ফাঁপা স্বপ্নে বাস্তবতার আঘাত

ভারতের বিপক্ষে তাও দেড়শ ছাড়িয়েছিল দলের রান। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক রানের পরাজয়। শেষ ওভারের শেষ বল অবধি জিম্বাবুয়ে অপেক্ষায় ছিল একটা জয়ের, সবাইকে অবাক করে দেওয়া এক জয়। অবশেষে সেই জয়টাই দিলো ধরা। তবে এখানে তাদের জয়ের কৃতীত্বতা পাকিস্তানের ব্যাটাররাই প্রাপ্য। রিজওয়ান, বাবর বড় ইনিংস খেলতে হয়েছেন ব্যর্থ। ব্যাস! এক শান মাসুদ ছাড়া আর কেউই তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি।

অষ্টম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনের মঞ্চায়নই যেন হয়ে গেল। বেশ একটা লম্বা বিরতির পর বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলবার সুযোগ অর্জন করে জিম্বাবুয়ে। আর দীর্ঘ এই অপেক্ষার শেষে একটু খানি চমক উপহার না দিয়ে পারা যায়! সেই চমকটাই দিলেন সিকান্দার রাজা, রায়ান বার্লরা। তাদের সামনে পরাজয় বরণ করে নিতে হয় বিশ্বকাপ প্রত্যাশি পাকিস্তানকে। এর থেকে বড় অঘটন নিশ্চয়ই হবার নয়।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বিধ্বংসী বোলিং লাইনআপ কোন দলের? বৈচিত্র্যময় উত্তরের আনাগোনা হবে নিশ্চয়ই। তবে সবার মস্তিষ্কে একটা নাম খানিক ধাক্কা দেবে নিশ্চয়ই। সেটা পাকিস্তান। প্রায় প্রতিটি দশকে পাকিস্তান ক্রিকেট সমৃদ্ধ ছিল পেসারদের কল্যাণে। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে এখনও। শাহীন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফদের নিয়ে গড়া এই বোলিং লাইনআপটা যেকোন ব্যাটিং দূর্গ গুড়িয়ে দিতে পারে।

তবে তাতে কি আর বিশ্বকাপ যেতা যাবে? সোজাসাপ্টা উত্তর, যাবে না। শুধু বোলিং দিয়ে আর যাই হোক বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব নয়। ব্যাটিংয়ের সহয়তাও তো চাই। তাছাড়া এটা তো বলাই হয়ে থাকে যে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা নাকি ব্যাটারদের খেলা। সেদিক বিবেচনায় পাকিস্তানের এবারের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবার সমীকরণটাও বেশ গোলমেলে ঠেকবার কথা। বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ইতোমধ্যেই ব্যাকফুটে বাবর বাহিনী।

ভারতের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে হার। চিরপ্রতিদ্বন্দীদের সাথে তো সম্পর্ক দা-কুমড়ার। সেখানে লড়াইটাও হয়েছে সমানে সমান। বিরাট কোহলির অতিমানবীয় ইনিংসেই পরাজয়। তবে সেটা নতুন কিছু নয়। ভারতের বিপক্ষে পরিসংখ্যান তো কখনোই পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলেনি। তাইতো নতুন উদ্দ্যমেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল এক বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তবে কুপকাত! কারণ সেই ব্যাটিং ব্যর্থতা। বোলারদের কল্যাণে স্বল্প রানেই আটকে ফেলা গিয়েছিল জিম্বাবুয়েকে।

মাত্র ১৩১ রানের টার্গেট। পাকিস্তানের মত একটা দলের কাছে নেহায়েৎ মামুলি লক্ষ্যমাত্রা। তবে এই মামুলি লক্ষ্যমাত্রাই যেন গলার কাটা বনে গেল পাকিস্তানের। আর তেমনটা হবার কারণ পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারের ভীষণরকম দূর্বলতা। খালি চোখে পাকিস্তান এবারের বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটিং পারফরমেন্সের উপর ভর করে। তবে সত্যি বলতে তাঁরাও দিনশেষে রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। তাদেরও খারাপ দিন আসে। তবে তাদের খারাপ দিনটা গোটা পাকিস্তানের জন্যে খারাপ দিনে পরিণত হয়।

