তিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা। অথচ, নিন্দুকেরা বলেন, তিনি ফুরিয়ে গেছেন, বয়সের ভারে নুঁয়ে গেছেন। ইউরোপ আজ আর তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকে না। বড় ক্লাবগুলোতে তাঁকে নিয়ে আর কাড়াকাড়ি হয় না।
জাতীয় দলে তিনি ডাক পান বটে, কিন্তু বসে থাকেন বেঞ্চে। তীর্থের কাক হয়ে তিনি বসে থাকেন, অপেক্ষায় থাকেন। এই বুঝি ডাক আসবে – এই বুঝি তিনি সবুজের গালিচায় আলতো করে বলটায় পা ছোঁয়াতে পারবেন। বয়স না মানলেও মন কি আর মানে।
মেজাজটাই তো আসল রাজা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মনও তাই এই গ্রেটকে নিশ্চয়ই রাজা ভাবতেই পছন্দ করে। শুধু ভাবাই নয়, মাঠে নামার সুযোগ পেলে আজও কখনও কখনও তিনি রাজা হয়ে উঠতে পারেন পর্তুগালের হয়ে।
বড় কোনো ম্যাচ নয়, বড় কোনো প্রতিপক্ষ নয়। কিন্তু, জাতীয় দলের খেলার মেজাজটাই তো আলাদা। আর সেই মেজাজে সিআর সেভেন যেন হয়ে উঠলেন আরও মেজাজি।
আর সেই মেজাজের দাপটেই তিনি আভেইরোর মাঠে আয়ারল্যান্ডের জালে বল জড়ালেন দু’বার। মাঠে ছিলেন একদম ম্যাচের শুরু থেকেই। ইউরোর শুরুর একাদশ তিনি থাকবেন কি না – তা নিয়ে যা সন্দেহ তা হয়তো কিছুটা হলেও কমল এই পারফরম্যান্সে।
লিওনেল মেসির সাথে তাঁর একটা সময় ধুন্ধুমার দ্বৈরথ ছিল। সেসব এখন প্রায় অতীত। মেসি বিশ্বকাপ জিতে নিজেকে ফুটবল স্বর্গের দুয়ারে পৌঁছে গেছেন। রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্ব হয়তো এতটাও শিখর ছুঁতে পারেনি কখনও, কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালবাসা কিংবা প্রতিটা দিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তাড়ণা তিনি আজো অনুভব করেন।
এই রোনালদো অবিশ্বাস্য, এই প্যাশন নিয়ে জন্ম নেওয়াটা রোজ রোজ সম্ভব নয়। দেশের হয়ে রোনালদোর গোল এখন ১৩০ টা। বয়স ৩০ হয়ে যাওয়ার পর এর মধ্যে করেছেন ৭৮ টা।
খোদ পেলেরই পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে গোলের সংখ্যা ৭৭ টি। বয়স যে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্য শুধুই সংখ্যা – এই পরিসংখ্যানই সেই কথা বলে। একই সাথে জাতীয় দলের হয়ে টানা ২১ পঞ্জিকাবর্ষে গোলের কীর্তি গড়লেন এই গ্রেট।
এই কীর্তি আছে পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই বা ক’জনার থাকে। আর মাত্র পাঁচটা গোল করলেই পাবেন পেশাদার ক্যারিয়ারে ৯০০ গোলের মাইলফলক। এই রোনালদোকে এড়িয়ে গিয়ে ফুটবলের ইতিহাস লেখা আদৌ অসম্ভব!