এবারের এশিয়া কাপ জুড়ে নজর কেড়েছেন অনেকেই। তবে তার বিপরীতে নামের প্রতি সুবিচার করতে না পারার তালিকাটাও ঠিক নগণ্য নয়। খেলা ৭১ মূলত খোঁজার চেষ্টা করেছে সেই সব ক্রিকেটারদের, যাদের নিয়ে হতে পারে এবারের এশিয়া কাপে ‘ফ্লপ’ এক একাদশ। চলুন দেখে নেওয়া যাক।
- রহমানুল্লাহ গুরবাজ (আফগানিস্তান) – উইকেটরক্ষক
ব্যাটিংয়ে দারুণ ছন্দ নিয়েই এবারের এশিয়া খেলতে নেমেছিলেন আফগানিস্তানের রহমানুল্লাহ গুরবাজ। সঙ্গে ছিল আগের সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৫১ রানের ইনিংস খেলার সুখস্মৃতি। কিন্তু এশিয়া কাপের মঞ্চে এসেই যেন খেই হারিয়ে ফেললেন এ ব্যাটার।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ১ রান, আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ রান। এবারের এশিয়া কাপে সুপার ফ্লপ গুরবাজ নিজের নামের পাশে সর্বসাকূল্যে যোগ করতে পেরেছেন ৫ রান। আর তাঁর ব্যাটিং ব্যর্থতায় আফগানিস্তান দলও সুপার ফোরের আগেই বিদায় নেয়।
এশিয়া কাপের ব্যর্থ একাদশ গড়া হলে তাই ইনিংস শুরুটা তিনিই করবেন। একই সাথে এই দলের উইকেটরক্ষকের দায়িত্বও সামলাবেন তিনি।
- দ্বিমুথ করুণারত্নে (শ্রীলঙ্কা)
লঙ্কানদের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ বিবেচনা করা হয় তাঁকে। তবে এবারের এশিয়া কাপে আর হাসেনি করুণারত্নের ব্যাট। ৪ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে মোটে ৫৩ রান। রান খরায় ভুগতে থাকায় করুণারত্নে শেষ পর্যন্ত এবারের এশিয়া কাপের ফাইনালের একাদশের নিজের জায়গা হারিয়েছেন।
- লিটন দাস (বাংলাদেশ)
এশিয়া কাপের শুরুতে ভাইরাল জ্বরের কারণে বাংলাদেশ স্কোয়াডে ছিলেন না লিটন দাস। তবে সুপার ফোরে দারুণ কিছুর আশায় লিটন দাসকে আবারো স্কোয়াডে ফেরানো হয়।
কিন্তু, টিম ম্যানেজমেন্টের সে আশায় গুঁড়ে বালি। সুপার ফোরের ৩ ইনিংস মিলিয়ে এ ব্যাটার করতে পেরেছেন মাত্র ৩১ রান।
- বাবর আজম (পাকিস্তান) – অধিনায়ক
এবারের এশিয়া কাপে চতুর্থ সর্বোচ্চ ২০৭ রান করেছেন বাবর আজম। এর পাশাপাশি এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের কীর্তিটাও তাঁর দখলে। তারপরও এবারের এশিয়া কাপে ব্যর্থদের একাদশে তিনি থাকছেন কীভাবে?
