হ্যাটট্রিক! যেকোনো বোলাররের জন্য এক আজীবনের লালিত স্বপ্ন।
অনেক ক্রিকেটার তো হ্যাটট্রিক করে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে। হ্যাটট্রিক! ক্রিকেটের যেকোনো সংস্করণেই হোক না কেন ক্রিকেটারদের জন্য সেটা এক গৌরবের বিষয়। আর সেটা যদি হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাহলে তো আর কোনো কথাই নাই। কারণ ক্রিকেটে এই ক্ষুদ্রতম সংস্করণে সবচেয়ে বেশি নজর থাকে ব্যাটসম্যানদের। সবাই চায় প্রচুর রান হোক এমন এক ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে। এই কারণে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের উইকেটও তৈরি করা হয় ব্যাটসম্যানদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) বিশ্বের অন্যতম সেরা ফ্রাঞ্চাইজি লিগ। বিশ্বের প্রায় সব দেশের ক্রিকেটারদের স্বপ্ন থাকে আইপিএল খেলার। এর কারণেই আইপিএলে দেখা যায় বিশ্বের সব সেরা ক্রিকেটারদের। আইপিএলের মঞ্চে বেশ কয়েকবারই বোলাররা হ্যাটট্রিক করেছেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে লোকজন সেই সব হ্যাটট্রিককে ভুলে গেছে। কারণ আইপিএল জুড়ে থাকে রানবন্যা। এখানে খুব কম সংখ্যক বোলারই লাইম লাইটে আসতে পারেন।
আইপিএলে হওয়া এই রকম কিছু হ্যাটট্রিক নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
- রোহিত শর্মা (বিপক্ষ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স,২০০৯)
রোহিত শর্মা মুম্বাইয়ের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করেছেন! হ্যাঁ, মুম্বাইয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছেন ২০০৯ সালে ডেকান চার্জার্সের হয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন আসর ডেকান চার্জার্সের হয়ে খেলেছিলেন রোহিত শর্মা।
ডেকান চার্জার্সের দেওয়া ১৪৬ রানে লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে রোহিত অফ স্পিনে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিলো মুম্বাই। যখন মুম্বাইয়ের ৩০ বলে ৪৬ রানের দরকার তখনই ম্যাচে প্রথমবারের মত বোলিংয়ে আসেন তিনি। ওভারের শেষ দুই বলে প্যাভিলিয়নে ফেরান অভিষেক নায়ার এবং হরভজন সিংকে। এই ওভারে ২ রানে ২ উইকেট শিকার করেন তিনি।
১৮ তম ওভারে আবারো বোলিংয়ে আসেন রোহিত। এই ওভারের প্রথম বলেই প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান জেপি ডুমিনিকে।
আর এই হ্যাট্রিকে ডেকানকে এনে দেন ১৯ রানের জয়।
- অক্ষর প্যাটেল (বিপক্ষ গুজরাট লায়ন্স, ২০১৬)
অক্ষর প্যাটেল এই হ্যাটট্রিক করেছেন গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে। এই ম্যাচে সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন তিনি। তখন ক্রিজে ছিলেন ডোয়াইন স্মিথ এবং দীনেশ কার্তিক।
ওভারের তৃতীয় বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে আউট হন স্মিথ। এরপরের বলেই দীনেশ কার্তিকের লেগ স্ট্যাম্প উপরে ফেলেন অক্ষর প্যাটেল। ওভারের শেষ বলে প্রায় একই ধরনের বলে ডোয়াইন ব্রাভোকে আউট করে আইপিএলে নিজের প্রথম হ্যাট্রিক করেন তিনি। ম্যাচের ১১ তম ওভারের আবারো বোলিংয়ে আসেন তিনি। এসেই প্রথম বলেই প্যাভিলিয়নে ফেরান রবীন্দ্র জাদেজাকে। এই বলে জাদেজা কাট করতে গিয়ে উইকেট রক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার কাছে ক্যাচ দেন।
- অজিত চান্ডিলা (বিপক্ষ পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া,২০১২)
এই ম্যাচের প্রথম ওভারেই পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে জ্বলে উঠেন অজিত চান্ডিলা। ১৭০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নামে পুনে ওয়ারিয়র্স। কিন্তু শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে ফেলে দেন অজিত চান্ডিলা। তিনি এই ম্যাচের প্রথম ওভারেই বোলিংয়ে আসেন। ওভারের পঞ্চম বলেই প্যাভিলিয়নে ফেরান কিউই ব্যাটসম্যান জেসি রাইডারকে। এরপরের বলে সৌরভ গাঙ্গুলিকে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার বানান শ্রীবৎস গোস্বামী।
নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই আবারও ব্যাটসম্যানকে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার বানান অজিত চান্ডিলা। এই বার স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন রবিন উথাপ্পা।
- যুবরাজ সিং (বিপক্ষ ডেকান চার্জার্স,২০০৯)
ডেকান চার্জার্সের বিপক্ষে এই হ্যাটট্রিক করার সময়ে যুবরাজ খেলতেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে। যুবরাজ সিংয়ের এই হ্যাট্রিক আসে ১২ এবং ১৪ তম ওভারে।
১২ তম ওভারের পঞ্চম বলে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান হার্শেল গিবসকে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করেন। গিবস তাঁর উইকেটটি প্রায় ছুড়ে দিয়ে আসেন। এরপরের বলেই আবারো উইকেট নেন যুবরাজ। এইবার শিকার ছিলেন অজি ব্যাটসম্যান এন্ড্রু সাইমন্ডস। ১৪ তম ওভারে আবারো বোলিংয়ে আসেন তিনি। এই বারে প্রথম বলেই ফেরান ভেনুগোপাল রাওকে।
- যুবরাজ সিং (বিপক্ষ রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু, ২০০৯)
২০০৯ মৌসুমে দুইবার হ্যাটট্রিক করেন যুবরাজ। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে করা এই হ্যাটট্রিক করে দলকে জয় এনে দিতে পারেননি তিনি।
এই ম্যাচে ব্যাঙ্গালুরুর মিডল অর্ডারকে একাই ধসিয়ে দিয়ে বড় সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখেন যুবরাজ। এই ম্যাচের ১২ এবং ১৪ তম ওভারে টানা তিন বলে উইকেট নিয়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তিনি। এই ম্যাচে তিনি শিকার করেন জ্যাক ক্যালিস, মার্ক বাউচার এবং রবিন উথাপ্পাকে।