের ৩৮৮৫ রান করেছেন ৫৭.৯৮ গড়ে।
ঐতিহাসিক অ্যাশেজে ওয়ার্নারের রয়েছে ২০০০-এর অধিক রান। তবে অ্যাশেজ সিরিজে অজি এই ওপেনারের অভিজ্ঞতা মিশ্র। ঘরের মাটিতে ৩ সেঞ্চুরি ও ৭ হাফসেঞ্চুরিতে ৫১.৫০ গড়ে ১২৩৭ রান করেছেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের মাটিতে ৯৩৬ রান করেছেন মাত্র ২৬.৭ গড়ে। ৯ টা ফিফটি থাকলেও নেই কোনো সেঞ্চুরি।
তবে ওপেনার হিসেবে ক্যারিয়ার জুড়ে দারুণ ধারাবাহিকই ছিল এ ওপেনার। ক্যারিয়ারের প্রথম ৫০ ইনিংসেই পেরিয়েছেন ৩০০০ রানের মাইলফলক। সেই সাথে শতক হাঁকিয়েছিলেন ১৩ টা। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ৫০ ইনিংসে এর চেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড আর কারো নেই।
৫০ ইনিংসে ৩০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন, এমন ব্যাটার ইতিহাসে আর ৪ জন রয়েহছেন। বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন, মার্নাস ল্যাবুশানের এই কীর্তি রয়েছে। তবে ওয়ার্নার ছাড়া ইতিহাসে কোনো ওপেনারের এই কীর্তি নেই।
টেস্ট ক্যারিয়ারটা যেভাবে শুরু করেছিলেন, শেষটা হয়তো সেভাব হচ্ছে না। ফর্মের কারণেই শেষমেশ অবসর নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে তর্কযোগ্যভাবে গত এক যুগের সেরা টেস্ট ওপেনারের স্বীকৃতিটা ওয়ার্নারকে দেওয়াই যায়। কালজয়ী এই ওপেনার তাই লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় বললেও রেকর্ডের বইয়ে রঙিন হয়ে থাকবে তাঁর কীর্তিগুলো।