একটা সময় হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্রদের তালিকায় তাঁর নামটি উঠিয়ে দিতে চেয়েছিল অনেকে। কারণ একটা ইনজুরি এবং পরবর্তী বাজে পারফরমেন্স। ঠিক কতটা বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে স্রেফ একটা ইনজুরির কাছে তো হেরে যেতে পারেন না হার্দিক পান্ডিয়া। তিনি জানেন সব নিন্দার জবাব, সকল বঞ্চনা জবাবটা মাঠেই দিতে হয়। আর সে জবাবটা হার্দিক ভাল করেই দিতে জানেন।
আধুনিক ক্রিকেটে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার দলের জন্য আশীর্বাদ। তেমনই এক আশীর্বাদ হয়ে হার্দিক পান্ডিয়া এসেছিলেন ভারত জাতীয় দলে। নিজের কার্যকরী মিডিয়াম পেস, সেই সাথে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের বদৌলতে তিনি ভারতের আস্থাভাজন এক সেনানীতে পরিণত হন।
তবে, মাঝে একটা ইনজুরি তাঁকে খানিকটা ব্যাকফুটে ফেলে দেয়। চারিদিকটা নেতিবাচক আবহাওয়ায় ভরে যেতে শুরু করে। দুমড়ে-মুচড়ে নিজের মধ্যে গুটিয়ে যেতে শুরু করেন হার্দিক পান্ডিয়া।
তবে তাঁর পরিবারের প্রতিটা মানুষের সহয়তায় মানসিক দৃঢ়তা অর্জন করলেন। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে নিজেকে নতুন করে উজ্জীবিত করলেন। আর উজ্জীবিত হার্দিক পান্ডিয়া ঠিক কতটা ভয়ংকর, তা হাড়েহাড়ে টের পেল ইংল্যান্ড।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে চালকের আসন থেকে ইংল্যান্ডকে ছিটকে দিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। তাও আবার ব্যাট হাতে। দুর্দান্ত এক মারকুটে ইনিংস খেলে।
অন্ধকার চিরস্থায়ী নয়। আলো আসবেই। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। ঠিক তখন থেকেই তাঁর দিন খতম হয়েছে বলে গুঞ্জন জোড়ালো হতে শুরু করে। তবে ঠিক যখনই মনে হয়েছে তিনি শেষ, তখনই নিজেকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিলেন বিশ্ব ক্রিকেটে। মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে। অফ ফর্মের কারণে তাঁর সাবেক দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ছেড়ে দেয় তাঁকে। তিনি সে বঞ্চনার জবাবটাও দিয়েছেন মাঠে।
নতুন দল গুজরাট টাইটান্সের অধিনায়কের দায়িত্ব তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। দলকে প্রথম আসরেই শিরোপা জেতান অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। শুরুতে অধিনায়কের দায়িত্ব পালনেই থেমে ছিলেন তিনি, তেমনটা নয়। ব্যাটে-বলে সমানতালে পারফর্ম করেছেন ডানহাতি এই অলরাউন্ডার।
সেখান থেকেই নিজেকে আরও বেশি পরিণত একজন ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করতে শুরু করেন। এবারেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুর ম্যাচে বিরাট কোহলির সাথে জোট বেঁধে খাদের কিনারা থেকে দলকে উদ্ধার করেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
ঠিক আবারও ব্যাটার হার্দিক পান্ডিয়া জ্বলে উঠলেন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। শুরুতেই লোকেশ রাহুলের উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে চাপে রাখে ইংল্যান্ড। তারপর রোহিত শর্মার উইকেটও তুলে নেয় ইংলিশ। ফর্মের তুঙ্গে থাকা সুরিয়াকুমার যাদবও খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাইশ গজে। আবারও ভারতকে স্বস্তিজনক স্থানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এসে পড়ে বিরাট-হার্দিক জুটির উপর। খানিকটা রয়ে সয়ে খেলে বিরাট তুলে নেন অর্ধশতক।
অর্ধশতকের দেখা হার্দিকও পেয়েছেন। তবে তাঁর আগ্রাসন ইংল্যান্ডের তৈরি করা সব চাপ ধুলোয় মিলিয়ে দেয়। ক্রিস জর্ডান, স্যাম কারানদের বিপক্ষে ১৯০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেন হার্দিক পান্ডিয়া। মাত্র ৩৩ বলে ৬৩ রানের একটা দানবীয় ইনিংসের সমাপ্তিটা ঘটে একেবারেই অপ্রত্যাশিতভাবে। হিট উইকেট হয়ে আউট হওয়া সময়ও তিনি বল বাউন্ডারি ছাড়া করেছেন।
একটা সময় স্বল্পতেই থেমে যাবে ভারতের সংগ্রহ এমন আশাঙ্কা তৈরি হয়। তবে সে আশঙ্কা সত্যি হতে দেননি হার্দিক পান্ডিয়া। তাঁর সেই মারকাটারি ইনিংসের সুবাদে ১৬৯ রানের লড়াকু লক্ষ্য মাত্রা ঠিক করে ভারত। এরপরের ঘটনা নিশ্চয়ই সবারই জানা।
হার্দিক পান্ডিয়াদের মত খেলোয়াড়রাই ক্রিকেটের প্রতি নিবেদনের জলজ্যান্ত উদাহরণ। তাঁদের হার না মানা মানসিকতা ক্রিকেটকে করেছে আরও বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ, সেই সাথে আনন্দদায়ক।