চলছে প্রবীন যুগ

বলা হয়ে থাকে ক্রিকেটের সেরা ফর্মে থাকার বয়স নাকি ৩৫-এর নিচে। কিন্তু এই তত্ত্বকে ভুল প্রমান করেছেন অনেক ক্রিকেটার। বয়সকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৩৫ বছর বয়সের পরও ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহাতই কম নয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ক্রিকেটারদের বয়স ৩৫-৩৬ এর বেশি হলে তাদের জন্য বিদায় রাগিনী বাজানো শুরু করে দেয় ক্রিকেট সমর্থকরা। কিন্তু কিছু ক্রিকেটার এই বয়সের পরও পারফর্ম করে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। শুধু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট নয়, বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি লিগেও হট সিটে থাকেন এই সব ক্রিকেটার।

বয়সকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো এই সব ক্রিকেটার আরো কয়েক বছর নিজেদের পারফর্মেন্স আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং ফ্রাঞ্চাইজি লিগে দেখাবেন এই আশা আমরা করতেই পারি। এই আশা করার বিষয়টা শুধু তাঁদের নামের উপর বিবেচনা করা হয় নাই, তাঁদের পারফরম্যান্সের উপরেই বলা হয়ে থাকে।

  • মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান)

পাকিস্তানের ওপেনিং ব্যাটসম্যান এবং ডান হাতি অফ স্পিন বোলার। পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক ২০০৩ সালে। একই বছর আগস্টে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। কিন্তু ক্যারিয়ারের প্রথম সাত বছরে জাতীয় দলে আসা যাওয়ার মধ্যে ছিলেন এই অলরাউন্ডার।

অভিষেকের প্রায় সাত বছর পর ২০১০ সালে জাতীয় দলে নিয়মিত হন মোহাম্মদ হাফিজ। ২০১১ সালে তৃতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে এক হাজার রান এবং ৩০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন। এর আগে এই রেকর্ডের অংশীদার ছিলেন কিংবদন্তী দুই অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস এবং সনাথ জয়াসুরিয়া। দলের প্রয়োজনে যেকোনো ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারেন হাফিজ। হাফিজকে সাধারণ ক্রিকেট প্রেমীরা দূর্দান্ত মারাকাটারী ব্যাটসম্যান হিসেবে চিনলেও তাঁকে যেকোনো পরিচয়েই দলের প্রয়োজনে খেলতে দেখা যায়। মারকাটারী ব্যাটিং থেকে ধীরগতির ব্যাটিং সব ভাবেই খেলতে পারেন হাফিজ। বোলিং এ খুব বেশি বৈচিত্র না থাকলেও লাইন এবং লেন্থ মেনে বোলিং করেও বেশ সফল হাফিজ।

২০০৩ সালে অভিষেকের পর থেকে এখনো ক্রিকেটে নিয়মিতই খেলে যাচ্ছেন ৪০ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। এছাড়াও পকিস্তানের জাতীয় দলের বিপদের সময় হাল ধরার জন্য এখনও বট বৃক্ষের মত দাড়িয়ে আছেন মোহাম্মদ হাফিজ।

  • ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

‘ইউনিভার্স বস’ নামে খ্যাত ক্রিস গেইল। টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা এই ব্যাটসম্যান এখনো যেকোনো ফ্রাঞ্চাইজি লিগে সব দলের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে থাকেন। ৪১ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের ব্যাটের জাদুতে এখনো মুগ্ধ থাকে ক্রিকেট বিশ্ব। বয়সের হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বের কাছে হয়তো অনেক আগেই ফেলনা হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো তাঁর। কিন্তু এখনো ক্রিকেট মাঠে যে রকম পারফর্ম করে যাচ্ছেন তাতে মনে হয় না অতি শীঘ্রই ক্রিকেট মাঠ থেকে বিদায় নিচ্ছেন তিনি।

১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন ক্রিস গেইল। পরের বছরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নাম লেখান গেইল। তার সময়ে জাতীয় দলে খেলা সমবয়সী বেশিরভাগ ক্রিকেটারই অনেক আগেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। কিন্তু এখনো খেলে যাচ্ছেন ক্রিস গেইল। যদিও জাতীয় দলে নিয়মিত নন, তবুও ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মাধ্যমে এখনও বিনোদন দিয়ে যাচ্ছেন ক্রিকেট বিশ্বকে।

