ভেঙ্কটেশ আইয়ারের নয় ছয়ে ‘নয় ছয়’ মুম্বাইয়ের বোলাররা— শিরোনামটা এমন হলেও বোধহয় মন্দ হতো তেমন! কারণ শিরোনাটায় অসত্য যে কিছুই নেই। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এ দিন মুম্বাইয়ের বোলারদের উপর ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে রীতিমত ছক্কার পসরা সাজিয়েছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের ভেঙ্কটেশ আইয়ার।
গুণে গুণে নয় খানা ছক্কা মেরেছেন, তাতেই চুয়ান্ন! আর চার মেরেছেন ছয়টা। এতেই ৫১ বলে ১০৪ রানের ইনিংস সাজিয়েছেন এ ওপেনিং ব্যাটার।
মুম্বাইয়ে আজকের ম্যাচের শুরুটা হয়েছিল অন্যরকম এক আবহের মঞ্চায়নে। শচীন টেন্ডুলকার মুম্বাইয়ের ডাগআউটে আছেন। একই জায়গায় আছেন তাঁর ছেলে অর্জুন টেন্ডুলকারও। তবে দৃশ্যটা অনবদ্য হয়ে উঠলো যখন ঘোষণা এলো, শচীনপুত্র আজকের ম্যাচে খেলছেন।
আইপিএলের ইতিহাসের পিতা-পুত্রের ভিন্ন সময়ে মাঠে নামা এটাই যে প্রথম। এমন মুহূর্তে তাই মুম্বাইয়ে গ্যালারি এক মুহূর্তের জন্য হয়ে উঠল অনন্য এক উচ্ছাসের কারণ।
এমনিতেই শচীনপুত্র বলে লাইমলাইট আগে থেকেই পেতেন অর্জুন। এবার সরাসরি আইপিএলের একাদশে। তাই দিনের শিরোনামে অর্জুনের নামটা ট্রেন্ডিংয়ে উঠে গেছিল তখনই। তবে অর্জুনের এমন স্মরণীয় দিনটা যেন নিজের নামেই লিখতে চাইলেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার।
ঝড়ের পূর্বাভাসটা দিলেন ঐ অর্জুন টেন্ডুলকারের ওভারেই। প্রথম ওভারে মাত্র ৫ রান হজম করা নিজের দ্বিতীয় ওভারেও নিয়ন্ত্রিত বল করছিলেন। কিন্তু ভেঙ্কটেশ আইয়ার তা ভণ্ডুল করে দিলেন কিছুক্ষণ বাদেই। সে ওভারের পঞ্চম বলে চার দিয়ে শুরু। এরপরের বলে ছক্কা দিয়ে ওভারের শেষ।
ব্যাস, নিজের বোলিং স্পেলে আগের ১০ বলে ৭ রান দেওয়া অর্জুন ভেঙ্কটেশ আইয়ারের কাছে এ দুই বলেই হজম করলেন ১০ রান। আর ভেঙ্কটেশ আইয়ারের অমন ব্যাটিং তোপের সামনে পরবর্তীতে শচীন পুত্রকে আর বলেই আনলেন না।
অবশ্য আইয়ারের সামনে এ দিন টিকতে পারেননি কোনো বোলারই। এক পিয়ুষ চাউলা ছাড়া কেউ সামান্য প্রতিরোধও গড়তে পারেননি। সবার বোলিং ফিগার শেষ হয়েছে চূড়ান্ত হতাশায়। আর মুম্বাইয়ের বোলারদের হতাশার দিনে ভেঙ্কটেশ আইয়ার চার ছক্কা মেরেছেন অনেকটা আয়েসি ভঙ্গিতেই।
ঝড়ো ব্যাটিং করেছেন একদম প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। নিজের ফিফটি পূরণ করেন ২৩ বলে। আর সেঞ্চুরির জন্য হেঁটেছেন পায় একই গতিতে। ৪৮ বলে পৌঁছে যান তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগারে।
আর এখানেই ভেঙ্কটেশ আয়ার নিয়ে গেছেন কেকেআরের ইতিহাসে। আইপিএলের ইতিহাসের প্রথম ম্যাচে কলকাতার হয়ে সেই যে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম সেঞ্চুরি করেছিলেন, এরপর আর কেকেআরের হয়ে আর সেঞ্চুরি করতে পারেননি কোনো ব্যাটার। ১৫ বছরের সেই দীর্ঘ অপেক্ষাটা এবার ঘুচলো ভেঙ্কটেশ আইয়ারের কল্যাণে।
রাইলি মেরেডিথের বলে আউট হয়ে শেষ পর্যন্ত এ দিনে ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ইনিংস শেষ হয় ১০৪ রানে। তবে ততক্ষণে তাঁর ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। অবশ্য, ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ব্যাটিং তাণ্ডবে এ দিন আড়াল হয়েছে কলকাতার অন্যান্য ব্যাটারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা।
দলের ১৮৫ রানের মধ্যে ১০৪ রানই এসেছে আইয়ারের ব্যাট থেকে। এ ছাড়া কলকাতার হয়ে এ দিন ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলতে পারেননি একজনও। টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডার- কারো ব্যাটেই দেখা মিলেনি স্বস্তির ছাপ।
শেষদিকে আন্দ্রে রাসেল ২১ রানের ছোট একটি ক্যামিও খেলেছিলেন। এই যা আরকি। এ বাদে মুম্বাই পেসারদের হতাশায় ভাসিয়েছেন ঐ ভেঙ্কটেশ আইয়ার একা নিজেই। আইয়ার নামক ওয়ান ম্যান শো’তেই এ দিন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নেমে এসেছিল এক ছক্কাবৃষ্টি!