করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে ফিরেছিল প্রেসেডেন্টস কাপ ওয়ানডে টুর্নামেন্ট দিয়ে। এরপরের প্রয়াসই বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি। বাস্তব পরিস্থিতির কারণেই এই বছর বিপিএল আয়োজন সম্ভব নয়। বিদেশি ক্রিকেটারদের এনে বায়ো বাবল তৈরি করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ঝামেলার বলেই বিসিবি সেই পথে হাঁটেনি। শুধুমাত্র দেশি ক্রিকেটারদের নিয়েই বিসিবি আয়োজন করছে এই টুর্নামেন্ট।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে এ-গ্রেডের খেলোয়াড় ছিলেন পাঁচ জন। তার মধ্যে সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদুলাহ দুজনকেই দলে ভিড়িয়ে চমক দেখিয়েছে জেমকন খুলনা। দলটির অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়েছে মাহমুদুল্লাহকে। সাকিব আল হাসান নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পরেও মাহমুদুল্লাহকে অধিনায়ক করা এক প্রকার সাহসী সিদ্ধান্তই বলা যায়।
খুলনা দলে পাঁচ জন সলিড ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি রয়েছেন সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ-সহ চারজন অলরাউন্ডার। চার পেসার ও তিন স্পিনারের ব্যালান্সড দলই বলা যায়। ভুলে গেলে চলবে না এই পাঁচ ব্যাটসম্যান, চার পেসার ও তিন স্পিনারের মধ্যে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ নেই। যে দলে সাকিব থাকেন, সেই দলে অটোমেটিকভাবেই দু’জন খেলোয়াড় বেড়ে যায়, সাথে মাহমুদউল্লাহ তো সোনায় সোহাগা।
এত তারার হাটের পাশাপাশি কিছু জায়গায় দুশ্চিন্তাও থেকে যাচ্ছে। সলিড ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইমরুল কায়েস, এনামুল হক বিজয়, শুভাগত হোম চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম চারজনকেই টি-টোয়েন্টি উপযোগী মনে করা হয় না। যদিও বিচ্ছিন্নভাবে তারা সাফল্যের সন্ধান পেয়েছেন, তবুও ২০ ওভারের খেলার আদর্শ ব্যাটসম্যান তারা নন। তাছাড়া স্কোয়াডে উইকেটরক্ষকের আধিক্য একটা রেষারেষির সৃষ্টি করতে পারে। উল্টোদিকে একই পজিশনে একাধিক প্লেয়ার থাকার কারণে নিজেদের মধ্যেই একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে।
আসা যাক সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে। সবাই জানেন, সাকিব ফিরছেন এক বছরের নির্বাসন কাটিয়ে। এই এক বছরে কি মরচে পড়েছে তার ভাণ্ডারে, নাকি আরো শানিত হয়ে ফিরেছেন সেটা সময়ই বলবে। তবে বিভিন্ন ফোরামে সাকিবের সিনিয়রেরা এবং সতীর্থরাও বলছেন, সাকিব চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়। হেরে যাওয়ার মানসিকতাই তার নেই। এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে এগোতে পারলে এবার বাজি ধরাই যায় খুলনার পক্ষে।
পেসারদের মধ্যে আল আমিন হোসেনের জন্য এটা আরেকটা সুযোগই বলা যায়। ২০১৫ তে বিশ্বকাপ চলাকালীন দল থেকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে হঠাৎ করে বহিস্কৃত হবার পরে আর সেভাবে ফেরা হয়নি দলে। বাকি পেসারদের মধ্যে আরিফুল হক, শরিফুল ইসলাম এবং শহিদুল ইসলামের জন্যেও বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি একটি বড় মঞ্চ হবে অবশ্যই। হাসান মাহমুদও মিডিয়াম পেসার হিসেবে যথেষ্ঠ কার্যকর, যার প্রমাণ আগেও অনেকবার পাওয়া গেছে।
স্পিনারদের মধ্যে শামীম পাটোয়ারীর অফ স্পিন, রিশাদ হোসেনের লেগ স্পিন, নাজমুল হোসাইন অপুর বাঁহাতি স্পিনের পাশাপাশি সাকিবের স্পিন বিষ প্রতিপক্ষকে ধ্বসে দেয়ার জন্যে যথেষ্ঠ। আর সাথে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর কার্যকরী স্পিন তো আছেই।
চার অলরাউন্ডারের মধ্যে সাকিব আল হাসান আর মাহমুদুল্লাহের পাশাপাশি আছেন সালমান হোসেন এবং শামীম পাটোয়ারী। জেমকন খুলনার ক্ষেত্রে একই পজিশনে একাধিক খেলোয়াড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। সেটা কাটিয়ে উঠতে পারলে এবারের শিরোপার দাবিদার খুলনাকে বলা যেতেই পারে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ক্ষেত্রে দল গঠনটাকে শিরোপা জয়ের প্রথম শর্ত বলা হয়ে থাকে। সেই কাজটি খুলনা বেশ ভালভাবেই করে ফেলেছে। এবার বাকি রইল মাঠের খেলা। সেখানে ঠাণ্ডা মাথার মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বে সাকিব আল হাসানসহ একদল পরীক্ষিত খেলোয়াড় নিয়ে খুলনা নিশ্চয়ই ঝাঁপিয়ে পড়বে।
- এক নজরে জেমকন খুলনা
স্কোয়াড: মোহাম্মদ মাহমুদুল্লাহ (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, ইমরুল কায়েস, হাসান মাহমুদ, মোঃ আল আমিন হোসেন, এনামুল হক বিজয়, শামীম পাটোয়ারী, আরিফুল হক, মোঃ শরিফুল ইসলাম, শুভাগত হোম চৌধুরী, মো: শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ রিশাদ হোসেন, মো: জাকির হাসান, নাজমুল হোসাইন অপু, সালমান হোসেন, জহিরুল ইসলাম।
কোচ: মিজানুর রহমান বাবুল