এইতো কয়েকদিন আগেই টেস্ট ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা বোলিংটা করলেন নাঈম হাসান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসেই তুলে নিলেন ছয় উইকেট। অথচ এবার মিরপুরের স্পিন বান্ধব উইকেটে তিনি দলের সাথেই নেই। ভাঙা আঙুল নিয়ে এখন আছেন বিসিবি একাডেমীতে। নাঈমের এই অসহায়ত্ব যেন আসলে মিরপুর টেস্টের আগে বাংলাসদেশ দলের অবস্থাই তুলে ধরছে।
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ে এর আগে ছিটকে গিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাঁর বদলি হিসেবেই চট্টগ্রাম টেস্টের দলে ডাকা হয়েছিল নাঈম হাসানকে। আর টেস্ট দলে ফিরেই নাঈমের বাজিমাত। তবে টেস্টের চতুর্থ দিন দিমুথ করুনারত্নের স্ট্রেট ড্রাইভ থামাতে গিয়ে আঙুলে চোট পান। পরে জানা যায় নাঈম আঙুলই ভেঙে ফেলেছেন। তাইতো আক্ষেপ নিয়ে নাঈম বলছিলেন,’ প্রথম চারটা দিন তো সব ঠিকই ছিল। কিন্তু শেষ দিনেই কী হয়ে গেল। এখন আর কী করার!’ নাঈমের গলায় এই আক্ষেপ যেন বাংলাদেশ দলেরই প্রতিধ্বনি।
কেননা এতজনের ইনজুরি মিলিয়ে বাংলাদেশ দলও খুব একটা সস্তিতে নেই। টেস্ট সিরিজ শুরু হবার আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মিরাজ। এরপর জানা গিয়েছিল করোনার কারণে সাকিবও খেলতে পারবেন না। যদিও পরে সাকিব ফিরতে পেরেছিলেন।
এরপর চট্টগ্রাম টেস্টে ইনজুরিতে পড়েছেন পেসার শরিফুল ইসলামও। ফলে তাঁকে ছাড়াই মিরপুরে মাঠে নামতে হবে বাংলাদেশকে। এরপর আবার যোগ হয়েছে নাঈমের ইনজুরি। সবকিছু মিলিয়ে এখন ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ কীভাবে সাজানো হবে তাই যেন চিন্তার বিষয়।
ঢাকা টেস্টেও যদি দুজন পেসার খেলানো হয় তাহলে হয়তো শরিফুলের জায়গায় এবাদত হোসেন একাদশে আসবেন। চট্টগ্রামে খালেদ ভালো করতে না পারলেও তাঁকে হয়তো ঢাকা টেস্টেও সুযোদ দেয়া হবে। তবে বড় সমস্যাটা হবে মিরপুরের স্পিনিং ট্র্যাকে যদি বাংলাদেশ এক পেসার নিয়ে নামার পরিকল্পনা করে।
কেননা এখন টেস্ট দলে স্পিনার আছেন শুধু তাইজুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান। এছাড়া পার্টটাইম স্পিনার হিসেবে আছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তবে এরপরেও একজন বিশেষায়িত স্পিনারের অভাব বোধ করছে বাংলাদেশ। কেননা ঢাকা টেস্টের দলে আর কোন স্পিনারই নেই। এছাড়া নাঈমের বদলি হিসেবেও এখনো কারো নাম ঘোষণা করেনি বাংলাদেশ।
ফলে মিরপুরের স্পিনিং ট্র্যাকে বাংলাদেশ চাইলেও চারজন স্পিনার খেলাতে পারবেনা। আর একান্তই খেলাতে হলে বাংলাদেশকে বাইরে থেকে আরেকজন স্পিনার ডাকতে হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম টেস্ট থেকে শিক্ষা নিলে মিরপুরে নিশ্চয়ই অন্তত তিনজন জেন্যুইন স্পিনার খেলাতে চাইবে বাংলাদেশ।
কেননা চট্টগ্রাম টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়েও বাংলাদেশের দুই পেসার কোন উইকেট নিতে পারেননি। যদিও চট্টগ্রামের উইকেট বেশ স্পোর্টিং ছিল। শ্রীলঙ্কান পেসাররাও দারুণ বোলিং করেছেন। ফলে মিরপুরের মরা উইকেটে বাংলাদেশের পেসাররা কেমন করবেন সেই শঙ্কা থেকে যায়। চট্টগ্রাম টেস্ট শেষেও পেসারদের পারফর্মেন্স নিয়ে হতাশা ঝড়েছে অধিনায়ক মুমিনুল হকের কণ্ঠে।
ফলে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশ দুই পেসার খেলানোর বিলাসিতা নাও দেখাতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে দলে চতুর্থ স্পিনার হিসেবে কে আসবেন। স্পিনারদের নিয়ে গর্ব করা বাংলাদেশেরও যে কার্যকর স্পিনারের কতটা অভাব তা আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছে মিরাজ, নাঈমদের এই ইনজুরি। তাই ঢাকা টেস্টের আগে নাঈমদের আঙুলটা ভাঙা, আর বাংলাদেশের?