বর্ণবাদের কারণে বারবার বিতর্কিত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট। ১৯৭০ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত প্রায় ২২ বছর ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত ছিল তারা। ব্যাসিল ডি অলিভেইরা, ব্যারি রিচার্ডস, গ্রায়েম পোলক, মাইক প্রক্টরদের মতো ক্রিকেটাররা তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলো ছড়াতে পারেননি। এখনো পুরোপুরিভাবে বর্ণবাদের থাবা থেকে বেরোতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
জাতীয় দলে বাধ্যতামূলকভাবে এখনো খেলাতে হয় কৃষ্ণাঙ্গদের, যার ফলে অনেক প্রতিভাবান শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটার জায়গা পাচ্ছেন নাহ। এজন্য একপ্রকার বাধ্য হয়েই গত কয়েকবছরে অনেক ক্রিকেটার অসময়ে দিয়েছেন অবসরের ঘোষণা কিংবা প্রতিনিধিত্ব করছেন অন্য দেশের জার্সিতে।
কেভিন পিটারসেন, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস কিংবা হালের ডেভন কনওয়ে, জ্যাসন রয়, বিজে ওয়াটলিং, মারনাস ল্যাবুশেইনের পথ অনুসরণ করে এবার নামিবিয়ার হয়ে খেলার ঘোষণা দিলেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার ডেভিড উইসে।
দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলীয় শহর এম্পুমালাংগাতে জন্ম এবং বেড়ে উঠা ডেভিড উইসের। মাত্র নয় বছর বয়সে প্রখ্যাত কোচ হ্যারি শ্যাপিরোর অধীনে ক্রিকেট অনুশীলন শুরু করেন ভিসে। শুরুতে স্পিন বোলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলেও তার উচ্চতার কারণে কোচ পেস বোলিং এ মনোনিবেশ করান পরামর্শ দেন। ২০০৫-০৬ মৌসুমে ব্যাটিং-বোলিং দুজায়গাতেই পারফর্ম করেন তিনি।
ইস্টার্নের হয়ে ৫২৬ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নেন ২৬ উইকেট। কিন্তু তার বাবা মায়ের অমত থাকায় ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যান তিনি। ইউনিভার্সিটি অব প্রিটোরিয়া থেকে উচ্চতর ডিগ্রিও নেন তিনি।
কিন্তু ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডান, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে নজরে পড়ে যান ফ্যাঞ্চাইজি দল টাইটান্সের। তাদের হয়ে নিজের প্রথম টুর্নামেন্টেই আলো ছড়ান তিনি, তবে ব্যাট হাতে।
সেমিফাইনালে সিডনি সিক্সার্সের বিপক্ষে ২৮ বলে খেলেন বিধ্বংসী ৬১ রানের ইনিংস। তার মাঝে ল্যান্স ক্লুজনারের ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন সবাই। জাতীয় দলে সুযোগ পেতেও অপেক্ষা করতে হয়নি, জ্যাক ক্যালিসের ইনজুরির সুবাদে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরের দলে ডাক পেয়ে যান।
কিন্তু, খুব বেশিদিন দলে থাকতে পারেননি। ক্যালিসের ইনজুরি থেকে ফিরে আসা এবং জাতীয় দলে কোঠা পদ্ধতির কারণে বাদ পড়ে যান।
ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ খেললেও কোনোভাবেই জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। অথচ তার চেয়ে কম পারফর্ম করা ক্রিকেটাররা অবলীলায় দলে ডাক পাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে নিজের ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখতে কলপ্যাক চুক্তির সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
২০১৭ সালে সাসেক্সের সাথে চার মৌসুমের জন্য কলপ্যাক চুক্তি করেন তিনি। ফলে জাতীয় দলের দরজা তার জন্য বন্ধ হয়ে যায় অনির্দিষ্টকালের মতো। নিয়মিত পারফর্ম করে গেছেন সাসেক্সের হয়।
এছাড়া বিশ্বজুড়ে টি টোয়েন্ট ফ্যাঞ্চাইজি দলগুলোর নিয়মিত আকর্ষণ তিনি। খেলেছেন খুলনা টাইটান্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু, করাচি কিংস, গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্সের মতো দলগুলোর হয়ে।
২০২০ সালে সাসেক্সের সাথে চুক্তি শেষ হয়ে যাবার পর সম্ভাবনা জেগেছিল পুনরায় দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে দেখার। কিন্তু আরো একবার উপেক্ষার শিকার হন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ২০ টি-টোয়েন্টিতে তার শিকার ২৪ উইকেট। এছাড়াও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে করেছেন ছয় হাজারের কাছাকাছি রান এবং বল হাতে নিয়েছেন ৩৪৪ উইকেট।
গতকাল নামিবিয়া ক্রিকেট দলের কোচ পিয়েরে ডি ব্রুইনের এক টুইটে জানা যায় আবারো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছেন ভিসে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে নয় বরং আফ্রিকারই আরেক রাষ্ট্র নামিবিয়ার হয়ে। এবারের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে নামিবিয়া।
বিশ্বকাপ দিয়েই নামিবিয়ার হয়ে অভিষেক হওয়ার কথা ভিসের। এখন দেখা যাক দক্ষিণ আফ্রিকার দু:সহ অধ্যায় পেছনে ফেলে নতুন শুরু করতে পারেন কিনা সোনালি সময় পেছনে ফেলে আসা ডেভিড উইসে।