৩৬ বছর বয়সে পা দিয়েছেন অনেকদিন হলো। কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দেখে সেটা বুঝার উপায় কই, মাঠে এখনো সমান সক্রিয় তরুণদের মতো।
বয়সের সাথে সাথে গতি এবং ক্ষীপ্রতা দুটোই কমার কথা। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে যেন আরো তরুণ হচ্ছেন সিআর সেভেন। এবারের ইউরোতে জার্মানির ম্যাচের কথাই মনে করুন, প্রথম গোলের আগে মাত্র ১০ সেকেন্ডেরও কম সময়ে পুরো মাঠে দৌড়ে এসে গোল করেছেন। অথচ ২০০৩ সালে যখন তিনি ইউনাইডে খেলতে আসেন তখন ছিলেন লিকলিকে একহারা গড়নের এক তরুণ। সময়ের সাথে সাথে কঠোর খাদ্যাভাস, ফিটনেস ট্রেনিং আর ডায়েটের মাধ্যমে নিজেকে তুলে এনেছেন অন্য উচ্চতায়, সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ট্রেনিংয়ে নামার শুরুতেই চোট পাবার সম্ভাবনা কমাতে ওয়ার্মআপ করে নেন রোনালদো। জগিং, স্ট্রেচিং, কার্ডিও ওয়ার্মআপ দিয়েই শুরু করেন তিনি। এরপর কার্ডিওভাস্কুলার অনুশীলনের পাশাপাশি রানিং, রোয়িং এবং ওজন বাড়ানোর দিকেই মূল লক্ষ্য থাকে তার।
সকালের নাস্তার মেন্যুতে রোনালদোর পছন্দ চিজ, কম ফ্যাটযুক্ত মাংস, হ্যাম, কম ফ্যাটযুক্ত ইয়োগার্ট ও ফলমূল, বিশেষত আভোকাডো। ব্রেকফাস্ট সেরেই অনুশীলনে নেমে পড়েন রোনালদো। অ্যাথলেটদের খাবারের রুটিন সাধারণত সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা হয় কারণ তাদের বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হয়। তাই তাদের অল্প করে বারবার খেতে হয়। রোনালদোও ব্যতিক্রম নন, তার ব্যক্তিগত পুষ্টিবিদ তিন-চার ঘন্টা পরপরই খাবারের ব্যাপারে মেইল করেন তাকে। ওয়ার্ক আউটের পর নিয়মিত সুষম প্রোটিনজাত খাবার খান তিনি। খাবারের মাঝে প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি ও ভেজানো ছোলা খান এই তারকা। সুগারজাত খাবার সর্বদা এড়িয়ে চলেন এই পর্তুগিজ স্ট্রাইকার।
মাংসের চাইতে মাছ খেতেই বেশি পছন্দ করেন রোনালদো বিশেষ করে সামুদ্রিক সোর্ডফিশ। তাছাড়া কড মাছ, পেঁয়াজ, আলু, ডিম দিয়ে তৈরি ‘ব্রাকালহো ব্রাজ’ নামের এক খাবার রোনালদোর পছন্দের তালিকার শীর্ষে। প্রচুর ফলমূলের পাশাপাশি চর্বিহীন প্রোটিনের প্রতিই আগ্রহ তার। রেঁস্তোরায় খেতে গেলে সাধারণত স্টেক এবং সালাদ নেন রোনালদো, তবে মাংসটা হতে হবে একদম টাটকা। রোনালদো সবসময় লাল মাংস, চর্বিজাতীয় খাবার এবং কোমল পানীয় এড়িয়ে চলেন।
একমাত্র বেলজিয়ান হিসেবে রোনালদোর সতীর্থ হবার সৌভাগ্য হয়েছে দাউদা পিটার্সের। জুভেন্টাসে খেলার সুবাদে রোনালদোকে কাছে থেক দেখেছেন তিনি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পিটার্স জানান, ‘তার খাবার সবসময় একই থাকে; ব্রোকলি, মুরগি আর ভাত। সঙ্গে প্রচুর পানি। অবশ্যই কোকা–কোলা থাকে না।’
শেষের কথাটা বলে অবশ্য পরোক্ষভাবে কোকা কোলাকে খোঁচাই দিলেন পিটার্স। ইউরোতে এক সংবাদ সম্মেলনে রোনালদো টেবিলে রাখা কোকা–কোলা সরিয়ে দিয়ে পানি পান করতে বলেছেন সবাইকে। এ ঘটনায় ইউরোপের শেয়ারবাজারে একদিনেই প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল কোকা কোলা!
তবে রোনালদোর পছন্দের আরেকটি খাবার হলো মুরগির মাংস। চর্বিহীন মুরগীর বুকের মাংস খেতে ভীষণ ভালোবাসেন এই পর্তুগিজ। প্যাট্রিক এভরার একটা বক্তব্যে সেটা পরিষ্কার, ‘একবার অনুশীলন শেষে রন আমাকে ওর বাসায় নিমন্ত্রণ করে। যাবার পর খাবার টেবিলে গিয়ে দেখলাম শুধু সালাদ, মুরগি আর পানি। কোনো জুস নেই। খাওয়া শুরুর পর ভাবলাম, হয়তো মাংসজাতীয় আরও কিছু দেওয়া হবে। কিন্তু কিছুই এল না। সে খাওয়াদাওয়া শেষ করেই আবার খেলা শুরু করে দিল। আমাকে বলল, চলো, “টু-টাচ” (বলে দুটি টাচের বেশি করা যাবে না) অনুশীলন করি। এজন্য খবরদার ওর আমন্ত্রণ রক্ষা করো নাহ, স্রেফ প্রত্যাখ্যান করে দাও।’
কেবল কঠোর খাদ্যাভাস কিংবা ট্রেনিংয়ের ফলেই তিনি আজকের রোনালদো হয়ে উঠেননি। তার মতে শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি ফিট থাকতে মানসিক প্রশান্তিও প্রয়োজন। এজন্য ক্যারিয়ারের শুরুতে নিয়মিত পার্টি করা রোনালদো নিজেকে গুটিয়ে এনেছেন সেখান থেকে। এখন পরিবারের সাথেই বেশি সময় কাটাতে পছন্দ করেন এই তারকা। পাশাপাশি রোনালদোর ঘুমের সময়টাও একটু ভিন্ন বাকিদের চেয়ে, একেবারে আট ঘন্টা না ঘুমিয়ে ৯০ মিনিট করে পাঁচবার ঘুমান তিনি। ছুটির দিন কিংবা ম্যাচের দিন এই রুটিনের ব্যতিক্রম ঘটান না রোনালদো।