দ্বিতীয় জীবনে নবযৌবন

যে সময়ে এসে প্রতিটা ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার নিভুনিভু করে ঠিক সেই সময়ে পুনর্জন্ম হয়েছে ফাওয়াদ আলমের ক্যারিয়ার। দীর্ঘ ১১ বছর পর ৩৫ বছর বয়সে পুনরায় জাতীয় দলে ফিরে দারুণ ছন্দে রয়েছেন পাকিস্তানি এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জ্যামাইকা টেস্টে তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। এর চারটিই ফেরার পর গত চার সিরিজে।

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় ফাওয়াদ আলমের। ফাওয়াদ প্রথম ইনিংসে ১৬ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন ১৬৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। কিন্তু পরের দুই ম্যাচের চার ইনিংসে করেন মাত্র ৬৬ রান। এরপরই দল থেকে পড়েন তিনি। পুনরায় আবার সুযোগ পান ১১ বছর পর গত বছরের মার্চে। দীর্ঘ ১১ বছর পর দলে ফিরেও হতাশ করেন ফাওয়াদ।

প্রত্যাবর্তনের ইনিংসে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হওয়ার পর পরের তিন ইনিংসে করেন যথাক্রমে ২১, ০, ৯ রান। তবে এবার খারাপ করার পর আর তাঁর উপর ভরসা হারায়নি পাকিস্তান। টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দিতেও বেশি সময় নেননি এই ব্যাটসম্যান। পরের টেস্টেই ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে যান ফাওয়াদ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ১০২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।

এর পরের দুই সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও সেঞ্চুরির দেখা পান এই ব্যাটসম্যান। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ১০৯ রানের ইনিংস খেলার পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেন ১৪০ রানের ইনিংস। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেন ১২৪ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ হয়নি।

দীর্ঘ দিন পর ফিরে এমন পারফরম্যান্সের রহস্য কি? দীর্ঘ এই বিরতিতে নিজকে কী ভাবে প্রস্তুত রেখেছেন তিনি। জানতে চাওয়া হয়েছিল ফাওয়াদের কাছে। এই ব্যাটসম্যান জানিয়েছেন তাঁর বাবাও একজন ক্রিকেটার ছিলেন। তাঁর বাবার ক্যারিয়ারও উত্থান পতনের ভিতর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। তাই কঠিন সময়ে বাবার কথা শুনে এবং মেনেই অনুপ্রেরণা নিয়েছেন তিনি।

ফাওয়াদ জানিয়েছেন পরিবারের সমর্থনেই এ ভাবে ফিরে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার অনুপ্রেরণা আমার বাবা। তিনিও একজন ক্রিকেটার ছিলেন এবং তিনিও তার ক্যারিয়ারে উত্থান পতনের ভিতর দিয়ে গেছে। তাই আমার কঠিন সময়ে তাঁর কথা শুনেছি ও মেনেছি। আমাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য সব সময় আমার পরিবারের প্রয়োজন।’

শুধু ফেরার আগেই নয়। ফেরার পরেও বাবা মার থেকে দারুণ সমর্থন পাচ্ছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ফাওয়াদ জানিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই ম্যাচের আগেই নাকি তাঁর মা তাকে বলেছিলেন যে তিনি সেঞ্চুরি পাবেন। তাঁর বাবাও বলেছিল ইনিংস বড় করতে। শেষ পর্যন্ত তাই করেছেন তিনি।

ফাওয়াদ বলেন, ‘যখন বৃষ্টি হয়, জোরেই হয়। আমার মা এই ম্যাচের প্রথম দিনের আগে ফোন করেছিলো। সে বলেছিলো যে আমি সেঞ্চুরি করতে পারবো। আমার জানা নেই সে এটা কি ভাবে জানতো। আমার বাবাও কথা বলেছিলো, সে চেয়েছিল আমি আমার রানটা বাড়াই।’

জ্যামাইকা টেস্টে ফাওয়াদ যখন ব্যাট করতে নামেন তখন ২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে ছিল পাকিস্তান। সেখান থেকেই চতুর্থ উইকেটে বাবার আজমের সাথে ১৬৫ রানের জুটি গড়ে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলেন। ফাওয়াদ জানিয়েছেন বাবরের সাথে এই ভাবে আরো অনেক দিন খেলে পাকিস্তানকে ভালো একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে চান তিনি।

ফাওয়াদ বলেন, ‘আমরা ২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ছিলাম এবং কন্ডিশনও খুব কঠিন ছিল। প্রচুর গরম ছিল। আমাদের উপর বড় রান করার চাপ ছিল। আমি এবং বাবর যত দিন সম্ভব খেলতে চাই এবং দলকে ভালো একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।’

প্রত্যাবর্তনের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন ফাওয়াদ। সেঞ্চুরির পর উৎযাপনেও ছিল ভিন্নতা। ঐ সফরের প্রস্তুতি ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছিলেন ফাওয়াদ। এই ব্যাটসম্যান জানিয়েছেন প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পর আজহার আলীর সাথে কথা বলেছিলেন টেস্ট সিরিজে সেঞ্চুরি করলে কেমন করে উৎযাপন করবেন। সেঞ্চুরি করার পর সেটাই করেছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আজহার এবং আমি নিউজিল্যান্ডে চার দিনের অনুশীলন ম্যাচ খেলেছিলাম এবং আমি একটি সেঞ্চুরি করেছিলাম। ঐ ম্যাচের পরে আজহার এবং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা টেস্ট সিরিজে সেঞ্চুরি করলে আমাদের কীভাবে উদযাপন করা উচিত। তাই যখন আমি সেঞ্চুরি করেছিলাম আমার ওটা মনে হয়েছিল এবং আমি সেটাই করেছিলাম।’

পাকিস্তানের হয়ে এখন পর্যন্ত ১৩ টেস্টের ২২ ইনিংসে ৪৭.১১ গড়ে ৮৯৫ রান সংগ্রহ করেছেন ফাওয়াদ। আর ৩৮ ওয়ানডেতে ৪০.২৫ গড়ে ৭৪.৪৮ স্টাইকরেটে এই ব্যাটসম্যান করেছেন ৯৬৬ রান। ২৪ টি-টোয়েন্টিতে ফাওয়াদের ব্যাট থেকে এসেছে ১১৪.৭৯ স্টাইকরেটে ১৭.৬৪ গড়ে ১৯৪ রান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link