বিপিএলে পুরনো চালেই বাড়ন্ত ভাত

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দশম আসরের প্রথম ঢাকা পর্ব শেষ। আট ম্যাচ শেষে সেরা উইকেট শিকারি কিংবা সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশী খেলোয়াড়রা। তবে যে উদ্দেশ্যে আয়োজিত হয় বিপিএল, সেটার কোন নজির নেই এখন অবধি।

ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের পথচলা শুরু দেশীয় ক্রিকেটারদের একটু নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ করে দিতেই। বিপিএলের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল তরুণ ক্রিকেটারদের উঠে আসার একটা মঞ্চ তৈরি করা। সেটা যে একেবারেই বিপিএল করতে পারেনি সে কথা বলাটা নেহায়েত বোকামি।

তবে দশম বিপিএলে তরুণদের নেই কোন নজর কাড়া পারফরমেন্স। পাইপলাইনের খেলোয়াড় ভাবা হচ্ছে যাদের, তারা যেন নিজেদের ছায়া হয়েই বিচরণ করেছেন শেরে বাংলার সবুজ ঘাসে। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তালিকায় সবার উপরে রয়েছেন মুশফিকুর রহিম।

তিন ম্যাচ খেলেছেন তিনি ফরচুন বরিশালের হয়ে। যার দুইটিতেই পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। তাতে তার মোট রান ১৫৬। ১৪১.৮১ স্ট্রাইকরেটে তিনি রান করে চলেছেন এবারের বিপিএলে। অথচ প্রায় এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেছে তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলেছেন।

অন্যদিকে, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ইমরুল কায়েস। কুমিল্লার হয়ে দুইটি ম্যাচ খেলেছেন ইমরুল। তিনিও দুইটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন। ১২১.৬৪ স্ট্রাইকরেটে ১১৮ করেছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। তবে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাম্প্রতিক চিত্র অনুযায়ী তিনি জাতীয় দলের জন্য বিবেচিত হন না।

গেল আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাজমুল হোসেন শান্ত কিংবা জাকির হাসানরা একেবারেই নিষ্প্রভ এবারের আসরে। অপরিচিত কোন তরুণ এখন অবধি নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারেননি। এমনকি সম্ভাবনার প্রদীপে একটুখানি জ্বালানির সঞ্চার ঘটাতে পারেননি।

বোলারদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম। জাতীয় দলের দুই নিয়মিত মুখ মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম রয়েছেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায়। তারা দুইজনই পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন। সমপরিমাণ উইকেট বাগিয়েছেন জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা খালেদ আহমেদ।

যদিও টুর্নামেন্ট রয়েছে একেবারে শুরুর দিকে। এখনও গ্রুপ পর্বে ৩৪টি ম্যাচ বাকি। তা বরং যথেষ্ট সময় তরুণ ক্রিকেটারদের নিজেদের মেলে ধরার। তবে বিপত্তি হচ্ছে ভিন্নরুপি। ফ্রাঞ্চাইজিগুলো আসলে খুব বেশি ঝুঁকি নিতে আগ্রহী নয়। তারা বরং স্রেফ ফলাফলের পেছনেই ছুটছেন। সে কারণেই তরুণ ক্রিকেটারদের চাইতেও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের প্রাধান্য দিচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

ফরচুন বরিশালের কথাই ধরা যাক। দলটায় রয়েছেন তামিম ইকবাল খান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। হতাশার কথা হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য তাদের কেউই এখন আর বিবেচিত হন না। রিয়াদ ক্ষুদ্রতম সংস্করণ থেকে অবসর নেননি, তবে তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রতিবারই নানা সমালোচনার জন্ম হয়।

অন্যদিকে, সিলেট স্ট্রাইকার্সের কথা বলা যেতে পারে। সেখানে রেজাউর রহমান রাজা দিন পার করছেন সাইড বেঞ্চে। বাংলাদেশের পেস আক্রমণের পাইপলাইন সমৃদ্ধ করতে তার অন্তত অভিজ্ঞতা অর্জন প্রয়োজন ছিল। তবে সেটি হচ্ছে না, ফ্রাঞ্চাইজির ইচ্ছেতেই।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ডাগ আউটে অলস সময় পার করছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। অথচ বাংলাদেশ জাতীয় দলে একজন লেগ স্পিনারের প্রয়োজনীয়তা নিত্যদিনই আলোচনার খোরাক। এমন চিত্র প্রায় প্রতিটা দলেরই। এমন চিত্রই আসলে শঙ্কা জাগায়। সত্যিকার অর্থেই বিপিএলের উদ্দেশ্য হাসিল হচ্ছে তো?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link