তাঁর সামগ্রিক পারফরম্যান্সের আড়ালে শুভঙ্করের ফাঁকিটা হলো, ২০৭ রানের মধ্যে তিনি নেপালের বিপক্ষেই খেলেছিলেন ১৫১ রানের ইনিংস। বাকি ৪ ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৫৬ রান।
এর মধ্যে সুপার ফোরে পাকিস্তানের বাঁচা মরার লড়াইয়েও তাঁর ব্যাট হাসেনি। ফলত, আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার হওয়া সত্ত্বেও খেলা ৭১-এর দৃষ্টিতে তিনি থাকছেন ব্যর্থদের একাদশে। শুধু তাই নয়, এই দলের নেতৃত্বেও থাকছেন তিনিই।
- দাসুন শানাকা (শ্রীলঙ্কা) – সহ-অধিনায়ক
বাবর আজমের মতো শানাকা অবশ্য দলগত ভরাডুবির সম্মুখীন হন নি। একতরফা ফাইনাল হলেও ৬ দলের এশিয়া কাপে তাঁর দল রানার্স আপ হয়ে শেষ করেছে। তবে এবারের এশিয়া কাপটা শানাকার জন্য ছিল একদম যাচ্ছেতাই। বল হাতে যদিও এক ম্যাচে জ্বলে উঠেছিলেন।
তবে, ব্যাট হাতে বারুদের বিস্ফোরণ ঘটেনি একবারও। ৬ ম্যাচে নিজের নামের পাশে যোগ করতে পেরেছেন মাত্র ৫৪ রান। ফাইনালিস্ট অধিনায়ক হয়েও তাই এবারের এশিয়া কাপে ব্যর্থদের কাতারে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।
- শামিম পাটোয়ারি (বাংলাদেশ)
ওয়ানডে অভিষেকের প্রথম বলেই। তাও আবার এশিয়া কাপের মঞ্চে। তবে রাজকীয় শুরু করেও টুর্নামেন্ট জুড়ে হতাশাই উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশি এ ব্যাটার। ৪ ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৩৩ রান।
- শাদাব খান (পাকিস্তান)
নেপালের বিপক্ষে ৪ উইকেট দিয়ে এবারের এশিয়া কাপ শুরু করেছিলেন শাদাব খান। তবে এরপর আর নিজের ছন্দ দেখাতে পারেনি। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হাসেনি তাঁর বোলিং। উল্টো নির্বিষ বোলিং সুপার ফোরে এসে পাকিস্তানকে পিছিয়ে দিয়েছে।
বাজে বোলিংয়ে ঘাটতি অবশ্য শাদাব পুষিয়ে দিতে পারেননি ব্যাটিংয়েও। পুরো টুর্নামেন্টে ৩ ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১৩ রান।
- সন্দ্বীপ লামিছানে (নেপাল)
নেপাল ক্রিকেটের হৃৎপিণ্ড বলা যেতে পারে তাঁকে। কিংবা নেপালের একমাত্র বৈশ্বিক তারকাও বলা যায়। কিন্তু মহাদেশীয় আসরে সেই ছাপটা তিনি রাখতে পারেননি। ২ ম্যাচে পেয়েছেন মাত্র ১ টি উইকেট। তবে উইকেট না পাওয়ার চেয়েও ছিল হতাশাজনক ব্যাপার ছিল তাঁর বোলিং ইকোনমি।
প্রতিপক্ষের উপর চাপ তো দূরে থাক, নিজের সহজাত বোলিংটাই করতে পারেননি এ লেগ স্পিনার। পুরো আসরে তাঁর বোলিং ইকোনমি ছিল ৭.৭১।
- মুজিব উর রহমান (আফগানিস্তান)
লামিছানের মতো নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি আরেক লেগস্পিনার মুজিব উর রহমান। পুরো আসরে মাত্র ২ উইকেট প্রাপ্তি আফগান এ স্পিনারের।
আর তার চাইতেও দৃষ্টিকটু ছিল তাঁর বোলিং ইকোনমি। ৬.১০ ইকোনমিতে বল করেছেন তিনি।
- ফজল হক ফারুকি (আফগানিস্তান)
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল পেসার ভাবা হয় ফজল হক ফারুকীকে। তবে এবারের এশিয়া কাপে উইকেটের খাতাই খুলতে পারেননি আফগান এ পেসার।
শুধু তাই নয়, খরুচে বোলিংয়ের কারণে কোনো ম্যাচেই তাঁকে দিয়ে ১০ উপরের কোটা করানো হয়নি।
- কাসুন রাজিথা (কাসুন রাজিথা)
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাঁর ৪ উইকেট লঙ্কানদের সুপার ফোরের পথটা সহজ করে দিয়েছিল। যদিও সে ম্যাচে বেশ খরুচে ছিলেন এ পেসার। আর তবে ঐ ম্যাচের পর সুপার ফোরে এসে আর একটিও উইকেটের দেখা পাননি রাজিথা।