প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর পরিসংখ্যানটা অসাধারণ। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের সেই ফর্ম কিংবা ধারাবাহিকতা জাতীয় দলে টেনে আনতে পারেননি সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার দীনেশ মঙ্গিয়া। অবশ্য যুবরাজ সিং, মোহাম্মদ কাইফদের মত তারকাদের ভীড়ে আর নিজের জায়গাটা পাঁকা করতে পারেননি সাবেক এই ক্রিকেটার।
ভারতের প্রথম টি-টোয়েন্টি লিগ আইসিএল যা নিষিদ্ধ লিগ নামে পরিচিত। আইসিএলে যাওয়ার কারণে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) থেকে নিষেধাজ্ঞা পান মঙ্গিয়া। জাতীয় দলের হয়ে মঙ্গিয়ার ক্যারিয়ারটা থমকে যায় আইসিএলের কারণে।
ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞার পর অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন মঙ্গিয়া। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার সাত বছর পর ‘কাবাব ম্যায় হাড্ডি’ নামক মুভি দিয়ে বলিউডে পা দেন মঙ্গিয়া। ওই মুভির এক দৃশ্যে কিংবদন্তি বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চনের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন। যদিও ক্রিকেটের মত মুভিতেও পারফরম্যান্সটা ছিল সাদামাটা। যার কারণে সেখানেও সফল হতে পারেননি মঙ্গিয়া।
বলিউডে ব্যর্থ হবার পর পুনরায় ক্রিকেটে ফেরেন মঙ্গিয়া। অবশ্য এবার কোচ হিসেবে নতুন এক ভূমিকায়। চণ্ডিগড়ের বিখ্যাত ডিএভি কলেজের কোচ হিসেবে যোগ দেন তিনি। একসময় এই কলেজেই পড়াশোনা করেছেন মঙ্গিয়া এবং তৎকালীন কোচ যোগরাজ সিং’য়ের অধীনে খেলেন তিনি। ডিএভি কলেজ প্রাঙ্গনেই মঙ্গিয়া ক্রিকেট স্কুল অব এক্সিলেন্স পরিচালনা করতেন সাবেক এই ক্রিকেটার।
নিষেধাজ্ঞার প্রায় ১২ বছর পর ২০১৯ সালে ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে অবসরের ঘোষণা দেন মঙ্গিয়া। এরপরই সাবেক এই ভারতীয় ক্রিকেটার পাঞ্জাব রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যোগ দেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপিতে)। চণ্ডিগড়ের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে রাজনীতিতে আসেন মঙ্গিয়া।
পাঞ্জাবের হয়েই খেলেছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেট। ভারতের সাবেক তারকা অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংয়ের পারফরম্যান্সের কাছে সাদামাটার পারফর্মে পাত্তা মেলেনি মঙ্গিয়ার। অন্যদিকে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০০২ সালের ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের ফাইনালের পর জাতীয় দলে নিজের জায়গাটা পাঁকা করে ফেলেছিলেন মোহাম্মদ কাইফ। মঙ্গিয়ার জন্য একাদশে জায়গা মেলানোটা দিনে দিনে তখন আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
এরপর ২০০৩ বিশ্বকাপে ভিভিএস লক্ষ্মণকে বাদ দিয়ে দলে মঙ্গিয়াকে সুযোগ দেন তৎকালীন ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। মূলত একজন অতিরিক্ত বোলারের জন্যই মঙ্গিয়াকে সুযোগ দেন সৌরভ। এরপরই বাদ পড়েন দল থেকে। পরের তিন বছরে মাত্র সাত ম্যাচ খেলার সুযোগ পান মঙ্গিয়া। এরপর ২০০৭ বিশ্বকাপে আবার জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। কিন্তু নিজেকে মেলে ধরতে না পারায় দ্রুতই আবার বাদ পড়েন এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার।
ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর মাঝে ব্যবসায়ী হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন মঙ্গিয়া। নিজস্ব মালিকানায় ‘ডিএম’ নামক ক্রিকেট সরঞ্জামের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৮ হাজার রানের মালিক মঙ্গিয়া জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৫৭ ম্যাচে করেছেন মাত্র ১২৩০ রান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের সামর্থ্য আর প্রতিভার সবটা প্রতিফলন দেখাতে পারলেও জাতীয় দলে সেটি ধরে রাখতে পারেননি মঙ্গিয়া।
জাতীয় দলের ব্যর্থতার পর বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে গেলে সেখানেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে ফিরে আসেন মঙ্গিয়া। কোচ হিসেবে নতুন রূপে আবির্ভূত হন সাবেক এই ক্রিকেটার। এরপর সেখান থেকে যোগদান করেন রাজনীতিতে। আপাতত রাজনীতিতে নিজ রাজ্যের জন্য সফলতার ছাপ রাখার চেষ্টা করছেন সাবেক এই অলরাউন্ডার।