১৯৮৩ সালের কথা। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ। সাহার বিমানবন্দর, বোম্বাই (মুম্বাই তখনো কালের গর্ভে)। সদ্য জেতা প্রুডেনশিয়াল কাপ নিয়ে ঘরে ফিরছে ভারত। উপচে পড়া লোক অ্যারাইভাল লাউঞ্জে।
টিমের খেলোয়াড়দের জিনিসপত্র পরে বেরোবে, এটাই তখন দস্তুর ছিল। সুরক্ষিত এলাকার বাইরে জিনিসপত্র ছাড়াই টিম আসা মাত্র পাগল হয়ে গেল জনতা। প্রায় ‘স্টাম্পিড’ পরিস্থিতি। এ ওর ঘাড়ের উপর দিয়ে, পায়ের উপর দিয়ে, যেভাবে হোক পৌঁছতে চাইছিলেন কপিল দেব-সুনীল গাভাস্কার-মহিন্দর অমরনাথ-কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত-সন্দীপ-যশপাল-কীর্তি-কিরমানি-মদনলাল-বিনি-বলবিন্দার-বেঙ্গসরকার-শাস্ত্রী-ওয়ালসনদের কাছে।
এইভাবেই সামনে থাকা একটি গুডস ট্রলির উপরেও উঠে পড়েন কেউ কেউ। যিনি ট্রলিটা ঠেলে নিয়ে আসছিলেন, তিনি গেলেন ছিটকে পড়ে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দী করেন আজকালের আলোকচিত্রী শিবশঙ্কর কাঞ্জিলাল (শিবুদা)। আজকের দিন হলে অসংখ্য পুরস্কারে পুরস্কৃত হত ঐ ছবিগুলি। ওরই মধ্যে একটি ছবি নিয়ে পরদিন ‘আজকাল’-এ অশোক দাশগুপ্ত লিখেছিলেন এক চোখে জল আনা লেখা, ‘এই হল ভারতবর্ষ’ শিরোনামে।
কেন? কেননা, সেই ছিটকে পড়ে যাওয়া বছর ৩৪-এর ভদ্রলোকও একটু আধটু ক্রিকেট খেলে (১৪ বছর ধরে, ১৯৬৯ – ১৯৮৩) তার মাস কয়েক আগে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলেছিলেন। ৯১ টেস্টে ১৫৫ ইনিংসে ১৪ টি শতক আর ৩৫ টি অর্ধ-শতক সহ ৬০৮০ রান ছিল তাঁর। এছাড়াও ২৫ টি একদিনের ম্যাচে ২৩ ইনিংসে দুটি অর্ধ-শতক সহ ৪৩৯ রান করেছিলেন তিনি। এবং বিশেষজ্ঞ ভাষ্যকার হিসেবে ইংল্যান্ডে প্রুডেনশিয়াল বিশ্বকাপের মাঠে হাজির ছিলেন।
১৯৮০-র গোল্ডেন জুবিলী টেস্টে (ভারত / ইংল্যান্ড) আম্পায়ারের ভুল নির্দেশে আউট হয়ে যাওয়া ইংল্যান্ড উইকেটরক্ষক বব টেলরকে (আসলে আউট ছিলেন না) মাঠে ফিরিয়ে এনেছিলেন তখন ভারত অধিনায়ক ঐ ভদ্রলোক। আর ঐ ঘটনাটার জন্যই ১০ উইকেটে ম্যাচটা হারে ভারত।ম্যাচটা সরকারীভাবে ইংল্যান্ড জেতে।আসলে ম্যাচটা জিতেছিল ক্রিকেট আর তার স্পিরিট।
বিশ্বকাপ জিতে ফেরা নায়কদের দেখতে মুম্বাই বিমানবন্দরে জনতা তার ট্রলির উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল সেদিন। অবসৃত তিনিও ঐ কপিল-সানি-জিমি সহ নায়কদের সঙ্গেই ফিরছিলেন সেদিন ইংল্যান্ড থেকে। ভদ্রলোকের নাম? গুন্ডাপ্পা রঙ্গনাথ বিশ্বনাথ। ভারতীয় ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা শিল্পী ব্যাটসম্যান মানা হয় যাকে, আজও।
ঘটনাটা প্রমাণ করেছিল, আমজনতার স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি অতীতকে স্বীকৃতি দেয় না। পুজো পান বিজয়ীরাই, দ্বিতীয় বলে কিছু হয় না।এবং এটা আজও দু:খজনক হলেও সত্যি, ঐতিহাসিকভাবেই।