ভারত বধের অনন্য কাব্য

আগের ম্যাচেই তাঁর ওয়ানডে অভিষেক হয়! এর আগে তাকে কেউ ভালোভাবে চিনতো না পর্যন্ত। পাকিস্তানের বিপক্ষে হুট করেই টি-টোয়েন্টি অভিষেক এরপর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে। আর অভিষেকেই ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে শিকার করেন পাঁচ উইকেট৷

তাঁর কাটার বিষে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ছিলেন অসহায়। সেই ব্যর্থতা ভুলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। দিন বদলালেও ভাগ্য বদলায়নি ভারতের! আগের ম্যাচের সেই তরুণ তুর্কি এই ম্যাচেও ভারতের জন্য ত্রাস হয়ে এলেন। এবার শিকার করলেন ছয় উইকেট! সেই সাথে পেলেন ‘কাটার মাস্টার’ খ্যাতি।

বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশি পেসার ‘কাটার মাস্টার’ খ্যাত মুস্তাফিজুর রহমানের কথা বলছি। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে পাঁচ উইকেট শিকারের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও ছয় উইকেট শিকার করেন। সেই সাথে তার ম্যাজিকেল বোলিং পারফরম্যান্সে প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয় করে বাংলাদেশ।

২১ জুন, ২০১৫।

মিরপুরে হোম অব ক্রিকেটে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। আগের ম্যাচের নায়ক মুস্তাফিজ ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই তুলে নেয় ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মাকে। এরপর বিরাট কোহলি ও শিখর ধাওয়ানের ৭৪ রানের জুটিতে ভালো অবস্থানে যায় ভারত।

এরপর নাসির হোসেনের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে আউট হন বিরাট। তৃতীয় উইকেটে ৩৫ রান যোগ করতেই আবারো নাসিরের আঘাতে আউট হন শিখর ধাওয়ানও! পরের ওভারেই রুবেল হোসেনেই বলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন আম্বাতি রায়ডুও!

১১০ রানে চার উইকেট হারিয়ে তখন বিপাকে ভার‍ত। পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক ধোনি আর অভিজ্ঞ সুরেশ রায়নার ৫৩ রানের জুটি বিপর্যয় সামাল দেন। দলীয় সংগ্রহ তখন ৪ উইকেটে ১৬৩। এরপর আর দাঁড়াতেই পারেনি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। মুস্তাফিজের বিষাক্ত কাটারে ৩৭ রান যোগ করতেই শেষ ৫ ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ২০০ রানেই গুড়িয়ে যায় সফরকারীরা। ১০ ওভারে ৪৩ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান। ভারতের পক্ষে ধাওয়ান সর্বোচ্চ ৫৩ ও ধোনি ৪৭ রান করেন।

জবাবে সহজ লক্ষ্য মাত্রা তাড়া করতে নেমে ওপেনিং জুটিতে ৩৪ রান তুলে তামিম-সৌম্যরা। এরপর ৩৪ রানে কুলকারনির বলে ব্যক্তিগত ১৩ রানে তামিম বিদায় নিলে প্রথম উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। দ্বিতীয় উইকেটে সৌম্য সরকার ও লিটন দাশের ৫২ রানের জুটি বাংলাদেশের জয়কে আরো সহজ করে দেয়। দলীয় ৮৬ রানে ব্যক্তিগত ৩৪ রানে ফেরেন সৌম্য। এরপর দলের সাথে ১২ রান যোগ করতেই ব্যক্তিগত ৩৬ রানে ফেরত যান লিটন দাশও। ৯৮ রানে তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ।

তবে চতুর্থ উইকেটে মুশফিক-সাকিবের ৫৪ রানের জুটি বাংলাদেশকে জয়ের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যায়। দলীয় ১৫২ রানে মুশফিক ৩১ রানে আউট হলেও বাকি কাজটা সহজেই সেরে ফেলেন সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান। সাকিবের অপরাজিত ৫১ আর সাব্বিরের ২২ রানে ৬ উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।

প্রথম দুই ওয়ানডে জয়ে প্রথমবারের মতো ভারতকে সিরিজ হারায় বাংলাদেশ। দুই ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে ভারতকে একাই ধসিয়ে দেন তরুণ মুস্তাফিজুর রহমান। এই জয়ের মধ্য দিয়ে ঘরের মাটিতে টানা দশ ওয়ানডে জয় তুলে নেয় তামিম-সাকিবরা। অবশ্য শেষ ওয়ানডেতে ভারত জয় পাওয়ায় হোয়াইট ওয়াশের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ।

তবে, এটা ঠিক যে – ভারতের বিপক্ষে সেই ওয়ানডে সিরিজের সময় থেকেই দেশের মাটিতে ওয়ানডে ফরম্যাটে অজেয় এক দল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। আগের সিরিজেই পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করে বাংলাদেশ দল, দেশের মাটিতে। এরপর থেকে আজ অবধি কেবল ইংল্যান্ড দলই বাংলাদেশে এসে ওয়ানডে সিরিজে জয় পেয়েছে। দেশে খেলা সর্বশেষ ১১ টি ওয়ানডে সিরিজের ১০ টিতেই জয়ী দলের নাম বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link