খবরদার! কেউ উদযাপন করবে না!

ক্রিকেটে ব্যাট বলের যুদ্ধে যে জেতে সেই বিজয়ী। একই সাথে এটাও সত্য যে ক্রিকেটের মত মনস্তাত্ত্বিক খেলা আর খুব কমই আছে। বলা হয় মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে যে অধিনায়ক যত বেশি সিদ্ধহস্ত সেই দল তত বেশি ভাল।

এমনই কৌশলী এক অধিনায়ক হলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তিনি নিজে আত্মবিশ্বাসী একজন অধিনায়ক ছিলেন, এবং ড্রেসিংরুমেও সবসময় একটি ইতিবাচক আবহাওয়া রাখতে চেষ্টা করতেন। অধিকাংশ সময় শক্তিমত্তা নয়, বরং কৌশল আর ক্যাপ্টেন কুলের মনস্তাত্ত্বিক শক্তির সামনে হেরে যেত প্রতিপক্ষরা।

ভরত সুদর্শনের ধোনিকে নিয়ে লেখা প্রকাশিত বই ‘ধোনি’স টাচ’ এ একটি দারুণ ঘটনার কথা জানা গেছে। সেই ঘটনারই স্মৃতিচারণা করবো আজ।

ভারত-অস্ট্রেলিয়া দ্বৈরথ অনেক পুরোনো। ভারতীয় অনেক ক্রিকেটার তাঁদের প্রিয় প্রতিপক্ষ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার নাম নেন, তাদের শক্তিমত্তার জন্য। ২০০৮ সালেও ভারত-অস্ট্রেলিয়া খেলাটি নিয়েও কম উত্তেজনা ছিল না।

উঠতি শক্তি ভারতীয় দলটি তখন সদ্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কিংবদন্তী অস্ট্রেলিয়া দলটির মুখোমুখি হয়। একে তো প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, তার উপর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো তখন অবিশ্বাস্য ব্যাপার ছিল।  আর ভারতের বিদেশের পারফরমেন্সও তেমন ভাল ছিল না।  এমন একটি ম্যাচে জয় পেলে ভারতীয়দের উল্লাস আকাশছোঁয়া হতেই পারত।

কিন্তু অধিনায়ক ধোনি সতীর্থদের নিষেধ করেন উদযাপন করতে। সাফ বলে দেন, ‘খবরদার! কেউ উদযাপন করবে না!’

এর উদ্দেশ্য ছিল একটি বার্তা দেয়া যে, পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারানোও ভারতের কাছে তেমন বড় চমকদার কিছু না, আর এই জয়টা অঘটনও না।

১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা ভারত যখন জয়ের দ্বারপ্রান্তে, ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে মাত্র ১৫ তম ম্যাচ অধিনায়কত্ব করতে নামা ধোনি ও তরুণ রোহিত শর্মা ছিলেন পিচে।

ধোনি রোহিতকে তখনই সতর্ক করে দেন যে, জয়ের পর উদযাপন যেন কোনো ভাবেই মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। অন্যান্য বিজয়ী দলের মত প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে হাসিমুখে মাঠ ছাড়ার পরিকল্পনা তখনই করে ফেলেন দু’জন।

এমনকি ড্রেসিংরুমের ব্যালকনি থেকেও উল্লাস দেখা যায়নি, এর রহস্যটা কি? কারণ, ধোনির নির্দেশ। ধোনি ইনিংসের মাঝখানে যখন গ্লাভস আনান তখনই দ্বাদশ খেলোয়াড়কে দিয়ে বার্তা পাঠিয়ে দেন। ধোনির নির্দেশ ছিল, জিতলেও যেন কেউ অতি-উল্লাস না করে, সাধারণ আর ১০ টা ম্যাচের মতই আচরণ করে।

ধোনি পরবর্তীতে তাঁর সেই মাইন্ড গেমের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘যদি আমরা সেদিন উল্লাস করতাম, তাহলে অস্ট্রেলিয়ানরা নিশ্চিতভাবেই এটাকে অঘটন হিসেবে ঘোষণা দিত। কিন্তু আমাদের এমন আচরণ তাদেরকে মানসিকভাবে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। ফলে ভারতের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে কিছুটা দুর্বল হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ানদের ইস্পাত-কঠিন মনোবল।’

সেই মাইন্ড গেমে জিতে ভারতীয়রা আত্মবিশ্বাসে টগবগ করতে থাকে সিরিজের বাকিটা সময়। লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরি ও অন্যান্যদের সমন্বিত পারফরমেন্স ভারতকে জয় এনে দেয় ফাইনালে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে জয় অনেক দিক থেকে ভারতকে এগিয়ে দেয়।

এই এগিয়ে দেওয়ার কাজটা তো ধোনিই করেছেন বরাবর!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link