সেই পান্ত, এই পান্ত!

বয়সটা সবে মাত্র চব্বিশ। ঋষাভ পান্ত এরই মধ্যে নজর কেড়েছেন ভারতের অন্যতম নামজাদা ব্যাটার হিসেবে। পাশাপশি মহেন্দ্র সিং ধোনির উত্তরসূরির কাজটাও করে থাকেন। মানে দলের উইকেট রক্ষণের দায়িত্বটা আরকি। কৈশোরে নাকি এই ছেলেটি ছিলেন ভীষণ রগচটা স্বভাবের। আর তাই নাকি রাজেন্দ্র পান্ত ও সরোজ পান্ত দম্পতি রাগের টোটকা হিসেবে তাদের পুত্রকে পাথর দিয়ে একটি ব্রেসলেট বানিয়ে দিলেন।

যা আজ অব্দি তাঁর হাতে শোভা পায়। তাদের বিশ্বাস এই পাথর গুনে ছেলের রাগ নিয়ন্ত্রণ হবে। তা সে পাথরের গুণই হোক কিংবা পান্তের নিজের আত্মসংযমের তাড়না থেকেই হোক, তিনি বদলেছেন। দিনে দিনে নিজেকে ক্রিকেটের মাঠে ও মাঠের বাহিরে আরও পরিপক্ব করে তুলেছেন।

এইযে গেল রবিবারের কথাই ধরা যাক। ম্যানচেস্টারে ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ঋষভ পান্ত তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি তুলে নিলেন।

যশ বাটলারদের দেয়া ২৬০ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হলেও পঞ্চম উইকেটে ঋষাভ পান্ত ও হার্দিক পান্ডিয়া ভারতকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। কি দারুণ শান্ত ভঙ্গিতে অথচ কি দাপটের সাথে ব্যাটিংয়ে ঝড় তুললেন ঋষাভ পান্ত!

পান্ত ভারতের ব্যাটিংয়ে প্রশান্তির অনুভূতি এনে দিলেন। ১১৩ বলে ১২৫ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন তিনি। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে নিয়েছেন দু’টি উইকেটও। তাই ম্যান অব দ্য ম্যাচের তকমাও জুটলো তাঁর ভাগ্যেই। পান্ত ও পান্ডেয়ার শক্তিশালী জুটিতে ৪২.১ ওভারের মাথায় টার্গেট পূর্ণ করে ফেলে ভারত। ৪৭ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে নিল ভারত।

মজার ব্যাপার হলো, যেই মাঠে তিন বছর আগে পান্তের গায়ে বেপরোয়া ব্যাটারের তকমা জুটেছিল, সেই মাঠেই পান্ত দেখিয়ে দিলেন ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিংটা তিনি চাইলেই করতে পারেন এখন। সেই সময়টায় পান্তের শট সিলেকশন নিয়ে বেশ সমালোচনা ছিল।

বছর তিনেক আগে ম্যানচেস্টারের এই মাঠেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার মিচেল স্যান্টনার এর ডেলিভারিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন। ওই শট নিয়ে পান্ত নিজেও পরে অনুতপ্ত ছিলেন।

কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বষজ্ঞরা তাঁকে উদাসীন ও অসতর্ক ইত্যাদি বলে সমালোচনা করতে এক চুলও ছাড় দেন নি। সেই পান্তই একই মাঠে তিন বছর পর জবাবটা দিলেন। দেখিয়ে দিলেন তিনি কতটা পরিণত ব্যাটার এখন। সেই পান্তই ইংল্যান্ড সফর শুরু করলেন এজবাস্টন টেস্টে সেঞ্চুরি দিয়ে আর ম্যানচেস্টারে সেঞ্চুরি দিয়েই ইংল্যান্ড যাত্রার ইতি টানলেন।

ক্যারিয়ারের ৩১ টি টেস্টে তিনি পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছেন এখন অবধি। কিন্তু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বড় ইনিংস খেলতে না পারা নিয়ে নানা সময়েই উঠেছে প্রশ্ন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম এই সেঞ্চুরি করে ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান হয়তো বার্তা দিলেন, এইতো সবে শুরু! আরও আসবে! 

২০১৯ সালে কোন এক সাক্ষাৎকারে তিনিই বলেছিলেন, ‘ব্যাপারগুলি রাতারাতি বদলে যাবে না। আমার বয়স মাত্র একুশ, আমি চাইলেই ত্রিশ বছর বয়সীদের মতো করে ভাবতে পারবো না। যথাসময়ে আমার মন আরও শক্তিশালী হবে এবং আমার পরিপক্বতা আসবে।’

কথা রেখেছেন ঋষাভ পান্ত। যেমনটি তিনি বলেছিলেন, তেমনটিই করে দেখিয়েছেন। সময়ের সাথে সাথে তিনি যে কত শক্তিশালী একজন ব্যাটার হয়ে উঠেছেন তা ইংল্যান্ড সিরিজে তাঁর পারফরম্যান্সই সাক্ষ্য দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link