১৯ মিনিটে হাফ সেঞ্চুরি, ৪০ মিনিটে গিয়ে সেঞ্চুরি। হাফ সেঞ্চুরি হয় ১৬ তম বলে, আর সেঞ্চুরির মাইলফলক আসে ৩১ তম বলে – ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছিল মোটে একবার।
জি ঠিকই ধরেছেন। বলছি এবি ডি ভিলিয়ার্সের কথা। দিনটি ছিল ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। সেদিন ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রততম সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছে যান এই প্রোটিয়া। ইনিংস শেষ করেন ৪৪ তম বলে গিয়ে। ততক্ষণে ১৬ টি চারের সৌজন্যে করে ফেলেছেন ১৪৯ রান! পুরো ইনিংসটার মেয়াদ ছিল ৫৯ মিনিটের – এটাকে ঝড় বললেও আসলে কম বলা হয়।
ডি ভিলিয়ার্স ক্রিজে আসেন ৩৯ তম ওভারে। সেখানে দাঁড়িয়ে একটা ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরির চেয়ে বেশি কিছু আশা করছিল না টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু, ভিলিয়ার্স যা করে গেছেন তা ছিল এক কথায় অবিশ্বাস্য।
ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির ইতিহাস ঘাটতে একটু পেছনে ফিরে তাকাতেই হবে। ১৯৯৬ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৬ বছর বয়সী শহীদ আফ্রিদি। পাকিস্তানি তারকার এই রেকর্ডটা অক্ষত ছিল দীর্ঘ ১৭ বছর। এরপর সেটা ভাঙেন এই কোরি অ্যান্ডারসন।
২০১৪ সালে, বছরের প্রথম দিনই তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করে তাঁক লাগিয়ে দেন। ১৭ বছরের পুরনো রেকর্ড ভাঙার পরও অবশ্য অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ার খুব বেশি লম্বা হয়নি। অ্যান্ডারসনের রেকর্ডটাও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
বছর খানেকেরে মধ্যেই অ্যান্ডারসনকে টপকে যান ডি ভিলিয়ার্স। তিনি পাঁচ বলের ব্যাবধানে হারান অ্যান্ডারসনকে, সেঞ্চুরি তুলে নেন মাত্র ৩১ বলে। প্রতিপক্ষ যথারীতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই রেকর্ড আজও অক্ষত আছে।
ডি ভিলিয়ার্সের কীর্তি গড়ার সেই ম্যাচটাকেও দিব্যি ইতিহাসের পাতায় রাখা যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ম্যাচে প্রথমে তিনি দ্রুততম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙেন। লঙ্কান দানব ‘মাতারা হারিকেন’ খ্যাত সনাথ জয়াসুরিয়া সেই ১৯৯৬ সালে হাফ সেঞ্চুরি করেন ১৭ বলে। এবার ডি ভিলিয়ার্স তাঁর চেয়ে এক বল কম খেলেই মাইলফলকে পৌঁছান, এর সাথে ওয়ানডে ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা তো আছেই।
সেই ম্যাচে আরো দুই প্রোটিয়া সেঞ্চুরি করেন। তারা হলেন হাশিম আমলা (১৪২ বলে ১৫৩) ও রাইলি রুশো (১১৫ বলে ১২৮)। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে একই ম্যাচে একই দলের তিন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি পাওয়ার সেটাই একমাত্র নজীর। সেদিন মাত্র চারজন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান মাঠে নেমেছিল, তার মধ্যে তিন জন বল মোকাবেলা করার সুযোগ পেয়েছিল, তিনজনই করেছিল সেঞ্চুরি।
এমন ম্যাচে স্বাভাবিক ভাবেই রানের পাহাড়ে উঠেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বোর্ডে জমা করেছিল ৪৩৯ রান। জবাবে ক্যারিবিয়ানরা জোহানেসবার্গের সুপার স্পোর্ট পার্কে ধারের কাছেও পৌঁছায়নি। সাত উইকেট হারিয়ে করেন ২৯১ রান।
সেই ফর্ম নিয়ে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও এবি ডি ভিলিয়ার্স। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রোটিয়ারা নিজেদের ইতিহাসের সম্ভাব্য সেরা দল নামিয়েছিল। কিন্তু, শেষটা সুন্দর হয় নি। সেমিফাইনালে অন্তিম মুহূর্তে গিয়ে তাঁরা হারে নিউজিল্যান্ডের কাছে। এবি ডি ভিলিয়ার্সের ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপের আক্ষেপ এখনও ঘুচেনি।
একটা মজার তথ্য দিয়ে শেষ করি। সেদিন ইনিংসটা খেলতে অনেকটা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন অধিনায়ক ভিলিয়ার্স। অধিনায়ক হিসেবে তাঁর চাওয়া ছিল খেলতে নামেন ডেভিড মিলার। তবে, তৎকালীন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো চাচ্ছিলেন ভিলিয়ার্সকে। বাকিটা ইতিহাস!
ডি ভিলিয়ার্স বলেন, ‘আমি মাঠে নামার আগে চার-পাঁচকার রাসেল ডোমিঙ্গোকে জিজ্ঞেস করেছি, তুমি নিশ্চিত আমারই যাওয়া উচিৎ, ডেভিড মিলারের নয়? বারবারই তিনি বলেছেন, হ্যাঁ আমি নিশ্চিত। সুলিমান বেন যখন আক্রমণে আসলো, তখন আমি আবারও গিয়ে বলি, এখন তো ওকে পাঠানো দরকার। জবাব আসে, আরে না – তুমিই যাচ্ছ। রাসেল মনে করেছিল আমি মোমেন্টামটা ধরে রাখতে পারবো। তবে, আমার মনে হয়েছিল আমার চেয়ে কাজটা ডেভিড ভাল করবে। তবে, পরে বুঝি এটা আমার দিন ছিল।’