এশিয়া কাপে পাকিস্তানের ভরাডুবির নেপথ্য কারণ

এবারের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের এমন ভরাডুবির কারণ কী? যেখানে দারুণ সব ব্যাটার, বোলারদের সমন্বয়ে পাকিস্তান দলটা ছিল রীতিমত তারকায় পূর্ণ। তারপরও এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণ কি? খেলা ৭১ সেই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজা চেষ্টা করেছে। চলুন মিলিয়ে নেওয়া যাক, পাকিস্তানের এই স্কোয়াডে কোথায় লুকিয়ে ছিল গলদ। 

এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে শক্তিমত্তার বিচারে এবারে সবচাইতে পরিপূর্ণ দল ভাবা হচ্ছিল পাকিস্তানকে। চলতি বছরে মে মাস থেকে কোনো ওয়ানডে ম্যাচ না হারা বাবর আজমের দল তো প্রায় ‘অপরাজেয়’ হয়েই এসেছিল এশিয়া কাপের মঞ্চে। তবে মহাদেশীয় এ আসরের সুপার ফোরে এসেই ঘটলো ছন্দপতন। শিরোপা প্রত্যাশী পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো দূরে থাক, সুপার ফোরের পয়েন্ট টেবিলে তলানিতে থেকে শেষ করেছে এবারের এশিয়া কাপ।

প্রশ্ন হচ্ছে, এশিয়া কাপে পাকিস্তানের এমন ভরাডুবির কারণ কী? যেখানে দারুণ সব ব্যাটার, বোলারদের সমন্বয়ে পাকিস্তান দলটা ছিল রীতিমত তারকায় পূর্ণ। তারপরও এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণ কী? খেলা ৭১ সেই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজা চেষ্টা করেছে। চলুন মিলিয়ে নেওয়া যাক, পাকিস্তানের এই স্কোয়াডে কোথায় লুকিয়ে ছিল গলদ।

  • বিকল্প পেসারের অভাব

শাহিন আফ্রিদি-নাসিম শাহ-হারিস রউফ, পাকিস্তানের এই পেসত্রয়ী এখন প্রায় তর্কাতীত ভাবেই বিশ্বসেরা পেস বোলিং লাইন আপ। এবারের এশিয়া কাপেও এ তিন পেসার প্রতিপক্ষের উপর চালিয়েছিলেন ধ্বংসলীলা। তবে এ পেস তাণ্ডবের আড়ালেও রয়েছে একটা গলদ। মূলত পাকিস্তানের বোলিং লাইনআপটাই অনেক টা এই ‘ত্রয়ী’র উপর নির্ভর। ফলত, বিকল্প কোনো পেসারও তৈরি হয়নি।

পাকিস্তান স্কোয়াডে ব্যাক আপ পেসার রয়েছে। মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের পাশাপাশি এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচে খেলতে দেখা গিয়েছে জামান খানকেও। তবে মূল সমস্যাটা হলো, শাহিন-নাসিম-রউফ নিয়মিত একাদশে খেলার কারণে বিকল্প পেসারদের ঠিক ম্যাচ প্র্যাকটিসটা হয়ে ওঠেনি।

এর স্বপক্ষে একটা পরিসংখ্যান এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। ২০২২ থেকে যেখানে শাহিন, নাসিম, রউফ- প্রত্যেকেই ন্যূনতম ১৪ টি করে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন, সেখানে বিকল্প পেসারদের মধ্যে এ সময়কালে মাত্র ৪ টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। আর এ কারণেই নাসিম, রউফ এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর বিকল্প পেসারদের কাছ থেকে সেরাটা বের করতে পারেনি পাকিস্তান।

  • শাদাবের নির্বিষ স্পিন

এই মুহূর্তে পাকিস্তানের স্পিন আক্রমণের নেতৃত্বটা রয়েছে শাদাব খানের কাঁধে। বাবরের ডেপুটিও তিনি। তবে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বল হাতে অফফর্মের বৃত্ত থেকেই যেন বের হতে পারছেন না তিনি। চলতি বছরে ৩৯ বোলিং গড়ে পেয়েছেন মাত্র ১৩ টি উইকেট। বোলিং ইকোনমিও ছিল না নিয়ন্ত্রণে, ৫.৫৪!