ভারতের বিপক্ষে তাও দেড়শ ছাড়িয়েছিল দলের রান। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক রানের পরাজয়। শেষ ওভারের শেষ বল অবধি জিম্বাবুয়ে অপেক্ষায় ছিল একটা জয়ের, সবাইকে অবাক করে দেওয়া এক জয়। অবশেষে সেই জয়টাই দিলো ধরা। তবে এখানে তাদের জয়ের কৃতীত্বতা পাকিস্তানের ব্যাটাররাই প্রাপ্য। রিজওয়ান, বাবর বড় ইনিংস খেলতে হয়েছেন ব্যর্থ। ব্যাস! এক শান মাসুদ ছাড়া আর কেউই তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি।

পাকিস্তানের এই চিত্রটা ফুটে ওঠাটাই বাকি ছিল। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘বাইরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট’। এই প্রবাদের সার্থকতাই যেন মঞ্চায়ন হল। তবে বড্ড বেশি দেরী হয়ে গেল। পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ের আশাটা যে কেবলই এক ফাঁপা স্বপ্ন তা অন্তত স্পষ্ট হয়ে গেল। বিশ্বকাপের আগেই বহুবার পাকিস্তানের এই দূর্বলতা তুলে ধরে কথা বলেছেন বহু ক্রিকেট বোদ্ধা। তবে খুব বেশি সমাধানের পথ খোলা ছিল না পাকিস্তানের কাছে। আর তাতে অন্তত এবারের বিশ্বকাপ জয়ের আশাটা মাটি চাপা দিতেই হচ্ছে বাবর আজমকে।

কেননা পাকিস্তানের এই দূর্বলতা প্রদর্শনের দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা স্রেফ ছেলেখেলা করেছেন বাংলাদেশের বোলারদের সাথে। অন্যদিকে ভারতের তিন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার পেয়েছেন অর্ধশতকের দেখা। তাই গ্রুপ-২ থেকে পাকিস্তানের সেমিফাইনাল খেলবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নেদারল্যান্ডসের সাথে তাদেরও তো অবস্থান টেবিলের তলানিতে। অন্তত জিম্বাবুয়েকে পাকিস্তানের সমর্থকরা ধন্যবাদ জানাতেই পারে। মিথ্যের স্বপ্নের বেড়াজাল ছিড়ে বাস্তবতা তুলে ধরতে তো আফ্রিকার দেশটিই সাহাস্য করেছে।

গেল আসরে রীতিমত অপ্রতিরোধ্য হয়েই পাকিস্তান সেমিফাইনাল অবধি পৌঁছেছিল। সেখানে হোচট খেতে হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ার কাছে। অবশ্য সেবার শিরোপা অজিদের ঘরেই গিয়েছিল। তবে এবারে জাদুকরি কিছু না ঘটলে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ মিশন শেষ বলা চলে। দুর্দান্ত বোলিং হয়ত রান আটকে দেবে, তবে বাবর-রিজওয়ানদের বাজে দিনের নমুনা অন্তত পাওয়া গেল।

পাকিস্তান হয়ত নিজেদের ঢেলে সাজানোর প্রচেষ্টা করবে। তাদের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) বেশ কিছু প্রতিভাবান বোলার উপহার দিয়েছে। এবার তাদের ব্যাটার খোঁজার মিশনে নামা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান জুনিয়র লিগও হতে পারে অন্যতম মাধ্যম। পাকিস্তান আবার হয়ত বিশ্বকাপের জন্যে সত্যিকার অর্থেই লড়াইয়ে নামবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...