আমাদের কাছে সব সময় দুইটা পথ খোলা থাকে। একটা খানিক সহজ হয়। তবে সে পথের শেষটা খুব একটা সুন্দর যে হয় সে বিষয়টা আবার আপেক্ষিক। এমন এক সহজ পথ বেছে নিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান এক সময়কার তারকা ফুটবলার অস্কার। চেলসির মধ্য মাঠের দায়িত্ব ছেড়ে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন চীনে।
সেখানেও নিশ্চয়ই তিনি মধ্য মাঠের দায়িত্বই পেয়েছিলেন। তবে সেখানটায় নিশ্চয়ই এতটা জৌলুশ নেই। বিশ্ব মিডিয়ার কাভারেজ অথবা গর্ব করার মত খুব বেশিকিছু নেই। সেখানটায় শুধুই অর্থের ছড়াছড়ি। সেটাও এখন ইউরোপের ফুটবল অঙ্গনে নতুন নয়। তবুও দ্রুত ও সহজ পথ বেছে নেওয়া।
চেলসির নীল জার্সিটা অস্কার গায়ে জড়িয়েছিলেন ২০১২ সালে। সেখানটায় সাফল্য এসেও ধরা দিচ্ছিলো তার হাতে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা, লিগ কাপ, ইউরোপা লিগ শিরোপা সহ বেশ কিছু অর্জন রয়েছে তার চেলসি ক্যারিয়ারে। তাছাড়া চেলসির মত ঐতিহ্যবাহী এক ক্লাবের সদস্য তিনি ছিলেন। ক্রমশ তিনি বনে যাচ্ছিলেন ক্লাবে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ইংল্যান্ড ছাড়ার আগে চেলসির হয়ে ততদিনে প্রায় ২০০ ম্যাচ খেলা শেষ অস্কারের। অতএব এটাই প্রমাণ করে যে ক্লাবের জন্য তিনি ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড় ছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি লন্ডনের ক্লাবটির হয়ে মৌসুম সেরা গোলের খেতাবও জিতেছিলেন।
ক্লাবের পাশাপাশি জাতীয় দলেরও একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যে পরিণত হচ্ছিলেন তিনি প্রতিনিয়ত। উদীয়মান তারকা মিডফিল্ডারদের একজন হিসেবেই বিবেচিত হতেন অস্কার। ভিন্ন ভিন্ন কোচের অধীনে আক্রমণ ভাগের প্রায় প্রতিটি পজিশনেই তিনি খেলেছেন তার চেলসি ক্যারিয়ারে। যখন তিনি প্রায় ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পৌঁছুলেন ঠিক তখনই তিনি নিয়ে ফেললেন অন্যতম এক ভুল সিদ্ধান্ত।
তবে সেটা ভুল না সঠিক বিষয়টা আপেক্ষিক। অস্কার ব্রাজিলের একটা অতি দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তিনি হয়ত চাইছিলেন দ্রুতই প্রচুর অর্থ আয় করে পরিবারকে বাকিটা জীবন সুখে রাখতে। এমনটা চাওয়া নিশ্চয়ই ভুল কিছু নয়। তবে তিনি হয়ত সেটা ইউরোপে থেকেই পারতেন। তবে তাতে হয়ত খানিক কালক্ষেপন হত। অথবা তিনি হয়ত নিজের সামর্থ্যের উপর ভরসা করতে পারেননি।
তাই তিনি মাত্র ২৫ বছর বয়সেই চলে গিয়েছিলেন চীন। চাইনিজ সুপার লিগ দল সাংঘাইয়ের জার্সি তিনি গায়ে জড়ান। অস্কারের ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে রীতিমত সবাই অবাক। সবাইকে চমকে দিয়ে ৬৭ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তিনি চলে যান চীনে। তার সাপ্তাহিক বেতনও ছিল আরও চমকে দেওয়ার মত। প্রায় পাঁচ লাখ ডলার। যা কি না তাকে বানিয়েছিল সে সময়ে পঞ্চম সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলার।
সেটাই তো তিনি চেয়েছিলেন। তবে মহামারীর থাবায় যখন প্রায় সব ক্লাবের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে তখন বেশ কিছু খেলোয়াড় আবার ইউরোপের নানা লিগে নিজেদের ফিরে পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে। ব্যতিক্রম ছিলেন অস্কার। তিনি বরং ২০২৪ পর্যন্ত নিজের চুক্তি নবায়ন করেন। তবে কি তিনি আবার ফিরে আসতে চান না ইউরোপে?
না বিষয়টা তেমনও না। তিনি বেশকিছু গণমাধ্যমকে বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন তিনি ইউরোপীয় ফুটবলে আবার ফিরতে চান। তবে তিনি তার ফেলে আসা ক্লাব চেলসির হয়েই খেলতে চান। কেননা সেখানে তিনি তার ক্যারিয়ারের স্বর্ণালী দিনগুলো কাটিয়েছেন। তিনি খুব করে চান যেন তিনি আবার চেলসিতে ফেরত যেতে পারেন।
তবে সে রাস্তাটা বেশ কঠিন। প্রায় অবরুদ্ধ বলা চলে। অস্কার দাবি করেন তিনি চাইনিজ সুপার লিগে ভাল খেলছেন। তার পরিসংখ্যান বেশ প্রশংসনীয়। তবে ইউরোপের ফুটবলের প্রতিযোগিতা বিচারে নিশ্চয়ই তা ফিকে হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, চেলসির নতুন বস টমাস টুখেলের দলে তিনি আসলে তার জায়গা হবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
হয়ত অস্কার তার করা ভুলটা বুঝতে পেরেছেন। তবে সে ভুলের মাশুল হয়ত তিনি দিচ্ছেন। হয়ত তিনি এখনও আফসোস করেন। তবে এসব কিছুই আপেক্ষিক। জ্ঞান অর্জনের জন্য চীনে যাওয়া যায়, কিন্তু ফুটবল খেলতে চীনে যাওয়াটা একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গেছে অস্কারের জন্য।