কলম্বাস হয়ে আমেরিকার ফুটবলে

১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল ‘লিগ মেজর লিগ সকার’। এরপর থেকেই প্রায় সময়ই বিশ্ব মিডিয়ার নজর কাড়তে সক্ষম হয় এই লিগ। তবে অধিকাংশ সময়ই আলোচনায় ছিল বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সে লিগের ক্লাবগুলোতে ভেড়া নিয়ে।

অধিকাংশ সময়ই দেখা গেছে সারা বিশ্ব ফুটবলকে মাতিয়ে রাখা খেলোয়াড়রা ক্যারিয়ারের গোধূলী লগ্নে বেছে নিয়েছিলেন এমএলএসকে। এই এমএলএসের বিভিন্ন ক্লাবে খেলা বিশ্বসেরা ফুটবলারদের নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন।

  • ডেভিড বেকহ্যাম (ইংল্যান্ড)

ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ‘স্টাইলিশ’ খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন ইংল্যান্ডের ডেভিড বেকহ্যাম। ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে স্পেন সর্বত্র ছিল তাঁর ফুটবলীয় নান্দনিকতার বিচরণ। তবে এই যে আমেরিকান মেজর লিগ সকারে এত এত মহারথীদের আগমনকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন বেকহ্যাম।

তিনিই প্রথম লস অ্যাঞ্জেলস গ্যালাক্সির হয়ে খেলতে নামেন এমএলএস। এরপর থেকেই বিখ্যাত সব খেলোয়াড়দের আনাগোনা ক্রমশ বাড়তে থাকে আমেরিকান ফুটবল লিগে।

  • থিয়েরি অঁরি (ফ্রান্স)

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন থিয়েরি অঁরি। তাছাড়া ফ্রান্সের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। আর্সেনালের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ মাতানো এই স্ট্রাইকারকে দলে ভিড়েছিল নিউ ইয়োর্ক রেড বুলস।

নিজেদের নতুন স্টেডিয়ামে ফুটবলের অন্যতম তারকাকে এনে দর্শকদের আকর্ষণ করতে চেয়েছিল নিউ ইয়োর্ক। অঁরি নিজের ফুটবলীয় নৈপুন্যে তিনি দর্শকদের মাঠে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন। শুধু তাই নয়। তিনি দলটির হয়ে প্রায় পঞ্চাশের বেশি গোলও করেছেন।

  • জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ (সুইডেন)

জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ নিজেকেই আখ্যায়িত ‘সিংহ’ বলে। নিজের ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল সময় তিনি ছিলেনও একজন সিংহ। প্রতিপক্ষ রক্ষণের এক আতংক। সময়ের পরিক্রমায় তিনিও নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন এমএলএসে। তিনি সেখানে খেলেছিলেন লস অ্যাঞ্জেলস গ্যালাক্সির হয়ে।

খবরের শিরোনামে তিনি থাকতে চাইতেন। আর নিজের সাথে এমএলএসকেও খবরের শিরোনামে রাখতেন ইব্রাহিমোভিচ। দলটির হয়ে তিনি বেশ কিছু গোল করেছিলেন। তবে আফসোস কখনো তিনি শিরোপা জিতে দেখেননি।

  • ডেভিড ভিয়া (স্পেন)

স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার এক গৌরবময় অভিজ্ঞতা রাঙিয়ে রেখেছিল ডেভিড ভিয়ার পুরো ফুটবল ক্যারিয়ার।ক্যারিয়ারের আদ্যোপান্ত তিনি ছিলেন দূর্দান্ত একজন আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড়।

এমএলএসে গিয়েও তাঁর পারফরমেন্সে পড়েনি বিন্দুমাত্র ভাটা। তিনি বরং আপন রঙে রাঙিয়েছেন নিউ ইয়োর্ক এফসির ইতিহাস ও প্রাঙ্গণ। মেজর লিগ সকারকে আরও বেশি আলোকিতই করেছেন ডেভিড ভিয়া।

  • ওয়েন রুনি (ইংল্যান্ড)

তিন মৌসুমের জন্যে ওয়েন রুনি যুক্ত হয়েছিলেন এমএলএসের দল ডিসি ইউনাইটেডের সাথে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে নিজের ক্যারিয়ারে স্বর্ণালী দিন পার করা ওয়েন রুনি নতুন এক চ্যালেঞ্জের খোঁজে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্যের সকার লিগে।