এবারের এশিয়া কাপে শুরুটা অবশ্য ভাল করেছিলেন। নেপালের বিপক্ষে ২৭ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। তবে বড় ম্যাচে হাসেনি তার বোলিং। পরের ৪ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ২ টি উইকেট। আর এখানেই পিছিয়ে পড়ে পাকিস্তান।

  • দুর্বল স্পিন বোলিং ইউনিট

পাকিস্তানের পেস বোলিং লাইনআপ যতটা দুর্দান্ত, স্পিন বোলিং লাইনআপ ঠিক ততটাই গড়পড়তা। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অন্তত সেটিই জানান দিচ্ছে। ২০২২ থেকে পাকিস্তানের কোনো স্পিনারই ৩০ এর নিচে বোলিং গড় রাখতে পারেননি। ৩৫ এর নিচে ৩২.১৫ গড় নিয়ে বল করেছেন শুধু একজন; মোহাম্মদ নওয়াজ।

আর সব মিলিয়ে পাকিস্তানি স্পিনারদের এ সময়কালে বোলিং গড় ছিল ৪০.২৬। এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ১০ দলের মধ্যে যা ৮ম। পাকিস্তানের স্পিনারদের চেয়ে এ সময়কালে বাজে বোলিং গড় রয়েছে দুটি দেশের। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের স্পিনারদের বোলিং গড় ছিল ৪৪.২৭, আর নেদারল্যান্ডসের স্পিনারদের ছিল ৫৩.৮৮।

  • ফখর জামানের অফফর্ম

চলতি বছরের শুরুটা দুর্দান্ত করেছিলেন। ইতিহাসের ১২তম ব্যাটার হিসেবে গড়েছিলেন টানা ৩ ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড। তবে বিশ্বকাপের আগে এসে যেন তাঁকে নিয়ে ম্যানেজমেন্টের কপালে চিন্তার ভাঁজ।

শেষ ১০ ইনিংসের তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১৯০ রান। এবারের এশিয়া কাপেও ছিলেন রানখরায়। টপ অর্ডারে এমন এক ব্যাটারের ধারাবাহিক ব্যর্থতাও পাকিস্তানকে এবারের এশিয়া কাপে পিছিয়ে দিয়েছে।

  • বড় ম্যাচে বাবরের ব্যর্থতা

এবারের এশিয়া কাপটা শুরু করেছিলেন ১৫১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস দিয়ে। কিন্তু নেপালের বিপক্ষে ঐ ইনিংস খেলার পর আর ব্যাট হাসেনি বাবরের। সুপার ফোরের ৩ ইনিংসে করেন মাত্র ৫৬ রান। ফখর জামানের পর বাবরের এমন বড় ম্যাচে ব্যর্থতাই এবার বেশ ভুগিয়েছে পাকিস্তানকে।

আর এখানেই চাপ বেড়েছে মিডল অর্ডার ব্যাটারদের। যারা আবার দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে বেশির ভাগে ম্যাচে ব্যাটে ওঠারই সুযোগ পান না। সব মিলিয়ে বড় টুর্নামেন্টের আগে সবাইকে পরখ করার জন্য যে এক্সপেরিমেন্ট প্রয়োজন, সেটিই করেনি পাকিস্তান। পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্ট মূলত এগিয়েছে তাদের নিয়মিত একাদশ নিয়েই।

কিন্তু, যে কোনো টুর্নামেন্টের জন্যই সেরা বিকল্পকে প্রস্তুত রাখতে হয়। পাকিস্তান দলে সেটিরই ঘাটতি ছিল। আর সে কারণেই এবারের এশিয়া কাপে ভরাডুবি হয়েছে পাকিস্তান দলের।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...