  • জেমস অ্যান্ডারসন (ইংল্যান্ড)

টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের সেরা পেসার জেমস অ্যান্ডারসন। ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ করেছেন ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে। পরের বছরই ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাটে নাম লেখান অ্যান্ডারসন। প্রায় একই সময়ে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া মার্ক ট্রেসকোথিক, মাইকেল ভোগান, স্টিভ হামির্সনরা ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন দীর্ঘ দিন পূর্বেই। কিন্তু ব্যতিক্রমী হিসেবে এখনো খেলে যাচ্ছেন জেমস অ্যান্ডারসন।

ক্রিকেটে ছোটো সংস্করণগুলোতে সর্বশেষ মাঠে নেমেছিলেন প্রায় ৬ বছর পূর্বে। এরপর থেকে শুধুমাত্র খেলে যাচ্ছেন টেস্ট ক্রিকেট। টেস্ট ক্রিকেটে বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখিয়ে যেভাবে একের পর এক রেকর্ড নতুন করে করছেন তাতে অতি শীঘ্রই জাতীয় দল কিংবা ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছেন বলে মনে হয়না। আরো কয়েক বছর বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখালে তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

  • শোয়েব মালিক (পাকিস্তান)

শোয়েব মালিকের পরিচয় নতুন করে দেবার মত কিছু নেই। কয়েকবারই তাঁর ক্যারিয়ারের সমাপ্তি দেখে ফেলেছিলেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। কিন্তু একবারও ক্রিকেটকে বিদায় জানাননি শোয়েব মালিক। বরঞ্চ ক্রিকেট মাঠে আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন তিনি।

২০১০ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হবার পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন তিনি আর কখনোই জাতীয় দল কেন কোনো ধরনের ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন না। কিন্তু তিনি ফিরেছেন শুধু ফেরেননি। নিজেকে আবারো প্রতিষ্ঠা করেছেন দলের অপরিহার্য সদস্য হিসেবে।

২০০১ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক শোয়েব মালিকের। কিন্তু কখনোই জাতীয় দলে নিয়মিত হতে পারেন নি। কিছুদিন জাতীয় দলে খেলেছেন আবারো বিভিন্ন কারণে বাদ পড়েছেন। এইভাবেই চলছে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার। ক্রিকেট সব অবস্থানে ব্যাটিং করার রেকর্ডও আছে শোয়েব মালিকের।

জাতীয় দলে নিয়মিত না হলেও ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে শোয়েব মালিকের অপরিহার্যতা কোনো অংশেই কমেনি। বিশ্বের প্রায় সব ফ্রাঞ্চাইজি লিগে খেলেছেন এবং খেলে বেড়াচ্ছেন শোয়েব মালিক। যে ফর্মে তিনি ক্রিকেট মাঠে দাপট দেখাচ্ছেন তাতে খুব নিকটবর্তী সময়ে ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন বলে মনে হয় না।

  • দিলরুয়ান পেরেরা (শ্রীলঙ্কা)

শ্রীলংকা দলের অপরিহার্য সদস্য দিলরুয়ান পেরেরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০০৭ সালে। কিন্তু শ্রীলংকার ওই প্রজন্মের ক্রিকেটারদের কারণে জাতীয় দলে নিয়মিত হতে পারেননি। কিন্তু ঘরোয়া লিগগুলোতে পারফর্ম করে গেছেন নিয়মিত। অবশেষে শ্রীলংকা ক্রিকেটের সোনালী প্রজন্মের বিদায়ের পর জাতীয় দলে নিয়মিত হতে শুরু করেন দিলরুয়ান পেরেরা।

৩৮ বছর বয়সে এসেও জাতীয় দলকে যেভাবে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন তাতে অতি শীঘ্রই ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কোনো সম্ভাবনা নেই তাঁর।

  • ইমরান তাহির (দক্ষিণ আফ্রিকা)

পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার ইমরান তাহির। তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে জাতীয় দলে অভিষেক ২০১০ সালে। এখন পর্যন্ত প্রোটিয়াদের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তিনি। বয়স ভিত্তিক দলে খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে। ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বশেষ মাঠে নামেন তিনি। কিন্তু এখনো খেলে যাচ্ছেন বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি লিগের ম্যাচ। ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে যে ফর্মে খেলে যাচ্ছেন তাতে অল্প সময়ের মধ্যে ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন বলে মনে হয় না।

 

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link