সকালে শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদদের সাথে মিরপুরের নেটে বোলিং করছেন। নিজের গতি দিয়ে এনামুল হক বিজয়, মুনিম শাহরিয়ারদের ব্যাট কাঁপিয়ে তুলছেন। বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদ নিজে সাক্ষী দিচ্ছেন এই ছেলে আরেকটু কাজ করলেই ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করতে পারবে। অথচ এই ছেলেটাই আবার বিকেল হলে একেবারে ভিন্ন রূপে, ভিন্ন চরিত্রে।
সকালবেলা যিনি ক্রিকেটার বিকেলে তিনি হয়ে যান ফুড ভেলিভারি ম্যান। জীবিকার জন্য এবং ক্রিকেট খেলার স্বপ্নটা বাচিয়ে রাখার জন্যই তাঁকে একবেলা কাজ করতে হয় ফুডপান্ডায়। নরসিংদী থেকে ক্রিকেট খেলার জন্য চলে এসেছেন ঢাকায়। আবাহনী মাঠের একটা অ্যাকাডেমিতে অনুশীলনও করেন। তবে ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া করে থাকার জন্য তো টাকার প্রয়োজন। আর সেই প্রয়োজন মেটাতেই বিকেলে আবার ছুটতে হয় সাইকেল নিয়ে, মানুষের দ্বারে দ্বারে।
আগে জেনে আসা যাক ক্রিকেটার তৌহিদুল ইসলাম সিয়ামের গল্প। মানে সকালবেলা সিয়াম যে চরিত্রটা পালন করেন। সিয়ামের পেস বোলিং দেখতে আবাহনী মাঠে গিয়েছিল খেলা-৭১। সেখানেই সিয়ামের সাথে কথা হয়েছে তাঁর ক্রিকেট জীবন নিয়ে।
ঘুম থেকে উঠেই সিয়াম বেরিয়ে পড়েন বল হাতে। সকালে বল হাতে শুরু হয় তাঁর ছুটে চলা। তবে সিয়ামের ক্রিকেট জীবনটা শুরু হয় নরসিংদী থেকে। এরপর ক্রিকেটের টানে গত বছর ছুঁটে এসেছেন ঢাকায়। নতুন একটা শহরে এসে খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। কোন রকমে থাকা খাওয়ার একটা ব্যবস্থা হয়েছে ফুডপান্ডায় ডেলিভারির কাজ করে।
তবুও সুযোগ পেলেই এদিক ওদিক নেটে বোলিং করেন। এমনকি মিরপুরে এনামুল হক বিজয়, মুনিম শাহরিয়ারদেরও নেটে বোলিং করেছেন। সিয়াম বলছিলেন, ‘ঢাকায় আসার পর তো কোথাও খেলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। তাও বিভিন্ন জায়গায় নেটে বোলিং করতে থাকি। গত মাসে মিরপুরেও নেট বোলিং করেছি। নেটে বোলিং করলে অনেক সময় দুই তিনশ টাকা পাওয়া যায়। তাহলে আর ফুডপান্ডায় কাজ করা লাগেনা।’
কিন্তু প্রতিদিন কী আর নেট বোলিং করার সুযোগ হয়। ফলে ঢাকা শহরে বেচে থাকার জন্য তাঁকে কাজের খোঁজে বের হতে হয়। জীবন যুদ্ধে লড়াই করার একটা রাস্তা বের করতে হয়। আর সিয়ামের জীবনের এই মূল গল্পটা শুরু হয় বিকেলবেলা। সকালে অনুশীলন শেষ করে নিজেকেই আবার রান্না করতে হয়ে।
খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম বা জিম করার সুযোগ তাঁর নেই। কেননা তাঁকে আবার নামতে হয় বেঁচে থাকার লড়াইয়ে। সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন ফুড ডেলিভারির কাজে। একজন পেস বোলারকে দিনটা শেষ করতে হয় প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে।
তবুও অদম্য শক্তির জোরে পরেরদিন আবার বল হাতে নিয়ে বের হন তিনি। কেননা সিয়াম ঢাকা শহরে এসেছিলেন একটা স্বপ্ন নিয়ে। ক্রিকেট খেলবেন বলে, পেস বোলার হবেন বলে।
তবে এই কাজ করে শুধুই ক্রিকেটটা তাঁর খেলা হচ্ছেনা। একজন পেসার হিসেবে নিজের শরীরে যে পরিমান খাবার বা বিশ্রাম দিতে হয় সেটাও তিনি পারছেন না। সেজন্যই মাঝে মাঝে নেটে বোলিং করার সুযোগ আসলে চলে যান। কেননা নেটে বল করতে দিনশেষে অল্প কিছু টাকা পাওয়া যায়। সেজন্যই সিয়াম বলছিলেন দুই-তিনশো টাকার জন্য তিনি প্রয়োজন হলে সারাদিন বোলিং করতে রাজি আছেন। একজন পেসারের এই আকুতি কী কেউ শুনবেন?