পালমেইরাসে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন ডগলাস সুসা। তবে ব্রাজিলিয়ান বলেই কিনা নান্দনিক ফুটবলে চোখ আটকে যেত তাঁর। একদিন সে রকমই নান্দনিক ফুটবলের কারুকার্যের স্বাক্ষী হলেন তিনি। তিন বছরের এক শিশুর বাইসাইকেল কিক দেখে তাঁর চক্ষু ছানাবড়া। বিস্ময়ে আবিষ্কার করলেন, এ আর কেউ নন, ৩ বছরের সেই শিশুটি হলো তাঁরই পুত্র এন্ড্রিক ফেলিপে।
সেই ফেলিপের বয়স এখন ১৮ ছুঁইছুঁই। কোথায় আছেন তিনি? জিজ্ঞাসু মনে উদিত এই প্রশ্নের উত্তর হলো, সেই এন্ড্রিক ফেলিপে এখন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার অপেক্ষায় রয়েছেন। ইউরোপের ঝলমল ফুটবল দুনিয়া ডাকছে তাঁকে। ছেলের সাফল্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন দিন বদলাচ্ছে পুরো ডগলাসের পরিবারেরও।
তবে ছেলের এমন সাফল্যের মসৃণ পথচলায় ডগলাসেরও দারুণ অবদান। ছেলের ফুটবল কারুকার্য মুঠোফোনে বন্দী করতেন তিনি। আর সেই ভিডিও তিনি উদ্দেশ্যহীন ভাবেই প্রকাশ করতেন ইউটিউবে। উদ্দেশ্যহীন হলেও বাবার এমন কাণ্ডে কপাল যায় এন্ড্রিকের। ফুটবল প্রতিভা নজরে পড়ে ব্রাজিলের শীর্ষ ফুটবল প্রতিযোগিতা ব্রাজিলেইরাওয়ের ক্লাব পালমেইরাসের।
মাত্র ১১ বছর বয়সে ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ পান এন্ড্রিক। ১১ বছর বয়স থেকে প্রায় ৫ বছর পালমেইরার বয়সভিত্তিক দলে ছিলেন। আর তাতে প্রায় দেড়শোর উপরে গোল করে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তিনি সুযোগ পান পালমেইরাসের মূল দলে। সিনিয়র দলে সুযোগ পেয়েই আবার ইতিহাস সৃষ্টি করেন এ বিস্ময় বালক।
১৯১৬ সালে ১৬ বছর ১১ মাস ১৪ দিন বয়সে ক্লাবটির হয়ে গোল করেছিলেন হেইটর। ১০৬ বছর ধরে সেটিই ছিল পালমেইরাসের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে গোলের ঘটনা। তবে ১০৬ বছর ধরে অক্ষুণ্ণ থাকা সেই রেকর্ডটাই ভেঙে দেন এন্ড্রিক ফেলিপে। প্যারানায়েন্সের বিপক্ষে ২০২২ সালে যখন গোল পেলেন তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৬ বছর ৩ মাস ৭ দিন।
মূলত ২০২২ সালেই বিশ্ব ফুটবলের নজরে আসেন এন্ড্রিক। সে বছর সাও পাওলো যুব ফুটবল কাপে ৭ ম্যাচে করে ৭ গোল করে তিনি জেতেন টুর্নামেন্ট-সেরার পুরস্কার। এ ছাড়া ওই বছর অনূর্ধ্ব-২০ কোপিনহা টুর্নামেন্টে ২১ ম্যাচে ১৬ গোল করে সেনসেশন ফুটবলার নির্বাচিত হন তিনি। আর এরপরই তাঁকে আগেভাগেই দলে পেতে আগ্রহী হয় ইউরোপের দলগুলো। পালমেইরাস তাঁকে ছেড়ে দিতে দাম ধরেছিল ৪০ মিলিয়ন ইউরো। তবে পিএসজি ২০ মিলিয়নেই তাদের দর আটকে রেখেছিল।
তবে এন্ড্রিককে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ৬৩.৬ মিলিয়নে তাঁকে আগেই দলে ভিড়িয়ে নেয় ইউরোপের ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। যদিও এখনই ব্রাজিল ছাড়ার সুযোগ নেই তাঁর। বয়স ১৮ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত নিজ দেশেই খেলতে হয় ব্রাজিলিয়ানদের। তবে চলতি বছরে ২১ জুলাইয়ে ১৮ পূর্ণ করবেন এ ফুটবলার। অর্থাৎ আগামী মৌসুম থেকেই বার্নাব্যুতে দেখা যাবে এ ফুটবল বিস্ময়কে।
তবে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মাঠে নামতে পারলেও এরই মধ্যে ব্রাজিল জার্সি গায়ে মাঠে দেখা গিয়েছে এন্ড্রিক ফেলিপেকে। কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচের জন্য তাঁকে দলভুক্ত করা হয়। মূলত নেইমারের চোটের কারণে তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিলেন কোচ ফার্নান্দো দিনিজ। আর এতেই রোনালদো নাজারিওর পাশে নাম লেখান এন্ড্রিক। কারণ পেলে, রোনালদোর পর তিনিই যে এখন জাতীয় দলে ডাক পাওয়া সর্বকনিষ্ঠ ব্রাজিলিয়ান।
ব্রাজিল ফুটবল ইতিহাস জুড়ে রয়েছে পেলে, রোমারিও, রোনালদোর খ্যাতি। তবে এই শতকে এসে যেন সর্বোচ্চ বিশ্বকাপজয়ী দলটা খেই হারিয়ে ফেলেছে। জন্মের পর কখনোই নিজ দেশকে বিশ্বকাপ জিততে দেখেননি এন্ড্রিক। সেটা পেলেও দেখেছিলেন না। তবে তাঁর হাত ধরেই এসেছিল তিন তিনটা বিশ্বকাপ। পেলের এমন ইতিহাসকে চাইলে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিতেই পারেন এন্ড্রিক। চাইলে ব্রাজিল ফুটবলের নতুন পেলে হয়ে হারানো গৌরব ফিরিয়েও আনতে পারেন।