আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে স্নায়ুরূদ্ধ করা ম্যাচে জয়। আর এবার সিডনিতে নিজেদের বিশ্বকাপ অভিযানের দ্বিতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে একপেশে সহজ জয়। টানা দুই জয়ে তাই এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে দুর্দান্ত শুরুর অধ্যায়টা ভালভাবেই পারি দিল রোহিতরা। সামনে নাটকীয় তেমন কিছু না হলে সেমিফাইনালেই চোখ থাকছে তাদের।
তবে ভারত-পাকিস্তানের মহারণের দিন চারেক পেরিয়ে গেলেও ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসছে সে ম্যাচের শেষের দিক এসে ফ্রি হিটে বিরাট কোহলি আর দীনেশ কার্তিকের দৌড়ে তিন রান নেওয়া নিয়ে। কারণ ঐ তিন রানই যে ভারতকে ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল। যাই হোক, সে ম্যাচের ঐ মুহূর্তে আপাতত ফেরত যাওয়া যাক। শেষ ওভারে পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে এসেছিলেন মোহাম্মদ নওয়াজ। তাঁর করা চতুর্থ ডেলিভারিটি নো বল হলে ফ্রি হিট পায় ভারত। ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিক ছিল।
কিন্তু ফ্রি হিট বলে বিরাট কোহলি বোল্ড হয়ে গেলেও বলটি ব্যাক ওয়ার্ডের আউটফিল্ডের দিক গড়াতে শুরু করলে বিরাট কোহলি আর দীনেশ কার্তিকও রান নেওয়া শুরু করেন। সে বলটিতে তাঁরা তিন রান নেন। আর এখানেই বিস্মিত হয়ে যান পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমসহ উইকেটরক্ষক রিজওয়ান। আম্পায়ারের কাছেও তাঁরা ছুটে যান। আম্পায়ার সেটিকে বাই রান বলেই সংকেত দেন। কারণ আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী সেই রান নেওয়াতে কোনো ভুল ছিল না।
মূলত ক্রিকেটে ফ্রি হিট বলে বোল্ড হওয়ার পরও তিন রান নেওয়ার দৃশ্যের দেখা তেমন মেলে না। দর্শকদের মতো এমন পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত নন ক্রিকেটাররাও। তাই সেই তিনটি রান নিয়ে মাঠের বাইরে আলোচনাও হচ্ছে বেশ। অনেকেই মনে করছেন, ফ্রি হিটে রান আউট ব্যতিত কোনো আউট না থাকলেও বোল্ড হওয়ার পর সেই বলে তিনটি রান পাকিস্তানের জন্য বেশ দুর্ভাগ্যজনক ছিল।
আবার অনেকেই মনে করছেন, সেই বলটিকে আম্পায়ারের ডেড বল ঘোষণা করা উচিত ছিল। এবার সেই বলটি নিয়ে কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মার্ক টেইলর। তিনি অবশ্য এই ঘটনার পর আইসিসির এ নিয়মটিই উঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন।
এক সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেন, ‘বল যখন স্ট্যাম্পে হিট করে তখন ব্যাটার রানের জন্য দৌড়ানোকে আমার ব্যক্তিগতভাবে ব্যাটারকে আনফেয়ার সুবিধা দেওয়ার মতো মনে হয়। আর আরেকটি ব্যাপার হলো, যেহেতু ঐ বল স্ট্যাম্পে হিট করার ফলে স্ট্যাম্পের সব বেলই মাটিতে পড়ে গেছে। তাহলে স্ট্রাইক প্রান্তে ব্যাটারকে রান আউট করার জন্য ফিল্ডাররা কি করবে? ফ্রি হিটে আউট করার একমাত্র অপশন রান আউট। কিন্তু এখানে সেটি করতে গেলে তো উইকেটরক্ষককে স্ট্যাম্প তুলে ফেলতে হবে। যেটা বেশ কঠিন।’
তিনি আরো যুক্ত করে বলেন, ‘তাই আমার কাছে মনে হয় ফ্রি হিট বলে ব্যাটাররা বোল্ড কিংবা ক্যাচ আউট হয়ে গেলে সেখানেই বলটিকে ডেড বল ঘোষণা করা উচিৎ। সেটাই হবে সবচেয়ে ফেয়ার সিদ্ধান্ত। যেখানে একটি দল নির্দিষ্ট করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আর ফ্রি হিটে আউট না হওয়াটাই তো ব্যাটারের জন্য এক ধরনের সুবিধা। এ ক্ষেত্রে ফ্রি হিটে ব্যাটারকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন আমি দেখি না।’
রবিবারের সে ম্যাচে ফ্রি হিটের বলে বোল্ড হয়ে রান নেওয়ার ঘটনায় বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে আরো অনেক গ্রেটদের মাঝেও। মার্ক টেইলরের আগে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক স্পিনার ব্র্যাড হগ টুইটে নওয়াজের সেই বলটিকে আম্পায়ার কেন ডেড বলের সিদ্ধান্ত দেননি, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠিয়েছিলেন। তবে সেই রান নেওয়া আইসিসি’র কোনো নিয়ম বহির্ভূত কিছু নয়। তাই ভারতের সে ম্যাচ জয়ে বিন্দুমাত্র প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে না।
অবশ্য আইসিসি’র বেশ কিছু নিয়মই কোনো না কোনো সময় প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে ফিল্ডার থেকে থ্রো করা বল স্টোকসের ব্যাটে লেগে বাউন্ডারি হয়ে গেলে কপাল পুড়ে কিউইদের। বিশ্বকাপ ছোঁয়ার একদম সামনে গিয়েও নিয়মের বেড়াজালে বিশ্বকাপজয় থেকে বঞ্চিত হয় তাঁরা।
এ ছাড়া আইসিসিতে মানকাডিং নিয়ে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও সেটি ফেয়ার/আনফেয়ারের দোলাচলে ছিল এতদিন। প্রশ্ন উঠে সেখানেই, যেটি নিয়ম বহির্ভূত না, সেখানে আবার ক্রিকেটের স্পিরিট নিয়ে প্রশ্ন উঠে কেন? অবশ্য এ মাস থেকেই মানকাডিংকে এখন আইসিসি ফেয়ার রান আউট বলেই বিবেচনা করছে। তবে একটা প্রশ্ন এসেই যায়, ক্রিকেটের নিয়ম বিধিতে কি তবে আইসিসি নিজে সচেতন? কিংবা সেগুলো পুনরায় সংস্কারের প্রয়োজন কিনা সেই দাবিও থেকে যায়।