আর্জেন্টিনা এবং বেনফিকার তরুণ মিডফিল্ড জাদুকরকে নিয়ে একটু বিস্তারিত আলাপ করি। এনজো ফার্নান্দেজ – তাঁর ট্যাাটিকাল দিক, তাঁর শক্তি, তার দূর্বলতা একটু তুলে ধরা যাক। তাঁর সবচেয়ে বড় স্ট্রেন্থ গুলো হলো তার পাসিং, ট্যাকলিং, প্রেসিং, ডিফেন্সিভ ওয়ার্করেট এবং পজিশনাল সেন্স।
এনজো দুর্দান্ত একজন বল পাসার। কিছুটা রিয়াল মাদ্রিদের টনি ক্রুসের মতো। বল পায়ে পুরো খেলা ডিকটেট করতে পারেন তিনি। অ্যাকুরেট লং পাসের মাধ্যমে এক উইং থেকে আরেক উইং এ দারুণভাবে বল সুইচ করতে পারেন।
এই মৌসুমে বেনফিকার হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দারুণ গ্রুপ স্টেজ ক্যাম্পেইনের মিডফিল্ড নিউক্লিয়াস ছিলেন এনজো। গড়ে প্রতি ম্যাচে ৯৯% পাস কমপ্লিট করেন, সাথে ৯৬ % অ্যাকুরেট লং বল।
কাতার বিশ্বকাপে লিওনেল স্ক্যালোনি তাঁর প্রুভেন ডিএম এনজো পারেদেসকে বসিয়ে কেন এই ইয়ং এনজোকে খেলিয়েছেন? কারণ, তাঁর মিডফিল্ড ডিকটেটরশিপ। তাঁর প্রেসিং, তাঁর ট্যাকলিং, তাঁর ডিফেন্সিভ অ্যাওয়ারনেস, তাঁর পজিশনিং। মর্ডান মিডফিল্ডারের আদর্শ উদাহরণ তিনি। যে কোনো টাইট পজিশনে বসে যেকোনো জায়গায় অ্যাকুরেট পাস দিয়ে কাউন্টার স্টার্ট করার দারুণ ক্ষমতা আছে তাঁর।
তিনি একাধারে নাম্বার সিক্স, নাম্বার এইটে খেলতে পারেন। বক্স টু বক্স খেলতে পারেন, আবার ডিপ লাইং প্লেমেকার হিসেবেও খেলতে পারেন। মাল্টিপল পজিশনে তার চমৎকার খেলার কারণ তাঁর ওয়ার্করেট, তাঁর ভিশন। মিডফিল্ডারদের মধ্যে এই দুই জিনিসের কম্বাইন্ড পাওয়া খুবই দুষ্কর৷
হোসে মরিনহোর একটা কথা আছে – ‘আপনাকে জানতে হবে ঠিক কখন পাস দিতে হবে আর কখন না, এই টাইমিংটা ফুটবলে খুব জরুরি।’ এনজোর আরেকটা স্ট্রেন্থ হলো তিনি তাঁর প্লেয়ারদের রান ম্যাচ করে পারফেক্ট টাইমে বল রিলিজ করতে পারেন৷
এনজো রিয়াল মাদ্রিদের, টেন হেগের ইউনাইটেড কিংবা ক্লপের সিস্টেমে দারুণ ভাবে ফিট হতে পারবেন। কারণ, তাঁরা ওয়াইডথ ক্রিয়েট করে খেলেন, বল সুইচিং তাঁদের খেলার অন্যতম অস্ত্র ৷ আর এনজো ওয়াইডথ ক্রিয়েট করা আর সুইচিংয়ের স্পেশালিষ্ট। ৩০০ ছোট পাস খেলার চেয়ে এরা ৩ টা অ্যাকুরেট লং পাস খেলা পছন্দ করেন।
রিয়াল মাদ্রিদের খেলাই দেখবেন শুধু এক উইং থেকে আরেক উইং এ বল সুইচ করে, ক্রস খেলে আর লং পাসে ওপনেন্ট কে হার্ট করে। এরিক টেন হেগ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেও এই সিস্টেম ইমপ্লিমেন্ট করছেন। এছাড়া এখন বড় দলগুলো ওয়ার্কিং অ্যানিমেল টাইপ মিডফিল্ডার প্রেফার করে।
এনজো ফাইনাল থার্ডে খুবই কম্পোজড, বল চিপ করে বক্সে দিতে পারেন। স্ট্রাইকারের রান রিড করতে পারেন। তাছাড়া এই বয়সে তিনি ডিফেন্সিভ কন্ট্রিভিউশনেও খুব ভালো। খুবই পরিশ্রমী, টপ লেভেলের ট্যাকেলার এবং ডুয়েলসে খুবই স্ট্রং। তার সাথে সে খুবই অ্যাগ্রেসিভ প্রেসার৷ যতক্ষণ খেলবেন প্রপার ইন্টেনসিটির সাথে খেলবেন।
মিডফিল্ডার হওয়া স্বত্বেও তিনি অনেক বড় অফেন্সিভ থ্রেট৷ ডেঞ্জারাস লং শট, বক্সের ভেতর দারুণ ক্রস করা – তিনি অনেক কিছুই অফার করেন। গত বছর আর্জেন্টাইন লিগে ২০ ম্যাচে ৮ গোল করেছেন।
এনজো ফার্নান্দেজের দূর্বল জায়গা হচ্ছে তার ড্রিবলিং অ্যাবিলিটি এবং বল ক্যারিং অ্যাবিলিটি। এনজো খুবই কম ড্রিবলিং অ্যাটেম্পট করেন, বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন দলের অন্যতম কম ড্রিবলিং অ্যাটেম্পট তাঁর। তাঁর বল ক্যারিং অ্যাবিলিটি কিছুটা দু:শ্চিন্তার বিষয়৷ প্রেস রেজিস্ট করে টাইট স্পেসে বল নিয়ে বের করার অ্যাবিলিটি ল্যাক করেন তিনি। তার বয়স খুবই কম, এই দুই জায়গায় উন্নতি করার সময় আছে তাঁর।
সবকিছুর শেষ কথা, এনজো এই অল্প বয়সেই একজন টপ লেভেলের ফুটবলার। একের ভেতর অনেকগুলো প্যাকেজ। একজন প্রপার ওয়ার্কিং অ্যানিমেল, সাথে দারুণ বল পাসার, চমৎকার ভিশন এবং দুর্দান্ত ডিফেন্সিভ কন্ট্রিবিউশন। যেকোনো টিমের জন্য ড্রিম মিডফিল্ডার।