ফুটবলের জনক তাঁরা। সমৃদ্ধ ইতিহাস তাঁদের। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলেন বিশ্বের সেরা সব ফুটবলাররা। অথচ, সেই ইংল্যান্ডেরই কি না একবারও ইউরোপ সেরা হওয়ার সাফল্যও ছিল না।
বিশ্বকাপ কিংবা ইউরো – যেকোনো বড় আসরের আগেই ‘ইটস কামিং হোম’ আওয়াজ শোনা যায় ব্রিটিশ গণমাধ্যমে। কিন্তু, বিশ্বকাপ গেলেই দেখা যায় সেই আওয়াজের ভেতরটা একদমই ফাঁকা।
এবারের নারী ইউরোতেও চিত্রটা তেমনই মনে হচ্ছিল। কিন্তু, দিন শেষে পাল্টে গেল পাশার দান। এবারে আর ফাঁকা আওয়াজ নয়। ব্রিটিশ স্বপ্নপূরণ হল। ব্রিটিশ মেয়েরা জিতে গেছে উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ।
এবারের ফাইনাল ম্যাচটিতে এবার জার্মানির বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ড। এই ফাইনাল ম্যাচটি দেখতে রেকর্ড সংখ্যক ৮৭ হাজার ১৯২ জন দর্শক ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে উপভোগ করেছেন। আগে কখনো পুরুষ বা নারী কোন বছরের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেই এত বিপুল পরিমাণ দর্শক দেখেনি ফুটবলবিশ্ব। একেবারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই সম্বলিত দারুণ এক ফাইনাল ছিল বটে!
জার্মানি তো এই মঞ্চের আটবারের চ্যাম্পিয়ন দল। তাই এবারের ফেবারিট ছিলো তাঁরাই। কিন্তু ইংল্যান্ডের নারী ফুটবল দল তো রীতিমতো এক ইতিহাস তৈরি করে বসল গেল ৩১ জুলাই রাতে । ইংল্যান্ডের নারী ফুটবল দল গতকাল উয়েফা উইমেন্স ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ২-১ গোলে জয় পেয়েছে।
এর আগে গেল ২৬ জুলাই সেমিফাইনালে সুইডেনের বিরুদ্ধে ৪-০ গোলে জয় পেয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে ইংল্যান্ড।১৯৮৪ সালে শুরু হওয়া নারী ইউরো কাপে এটিই ইংল্যান্ডের প্রথম শিরোপা জয়। ১৯৮৪ সালের ফাইনালে পৌছাতে পারলেও সুইডেনের কাছে পেনাল্টি শুট আউটে হেরে রানার্স আপ তকমায় সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাঁদের।
এমনকি পুরুষদের ইউরোতেও এই সাফল্য পায়নি ইংল্যান্ড। ২০০৯ সালে আরেকবার ফাইনালের টিকিট কাটলেও জার্মানির কাছে ৬-২ গোলে হেরে সেবারও স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ইংল্যান্ড নারী ফুটবল দলের। এবার সম্ভবত সেই প্রতিশোধটাই চুকিয়ে নিলেন তাঁরা!
তৃতীয়বারের মতো উয়েফা নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের মঞ্চে উঠে, শেষমেশ পুরোনো শত্রু জার্মানিকে হারিয়েই শিরোপা অর্জনের জয়োগান গাইলেন ইংরেজ নারীরা। পাশাপাশি ইংরেজ নারীরা তো জার্মানির আরেকটি রেকর্ড টপকে গেলেন।
২০০৯ সালেই এই আসরে জার্মানি সর্বোচ্চ ২১ টি গোল করেছিল। আর ২০২২ এর সাম্প্রতিক আসরে ইংরেজ নারীরা ২২ টি গোল করে সেই রেকর্ডটি ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। এই ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য। দ্বিতীয়ার্ধে ইংল্যান্ডের এলা টুন ৬২ মিনিটের মাথায় গোল করেন। যদিও ৭৯ মিনিটে জার্মানির হয়ে লিনা ম্যাগুল একটি গোল করে সমতা ফেরান।
নির্ধারিত নব্বই মিনিট অমীমাংসিত থাকায় ম্যাচটি অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে গড়ায়। ১১০ মিনিটের মাথায় গোল করে জয় এনে দেন ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকার ক্লোই কেলি। অর্ধশতকেরও বেশি সময় পর, প্রথমবারের মতো বড় কোনো আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে নিল ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ সালের পর থেকে ইংল্যান্ড–এর পুরুষ বা নারী উভয় ফুটবল দলের জন্য এটি প্রথম কোন বড় আন্তর্জাতিক ট্রফি।
ইংল্যান্ডের নারী ফুটবল দল এই জয়ের মধ্য দিয়ে ইংরেজ নারীদের খেলাধুলার আগ্রহ ও সামর্থ্যকে সম্মানের সাথে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। ইউরো- ২০১৭ তে নিজ দেশ নেদারল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেয়া সারিনা উইগম্যান ইংল্যান্ড ফুটবল দলের সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর। এই যোগ্য কোচের নেতৃত্ব দলটিকে ইউরোপ সেরা হওয়ার সম্মান এনে দিয়েছে।
এদিকে জয়ের পর উচ্ছ্বাস যেন থামছেই না ইংল্যন্ডের মেয়েদের। মাঠে দ্বিতীয় গোল নিশ্চিত হওয়ার পর উচ্ছ্বসিত কেলিকে দেখা গেল জার্সি হাতে ঘুরিয়ে সারামাঠে দৌড়ে উদযাপন করতে। ওদিকে ম্যাচের পর কোচ সারিনা উইগম্যানের সাংবাদ সম্মেলনে গান গাইতে গাইতে দল বেঁধে ঢুকে পড়েন নারী ফুটবলাররা।
একজন তো টেবিলের উপর উঠেই নাচতে থাকলেন। কেউবা কোচকে জড়িয়ে ধরলেন। এই ঘটনায় অবাক হয়ে যান সাংবাদিকরাও। কয়েক মিনিট পরে তাঁরা ফিরে যান। আত্মতৃপ্ত কোচ তখন একগাল হেসে সাংবাদিকদের বললেন, ‘এবার মনে হচ্ছে আমরা সত্যিই শিরোপা জিতেছি।’