ভারতীয় জাতীয় দলের টেস্ট ফরম্যাটের জন্যে একাদশ কিংবা পুরো দলে একটা স্থিতিশীলতা এসেছে। শুধু যে দলে স্থিতিশীলতাই এসেছে তা নয়, ভারত টেস্টে দলগত পারফর্মও করছে ঘরে এবং ঘরের বাইরে। ২০২১ সালে সাদা পোশাকে তো ভারত রীতিমত ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছে ভিনদেশ। ভারতের টেস্ট দল মোটামুটি পাকাপোক্ত একটি অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে। তবে যত সমস্যা তা তো রঙিন পোশাককে ঘিরে। ভারত বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি এতে সন্দেহ নেই খুব একটা।
তবে সেই রঙিন পোশাকের বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে সাফল্যের দেখা খুব একটা নিয়মিত নয়। এর ফলে ম্যানেজমেন্ট প্রায়শই দলে আনছে পরিবর্তন। খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে দলের কম্বিনেশন। সেই প্রচেষ্টায় দলে আসা খেলোয়াড়দের স্থায়িত্ব কম থাকে। সম্ভাবনা থাকার পরও কোন কোন খেলোয়াড় একটি কিংবা দু’টি ম্যাচের খারাপ পারফর্মেন্সের জন্যে দলে ঠিকঠাক সুযোগ পাচ্ছেন না। এমতবস্থায় দল স্থায়ীত্ব আসতে হচ্ছে কালবিলম্ব। আজ তাই এমন খেলোয়াড়দের নিয়ে আলোচনা থাকছে যারা কিনা ধারাবাহিক সুযোগ পাচ্ছেন না ভারতের সাদা বলের জাতীয় দলে।
- সাঞ্জু স্যামসন
সাঞ্জু স্যামসন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের কল্যাণে উঠে আসা সম্ভাবনাময়ী এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের একজন। তবে তিনি খুব একটা বেশি সুবিধা করতে পারেননি ভারত জাতীয় দলে এসে। তাই তিনি পাচ্ছেন না নিয়মিত সুযোগ। কিন্তু স্যামসন যখন দলে এসেছেন তখন প্রায় অধিকাংশ সময়ই দল ছিল চাপে।
এমন সব পরিস্থিতিতে নবাগত একজন এসেই মনকাড়া পারফর্ম করে ফেলবেন তা ভেবে নেওয়াও ভুল। সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁকে নিয়মিত সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন ভারত ক্রিকেট দলের ম্যানেজমেন্টের। স্যামসন তাঁর পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতার প্রমাণ রেখেছেন প্রায় প্রতিটি আইপিএল মৌসুমে। তাছাড়া তিনি স্পিন বোলিং খেলতে বেশ ভালই পারদর্শী, যা কিনা ভারত জাতীয় দলে খুব বেশি প্রয়োজন বর্তমানে।
- মায়াঙ্ক আগারওয়াল
মায়াঙ্ক আগারওয়াল, তরুণ সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াড়দের একজন। তিনি অবশ্য টেস্ট দলের মোটামুটি নিয়মিত মুখ। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁকে খুব একটা সুযোগ দেওয়া হয়নি কিংবা তিনি পাননি। যদিও সাদা বলে দ্রুত রান তোলার সামর্থ্য়ের প্রমান তিনি রেখে চলেছেন শেষ তিনটি আইপিএল মৌসুমে ধারাবাহিক ৩০০ রানের অধিক রান সংগ্রহ করে।
এ সময়ে তিনি প্রায় ১৪০ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন। যদিও ওপেনিং পজিশনে অনেক বেশি প্রতিযোগিতা সেহেতু তাঁকে মিডেল অর্ডারেও বাজিয়ে দেখবার সুযোগ রয়েছে। কেননা সাঞ্জু স্যামসনের মতো মায়াঙ্কও স্পিন বলটা ভাল খেলতে জানেন। শুধু তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন দীর্ঘ মেয়াদি না হোক বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলার সুযোগ ভারতের নীল জার্সিতে।
- পৃথ্বী শ
২০২০ সালের বিজয় হাজরা ট্রফিতে মাত্র আট ম্যাচে ৮২৭ রান তোলা ২২ বছর বয়সী একজন ব্যাটার কিনা ভারতের হয়ে কেবল মাত্র ১২টি ম্যাচ খেলেছে। যেখানে রঙিন পোশাকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তিনি খেলেছেন কেবল মাত্র একটি ম্যাচ। হতভাগা খেলোয়াড়টি পৃথ্বী শ।
তাঁর মতো মারকুটে ব্যাটারকে ম্যানেজমেন্ট তাঁদের পরিকল্পনার বাইরে রেখেছেন। তাঁকে সম্পূর্ণ সুযোগটিও দেওয়া হচ্ছে না। পৃথ্বী নিজেকে প্রমাণের সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন হয়ত। তাঁর অপেক্ষা হয়ত আর সুদীর্ঘ হতে দিতে চাইবে না ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। ধারাবাহিক সুযোগ পেলে পৃথ্বির মতো খেলোয়াড় নিজেকে প্রমাণে খুব বেশি সময় ব্যয় করবে না নিশ্চয়ই।
- থাঙ্গারাসু নটরাজন
ভারত জহির খানের পর আর বলার মতো কিংবা ছাপ ছেড়ে যাওয়ার মতো বা-হাতি পেস বোলারের সন্ধান পায়নি। তবে সেই আক্ষেপ ঘোচাতে স্বপ্নদূত হয়ে হাজির হয়েছেন থাঙ্গারাসু নটরাজন। তিনি তাঁর সামর্থ্যে হালক ঝলকও দেখিয়েছেন ভারতীয় জাতীয় দলের রঙিন জার্সিতে।
কিন্তু, তারপর ইনজুরি হানা দেয় এবং তিনি ছিটকে যান ক্রিকেট থেকে। এখন ম্যানেজমেন্টের উচিৎ তাঁকে ইনজুরি থেকে সেড়ে উঠতে সহয়তা করার পাশাপাশি তাঁকে সর্বোচ্চ সুযোগটুকু দেওয়া। যাতে করে থাঙ্গারাসু নাটরাজন নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে পারেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাদা বলের ক্রিকেটে।
- মোহাম্মদ সিরাজ
মোহাম্মদ সিরাজ সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াড়দের অন্যতম। অথচ তিনি তেমন বেশি সুযোগ পাননি ভারত জাতীয় দলের সাদা বলের ক্রিকেট দলে। তিনি কেবলমাত্র চারটি টি-টোয়েন্টি ও একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে ভারতীয় পেস আক্রমণের অন্যতম অভিজ্ঞ সেনানী ভুবনেশ্বর কুমারের অফফর্ম বিবেচনায় মোহাম্মদ সিরাজ অন্তত একটু বেশি সুযোগ পেতেই পারেন।
কেননা ইনিংসের শুরু এবং শেষ এই দুই সময়ে বল হাতে বেশ কার্যকরী হতে পারেন মোহাম্মদ সিরাজ। তাই টিম ম্যানেজমেন্টের উচিৎ তাঁকে যথাযথ সুযোগ দিয়ে সাদা বলেও তাঁর সক্ষমতা প্রমাণের সুযোগ করে দেওয়া।