ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্ট: হঠাৎ ‘ভিন্ন’ কিছু

ট্রেন্ট ব্রিজে সিরিজের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ শুরু পায় ভারত। ওপেনিং জুটিতেই ৯৭ রান করেন রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। দুইজনই ওপেনিং জুটিতে একশোরও বেশি বল খেলেন। অবাক করা ব্যাপার হলো এর আগে এশিয়ার বাইরে দুই ভারতীয় ওপেনারই একশোর বেশি বল খেলেছেন ২০০৭ সালে! সবশেষ ১৩ বছর আগে দীনেশ কার্তিক এবং ওয়াসিম জাফর এশিয়ার বাইরে ওপেনিং জুটিতে একশোরও বেশি বল খেলেন।

এন্ডারসন-ব্রডদের স্যুইংয়ের সামনে এই ওপেনিং জুটি দারুণভাবে ক্লিক করে। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ইংলিশরা। ম্যাচের আগের দিনই উইকেট দেখে বোঝা যাচ্ছিলো এই সবুজ গালিচায় পেসাররা একক ভাবে ত্রাশ করবে। এই উইকেটে ইংলিশদের প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তে বেশ অবাক হয়েছিলাম!

পরক্ষণেই ভাবলাম চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং এড়াতেই হয়তো এই সিদ্ধান্ত। এমনিতেই জো রুট ছাড়া ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা কেউই তেমন ফর্মে নেই। জস বাটলারও আছেন দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে। সব মিলিয়ে সাদা পোশাকে বেশ খারাপ সময়ই পার করছে ইংলিশরা।

অবশ্য উইকেট পেস সহায়ক হওয়ায় দুই স্পিনার খেলানোর ভুল করেনি ভারত। ব্যাটিং অ্যাডভান্টেজের কারণে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে টপকে একাদশে টিকে যায় রবীন্দ্র জাদেজা। এতে অবশ্য ভারতের মিডিয়া কিংবা ফ্যান পেজ গুলোতে সমর্থকদের বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখলাম। তবে প্রথম দিনই তাদের ভুল প্রমাণ করে বুমরাহ-শামিরা। পেসারদের দক্ষতায় রবিচন্দ্রন অশ্বিনের প্রয়োজনবোধই করেনি দল।

প্রথম ইনিংসে বুমরাহ-শামিদের তোপে মাত্র ১৮৩ রানেই গুড়িয়ে যায় স্বাগিতক ইংল্যান্ড। সেই জো রুটের ফিফটি ছাড়া কেউই সেভাবে প্রতিরোধ গড়তে পারেনি ভারতীয় পেসারদের সামনে। বুমরাহ-শামিদের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা।

ঘরের মাটিতে প্রথম ইনিংসে এটি পঞ্চম পঞ্চম স্কোর ইংলিশদের। এর আগে ২০০০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৭৯ রানে অলআউট হয় ইংলিশরা। প্রথম ইনিংসে ঘরের মাঠে এর আগের চার লোয়েস্ট স্কোরে এক ড্র ছাড়া বাকি তিন ম্যাচেই হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইংলিশরা। অবশ্য ড্র করা টেস্টে ১৮৮৪ সালে অজিদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে মাত্র ৯৫ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড!

প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ভরাডুবির পরে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা ধারণা করছিলেন ভারতকেও এই উইকেটে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। শুরুটাও সেভাবেই করেছিলেন অ্যান্ডারসন-ব্রডরা। স্যুইং আর গতিতে ভারতীয় ওপেনারদের শুরু থেকেই পরাস্থ করছিলেন ইংলিশ পেসাররা। তবে দাঁতে দাঁত চেপে উইকেটে পড়ে ছিলেন রোহিত-রাহুলরা। সব প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে দুই ওপেনার জুড়ে দেন ৯৭ রানের জুটি!

তখন মনে হচ্ছিলো ইংলিশদের সামনে প্রথম ইনিংসে অপেক্ষা করছে বড় লিড। টেন্ট ব্রিজের আকাশে তখন কালো মেঘ উঁকি দিচ্ছিলো, যেকোনো সময়ই নামবে বৃষ্টি। তবে তার আগেই ছোট্ট একটা ঝড় বয়ে গেলো ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের উপর! রবিনসন-অ্যান্ডারসনদের তোপে ১৫ রানের মাথায় নেই ৪ উইকেট! বিনা উইকেটে ৯৭ থেকে দলীয় ১১২ রানেই চার ব্যাটসম্যান ড্রেসিং রুমে।

৯৭ রানে প্রথম উইকেটের পর ১০৪ রানেই পর পর দুই উইকেট হারায় সফরকারীরা। টানা দুই বলে দুই উইকেট শিকার করেন জেমস অ্যান্ডারসন। দীর্ঘদিন সেঞ্চুরি খরায় থাকা বিরাট কোহলিকে ফেরান গোল্ডেন ডাকে! টেস্ট ক্যারিয়ারে পঞ্চমবার গোল্ডেন ডাকের শিকার হলেন বিরাট।

আর বিরাটের উইকেট শিকারের মধ্য দিয়ে জেমস অ্যান্ডারসন শিকার করেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ৬১৯ তম উইকেট! টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় অনিল কুম্বলের সাথে এখন যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে আছেন তিনি। তাঁর উপরে আছেন শুধু শেন ওয়ার্ন এবং মুত্তিয়া মুরালিধরন।

সবশেষ ১২ টেস্টে প্রথমবার বিরাট কোহলির উইকেট শিকার করলেন এন্ডারসন। এর আগে ২০১৪ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে বিরাটকে আউট করেছিলেন তিনি। মাঝের ৭ বছরে অ্যান্ডারসন যে বিরাটের উইকেট নিতে ব্যর্থ হয়েছেন এমনটাও নয়। বরং ভাগ্য সহায় ছিলো না তাঁর! ২০১৮ সালে টেস্ট সিরিজে এন্ডারসনের বলে তিন বার ক্যাচ মিসে নতুন জীবন পান বিরাট! এমনকি ওই সিরিজে অন ফিল্ড আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনার ভুল সিদ্ধান্তে এন্ডারসনের বলে লেগ বিফোর থেকেও রেহাই পান বিরাট। এরপর সবশেষ ভার‍তের মাটিতেও টেস্ট সিরিজে এন্ডারসনের বলে ক্যাচ মিসে বেঁচে যান ভারতীয় কাপ্তান।

দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টির আগ পর্যন্ত ৪ উইকেটে ১২৫ রান সংগ্রহ করেছে ভার‍ত। উইকেটে আছেন ওপেনার লোকেশ রাহুল ও ঋষাভ পান্ত। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৫৮ রানে পিছিয়ে আছে স্বাগতিকরা। এই টেস্টে এখন পর্যন্ত এগিয়ে ভারতই। প্রথম ইনিংসে ভারতের লিড আর দ্বিতীয় ইনিংসে ইংলিশদের ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সই নির্ধারণ করবে এই টেস্টের ফলাফল। এর মাঝে আরেকটা ব্যাপার, এই সিরিজই হয়তো প্রথম ইনিংসে চার রানে বিদায় নেওয়া চেতেশ্বর পুজারার জন্য শেষ সুযোগ! প্রায় দীর্ঘ সময় অফ ফর্মে থাকা পুজারার সামনে টিকে থাকার পথটা অবশ্যই কঠিন হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link