২০০৫ ও ২০২৩ এজবাস্টন টেস্ট, দুই ছবি, দুই স্মৃতি!

এজবাস্টন টেস্ট রোমাঞ্চ। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার এ দ্বৈরথে পাঁচদিনের উত্তাপটা ঠেকেছিল শেষ দিন, শেষ সেশন আর শেষ ঘণ্টায়। আর এমন শ্বাসরূদ্ধকর সময়গুলোতে বারবারই ফিরে আসছিল সেই ২০০৫ সালের এজবাস্টন স্মৃতি।

সেবার নিশ্চিত পরাজয়ের মুখ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে একদম জয়ের দুয়ারে গিয়ে থেমে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ২৮২ রানের লক্ষ্যে ২ রানে হেরে হৃদয় ভেঙ্গেছিল তাদের। তবে ১৮ বছর বাদে, ঐ একই মাঠে এবার অজিরা জিতল ২ উইকেটে।

২০০৫ এর অ্যাশেজ। এজবাস্টনের ম্যাচটা রীতিমত জমে ক্ষীর। অজিদের প্রয়োজন ৩ রান। আর ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ১ টি উইকেট। এমতাবস্থায় ইংলিশ পেসার স্টিভ হার্মিসনের একটি বাউন্সার সামলাতে ব্যর্থ হলেন মাইকেল কাসপ্রোভিস।

ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটের পিছনে। ইংলিশ উইকেটরক্ষক গ্যারেন্ট জোনস এমন মোক্ষম সুযোগ আর হাতছাড়া করেননি। একটু লাফিয়ে লুফে নেন ক্যাচটা। ব্যাস। মাত্র ২ রান দূরে থেকেই থেমে যায় অজিদের ইনিংস। অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচটা জিতে নেয় ইংল্যান্ড।

২০০৫ সালের সেই অ্যাশেজ স্মৃতিরই পুনরাবৃত্তি ঘটানোর দিকে এবার চোখ ছিল ইংলিশদের। আর সে যাত্রায় তাঁরা এগিয়ে ছিলও বটে। দলীয় ২২৭ রানে অ্যালেক্স ক্যারি যখন ফিরলেন, তখন ম্যাচ ঝুঁকে গিয়েছে ইংল্যান্ডের দিকে।

কারণ জয়ের জন্য তখন ৫৪ রান অজিদের জন্য অনেক দূরের পথ। তবে সেই দূর পথে পা বাড়িয়েছিলেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। স্টুয়ার্ট ব্রড, রবিনসনদের একেকটা সুইং, বাউন্সার সামলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান দারুণ ছন্দে।

অবশ্য তাতে আশঙ্কাও ছিল। কামিন্স-লায়নের পর আর একটি মাত্র উইকেটই অস্ট্রেলিয়ার অবশিষ্ট ছিল। তাই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ের সাথে প্রয়োজন ছিল সাবধানী অ্যাপ্রোচও। অজি কাপ্তান কামিন্স এজবাস্টনের মাটিতে সেটিই করে দেখান।

দলকে চাপে পড়তে দেননি। শেষের দিকে দারুণ ব্যাটিং করে চাপ জয় করেন। অবশ্য তাতে নাথান লায়নের অবদানও কম নয়। কারণ ৫৪ রান দূরে থাকতে অজিরা যখন ধুঁকছে, তখন ব্যাটিং প্রান্তে এসে কামিন্সকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিলেন তিনিই।

আর তাদের অবিচ্ছিন্ন ৫৫ রানের জুটিতেই এজবাস্টনে ইংলিশদের হৃদয় ভেঙ্গে ম্যাচটি জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ২০০৫-এ এজবাস্টন স্মৃতিতে ব্রেট লি-কাসপ্রোভিচদের বিষণ্ন মাখা ভঙ্গিমা, সাথে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের স্বান্ত্বণা দেওয়ার ছবিটা অ্যাশেজের ইতিহাসে আইকনিক এক স্থিরচিত্রই হয়ে রয়েছে।

তবে এবার আর অজিদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়নি। দিনের ৪.৩ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে তাঁরা। সেবার হতাশায় এজবাস্টন ছেড়েছিল অজি ক্রিকেটাররা।

আর এবার এজবাস্টনের সকল ইংলিশ দর্শকদের চুপ করে দিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে জয়ের আনন্দের মাঠের চারদিকে ছুটলেন প্যাট কামিন্স। ১৮ বছর আগের মধুর প্রতিশোধ বুঝি একেই বলে!

তবে অস্ট্রেলিয়ার জন্য কাজটা এখনই শেষ নয়। শেষ ২২ বছরে একবারে জন্যও ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ সিরিজ জেতা হয়নি ক্যাঙ্গারুজদের। এবার এজবাস্টন টেস্ট জিতে ৫ ম্যাচের এ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল তাঁরা। ২২ বছরের এ তিক্তমাখা ইতিহাস হয়তো এবার মুছতে চাইবে প্যাট কামিন্সরা।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link