সেখানে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাটাই করেছেন ওয়েন রুনি। ক্লাবটির হয়ে তিনি ৪৮টি ম্যাচ খেলে ২৩ খানা গোলও করেছেন। বয়সের কোন প্রভাবই যেন ছিলনা তাঁর পারফরমেন্সে। তবে মেজর লিগ সকারে যাওয়া তারকাদের মধ্যে ওয়েন রুনি অন্যতম।

  • কাকা (ব্রাজিল)

ব্রাজিলের রাজপুত্র বলা হত কাকাকে। এসি মিলান থেকে রিয়াল মাদ্রিদের মত বড় ক্লাবগুলোতে খেলার অভিজ্ঞতাও ছিল তাঁর। নিজের অনবদ্য পারফরমেন্সের কারণে তিনি জিতেছিলেন ব্যালন ডি’অর পুরস্কারও।

এমন একজন তারকা ফুটবলার মেজর লিগ সকারের আকাশটা আরও বেশি উজ্জ্বলই করেছে। অরলান্ডো সিটির হয়ে তিনি নেমেছিলেন যুক্তরাষ্ট্যের ফুটবল মাঠে। সেখানেও দাপিয়ে বেড়িয়েছেন কয়েক মৌসুম। এরপর অরলান্ডোর জার্সি গায়ে জড়িয়েই আক্ষেপে মোড়া ক্যারিয়ারটার সমাপ্তি টানেনে কাকা।

  • বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার (জার্মানি)

২০১৪ সালে জার্মানি যেবার বিশ্বকাপটা নিজেদের করে নেয় চতুর্থ বারের মত, সে দলে ছিলেন বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ক্লাব পর্যায়ে তিনি ছিলেন দূর্দান্ত।

নিজের সময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবেই বিবেচিত হতেন শোয়েনস্টেইগার। ক্যারিয়ারের একেবারে শেষভাগে তিনি আমেরিকায় গিয়েছিলেন নতুন এক অভিজ্ঞতার খোঁজে। সিকাগো ফায়ারের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন তিনি।

  • ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড (ইংল্যান্ড)

ইংলিশ ক্লাব চেলসির হয়ে মাঠ মাতানো মিডিফিল্ডার ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডও খেলেছিলেন মেজর লিগ সকার। তবে উজ্জ্বল ছেড়ে আসা ক্যারিয়ারটা থমকে যায় ইনজুরির কারণে।

নিউ ইয়োর্ক এফসির হয়ে তিনি খেলেছেন কেবলমাত্র ৩১ ম্যাচ। ইনজুরির কারণে অধিকাংশ সময়ই থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে। তবে এমএলএস-এর জৌলুশ বাড়ানোর পাশাপাশি সেখানকার খেলোয়াড়দের মাঝে নিজের অভিজ্ঞতা বিলিয়ে দিয়েছেন ল্যাম্পার্ড।

  • দিদিয়ের দ্রগবা (আইভরি-কোস্ট)

আফ্রিকা মহাদেশের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবেই বিবেচিত হন দিদিয়ের দ্রগবা। চেলসির হয়ে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারটার সমাপ্তি ঘটে মেজর লিগ সকারে এসে থামে। এক মৌসুমের জন্যে আফ্রিকান এই মহাতারকা গায়ে জড়িয়েছিলেন ফিনিক্স রাইসিং এর জার্সি।

১৪ খানা গোলের আনন্দেও তিনি ভাসিয়েছেন দলটির সমর্থকদের। তবে এক মৌসুম শেষেই ক্লাবটির হয়ে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলেন দিদিয়ের দ্রগবা।

  • গ্যারেথ বেল (ওয়েলস)

স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচখানা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার অনন্য রেকর্ডের ভাগিদার ওয়েলসের খেলোয়াড় গ্যারেথ বেল। রিয়াল মাদ্রিদের সাথে সম্পর্কে অবণতি, আর নিজের ইনজুরির কারণে পর্যাপ্ত প্লেয়িং টাইম না পাওয়ার কারণে তিনি ছেড়েছেন দল।

আর রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে তাঁর নতুন ঠিকানা লস অ্যাঞ্জেলস ফুটবল ক্লাব। আমেরিকান ক্লাবটিতে তিনি যুক্ত হয়েছেন ২০২২-২৩ মৌসুমের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link