বাংলাদেশের বিপক্ষে ‘বাঘ’

ক্রীড়া জগতে প্রায় সব ক্রীড়াবিদদেরই কোন না কোন প্রিয় প্রতিপক্ষ থাকে। অন্য যেকোনো দলের তুলনায় প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পারফরম্যান্স হয় একটু বেশি উজ্জ্বল। আবার কেউ হয়তো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তের জন্ম দেয় বিশেষ কোন দলের বিপক্ষে খেলতে নেমে।

অন্য ক্রীড়াবিদদের মত ক্রিকেটারদের জন্যও এই ব্যাপারটি সত্য। তেমনি এমন কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন যারা বাংলাদেশের সাথে খেললেই হয়ে ওঠে দুর্দান্ত। শুধুমাত্র বাংলাদেশর বিপক্ষে দারুণ কিছু করে বিখ্যাত হয়ে আছে এমন খেলোয়াড়ের সংখ্যাও কম নয়।

  • কাইল মেয়ার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) 

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার কাইল মায়ার্সের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার এখনো অল্প সময়ের। কিন্তু অভিষেকের পর থেকেই বাংলাদেশের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে আছেন তিনি। তাঁর টেস্ট অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে, আর সেই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ২১০ রান করে মহাকাব্যের জন্ম দিয়েছিলেন মায়ার্স। চট্টগ্রামে এই ক্যারিবিয়ানের ব্যাটে চড়েই ৩৯৫ রানের পাহাড় জয় করেছিল উইন্ডিজ।

এছাড়া সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রান করেছেন কাইল মায়ার্স। সবমিলিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের মোট ৮১৭ রানের মধ্যে এই বামহাতি ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের বিপক্ষেই করেছেন ৪১৪ রান। অথচ অন্য দলগুলোর বিপক্ষে এখনো বলার মত কিছু করতে পারেননি তিনি।

  • স্টুয়ার্ট বিনি (ভারত)

২০১৪ সাল বাংলাদেশের জন্য অভিশাপে পরিপূর্ণ ছিল। আর সে-বছরই স্টুয়ার্ট বিনি বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিলেন। নিজের ১৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাত্র ২০ উইকেট পাওয়া বিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে এক ম্যাচেই নিয়েছিলেন ৬ উইকেট, সেই সাথে খরচ করেছিলেন মাত্র চার রান।

১০৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে সেদিন ৫৮ রানেই আটকে দিয়েছিলেন এই ভারতীয় অলরাউন্ডার। কিন্তু এই একটা বিশেষ ম্যাচ বাদ দিলে তাঁর ক্যারিয়ারে স্মরণীয় কোন মুহূর্ত নেই বললেই চলে।

  • আইজাজ চিমা (পাকিস্তান)

২০১২ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালের কথা ভোলার নয় কোন বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীর। জয়ের জন্য যখন শেষ ওভারে মাত্র ৯ রান প্রয়োজন ছিল, তখন অর্ধ পরিচিত পাক পেসার আইজাজ চিমার এর কাছে হেরে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

৩১ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাওয়া আইজাজ চিমা মাত্র ১৪টি ওয়ানডে খেলেছেন। কিন্তু ২০১২ সালে পাকিস্তানকে এশিয়া কাপের শিরোপা এনে দেয়ার ওভারটি ছাড়া তাঁর ক্যারিয়ারে বলার মত কোন অর্জন নেই।

  • চার্লস কভেন্ট্রি (জিম্বাবুয়ে) 

সাঈদ আনোয়ারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহের রেকর্ড লম্বা একটা সময় পর্যন্ত অক্ষত ছিল। তবে জিম্বাবুয়ের ব্যাটার চার্লস কভেন্ট্রি সেই রেকর্ড ভাঙ্গতে না পারলেও সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪ রানের রেকর্ডে ভাগ বসান। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯৪ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেছিলেন এই ডানহাতি, যদিও তামিম ইকবালের ১৫৪ রানের ইনিংসের কারণে তাঁর দল সেদিন জিততে পারেনি।

দুই টেস্ট এবং ৩৯ ওয়ানডে ম্যাচের ক্যারিয়ারে চার্লস কভেন্ট্রির আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি একটিই। তাই বলাই যায়, শুধুমাত্র বাংলাদেশের বিপক্ষে পারফরম্যান্স করেই ক্রিকেট বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

  • জেসন গিলেস্পি (অস্ট্রেলিয়া)

বোলার জেসন গিলেস্পিকে তো সবাই চেনে, কিন্তু ব্যাটসম্যান গিলেস্পির কথা জানে হাতেগোনা কয়েকজন। অবশ্য জানবে-ই বা কিভাবে, এই অজি পেসার তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্য শুধু বাংলাদেশকেই দেখিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাটিংয়ে এসেছিলেন গিলেস্পি।

এরপর আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ২০১ রান। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৮ এর একটু বেশি গড়ে ব্যাটিং করা গিলেস্পির এই ইনিংস এখন পর্যন্ত নাইটওয়াচম্যানদের ক্ষেত্রে সর্ব্বোচ্চ। হয়তো ভবিষ্যতেও কেউ এই রেকর্ড ভাঙ্গতে পারবে না।

  • পল অ্যাডামস (দক্ষিণ আফ্রিকা)

অদ্ভুতুড়ে অ্যাকশনের কারণেই বোধহয় পল অ্যাডামস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। এই প্রোটিয়া স্পিনার ৪৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১৩৪ উইকেট শিকার করেছিলেন; বোলিং গড় ৩৩ এর একটু নিচে। পরিসংখ্যানের হিসেবে সাদামাটা এই অ্যাডামস লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের বিপক্ষে মাঠে নামতেই হয়ে উঠেছিলেন অতিমানব।

মাত্র দুই টেস্টে ১২ জন বাংলাদেশিকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়েছিলেন তিনি, আর বোলিং গড় ছিল ১৪.৯২। কি জানি, দক্ষিণ এশিয়ার দলটির সাথে আরো কয়েক ম্যাচ খেললে হয়তো পল অ্যাডামসের পরিসংখ্যান অনেক বেশি সমৃদ্ধ হতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link