‘সময়ই বলে দেবে, এই ছেলেটা কে হবে?’ এমনটাই বলেছিলেন ব্রাজিলের বর্তমান কোচ ডরিভাল জুনিয়র। এন্ড্রিক ফেলিপে ইংল্যান্ডের সাথে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে গোল করবার পর তেমনটি বলেছিলেন ব্রাজিলিয়ান কোচ। সময় গড়িয়েছে। এন্ড্রিক একটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টও খেলে ফেলেছেন। তাইতো সবার মনে জেগেছে সংশয়। সম্ভাবনার প্রদীপ জ্বলবে না বলেই ধারণার জন্ম নিয়েছে।
যুব পর্যায়ে গোলবন্যায় ভেসেছেন এন্ড্রিক। ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমেইরাসের একাডেমির হয়ে ১৬৭ ম্যাচে ১৬৫ গোল করেছিলেন তিনি। মুখে মুখে ছড়িয়ে গেল, তিনি হতে চলেছেন পরবর্তী পেলে। তারপর তো ইউরোপের জায়েন্ট খ্যাত রিয়াল মাদ্রিদ আনকোড়া এক ছোকড়ার পেছনে ৬০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে ফেলল।
কিন্তু সেই রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের মনে এন্ড্রিককে ঘিরে শুরু হয়েছে শঙ্কা। সেটা হওয়াও স্বাভাবিক। কেননা এন্ড্রিক যে ডাহা ফ্লপ ছিলেন ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকাতে। এমনকি মহা গুরুত্বপূর্ণ কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি পারফর্মই করতে পারেননি। মাত্র একটি পাস সফলভাবে দিতে পেরেছেন তিনি। ১৪ বার তার পা থেকে বল ছুটেছে। উরুগুয়ের বিপক্ষে তিনি একেবারে নাস্তানাবুদ হয়েছেন, ছিলেন দিশেহারা। ঠিক তখনই এন্ড্রিকের সক্ষমতা নিয়ে জেগেছে প্রশ্ন।
রিয়াল মাদ্রিদের কপালেও পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। তবে কি ভুল করে ফেললেন পেরেজ? হয়ত, কিংবা না। এন্ড্রিকের ফুটবলীয় দক্ষতা রয়েছে বেশ। খোদ ডোরিভাল জুনিয়র সে বিষয় নিয়ে বহুবার বলেছেন মিডিয়াতে। কিন্তু সমস্যা বয়সটা তার অল্প। যদিও অল্প বয়সের অনেকেই তো বাজিমাত করেছেন এবারের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে।
যার মধ্যে অন্যতম স্পেনের ১৭ বছর বয়সী লামিন ইয়ামাল। ঠিক সে কারণেও এন্ড্রিককে নিয়ে দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশার ধারেকাছেও ছিল না এন্ড্রিকের অবস্থান। গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোতে স্বল্প সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সেটাই বরং স্বাভাবিক। ব্রাজিল দলের নয় নম্বর জার্সি গায়ে চাপানো মানেই মহারথীদের জুতোয় পা গলানো।
সেটার একটা চাপ নিশ্চয়ই রয়েছে। তাছাড়া ব্রাজিলিয়ান লিগ আর ইউরোপের লিগগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার পার্থক্য নিশ্চয়ই আছে। ইয়ামাল এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের আগে বার্সেলোনায় প্রায় একটা মৌসুম ছিলেন নিয়মিত। তিনি বড় ম্যাচ, কঠিন প্রতিপক্ষ সামলে নেওয়ার মানসিকতা আগেই তৈরি করে ফেলেছেন। কিন্তু এন্ড্রিক এখন অবধি সে সুযোগটি পাননি।
আগামী ২৬ তারিখ জন্মদিনের ৫ দিনের মাথায় রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড় হিসেবে যাত্রা শুরু করবেন এন্ড্রিক। এরপর তিনিও হয়ত বড় ম্যাচ, কঠিন প্রতিপক্ষ সামলে নেওয়ার দীক্ষা পেতে শুরু করবেন। কিন্তু সেজন্য রিয়াল মাদ্রিদকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। মাদ্রিদ অল্পতেই হতাশ হয়ে যায় না। লস ব্লাঙ্কোসরা তো শেষ মুহূর্ত অবধি অপেক্ষা করে।
তেমনটাই করতে হবে এন্ড্রিকের জন্য। তাকে অল্প-বিস্তর সময় দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে। শুরুতেই মূল দলের একাদশের গুরুদায়িত্ব চাপিয়ে দাওয়া হতে পারে বোকামি। যেমনটা করা হয়েছিলেন কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে। শুরুর একাদশে নেমে, প্রত্যাশার চাপ মেটাতে পারেননি এন্ড্রিক। নকআউট ম্যাচ ও উরুগুয়ের মত শক্ত প্রতিপক্ষ তার স্নায়ুচাপকে করেছে দ্বিগুণ।
তরুণ এই ফুটবলার তাই নিজের সক্ষমতা বা দক্ষতার ছিটেফোঁটা প্রদর্শনও করতে পারেননি। রিয়ালে এসেও তিনি এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বেন সেটা বলার সময় এখনও অবশ্য আসেনি। সাদা জার্সিতে ভিনিসিয়াস জুনিয়রও তো প্রচণ্ড সংগ্রাম করেছেন ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে। এখন তো মাদ্রিদের প্রাণ-ভোমরা। এন্ড্রিকও হয়ত তেমন একজন হয়ে উঠবেন।
রিয়াল মাদ্রিদ তাই শঙ্কিত না হয়ে, সঠিক পরিকল্পনার ছক কষতে বসবে। তরুণ খেলোয়াড়দেরকে সেরা খেলোয়াড় বানানোর উদাহরণ তো ইতোমধ্যেই সৃষ্টি করেছে ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন ক্লাবটি। তাছাড়া ব্রাজিলিয়ান কোচ ডোরিভাল জুনিয়র বলেছেন, ‘সে অত্যন্ত দক্ষ’। স্রেফ বড় মঞ্চে পারফর্ম করতে হলে তার চাপ সামলে নেওয়াটা শেখা প্রয়োজন। সময়ের সাথে সেসব অবশ্যই শিখে নেবেন এন্ড্রিক।
রিয়ালের মাদ্রিদ সমর্থকদের তাইতো খুব বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই। এন্ড্রিক হয়ত ‘রেডিমেইড প্রোডাক্ট’ নন। কিন্তু তার মধ্যে একজন বিশ্বমানের তারকার হওয়ার সমস্ত রসদ রয়েছে। মাদ্রিদকে শুধু সেই রসদ গুলোকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। এন্ড্রিকের সকল দক্ষতাকে আরও খানিকটা শাণিত করতে হবে। তবে এন্ড্রিক পেলে না হোক একদিন এন্ড্রিক হয়ে উঠবেন।