তিনে আজো ‘বাশার ভাই’ সেরা

প্রতিরক্ষা সামগ্রী যা রয়েছে সব পরে বসে রয়েছেন। নতুন বলটা একটু পুরান হোক এরপর না হয় নামা যাবে। তিন নম্বরে বসে থাকা ব্যাটারের পরিকল্পনা তো থাকে সেটাই। কিন্তু না। এই বিশ্বভ্রমাণ্ড আপনি যা চান অধিকাংশ সময়ই আপনার চাওয়ার সাথে একবিন্দুতে এসে পৌঁছায় না। নতুন বলটা পুরান তো দূরে থাক, একবার মাটিতে পড়া মাত্রই বাইশ গজে নেমে যেতে হয় তিন নম্বরে নামা ব্যাটারদের।

মাথার উপর তখন ভীষণ চাপ। একে তো প্রতিপক্ষ পেসারদের সামলানোর চাপ। অন্যদিকে নতুন বলের সুইং বুঝে খেলার একটা চাপ। আবার দ্রুতই উইকেট পতনের ফলে দলের ব্যাটিং অর্ডারের ধ্বস ঠেকানোর চাপ। তিন নম্বরে যে নামেন তাঁকে রাজ্যের চাপ মাথায় নিয়েই নামতে হয় বাইশ গজে। নেমে নিজের জন্যে, দলের জন্যে পারফরম করতে হয়। আফসোস, এত চাপ সামলে নেওয়ার মত সামর্থ্যে সবার থাকে না।

টেস্ট ক্রিকেটে তো চাপটা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কতশত হিসেবের মারপ্যাঁচে চাপ যেন বর্গাকারে বাড়ে। বাংলাদেশ অন্তত লাল বলের ক্রিকেটে সে চাপ সামলে নেওয়ার মত এখন অবধি কাওকে খুঁজে পায়নি। সেই ২০০৮ সালে ক্যারিয়ারের ইতি টেনে নেওয়া হাবিবুল বাশার সুমন এখন অবধি তিন নম্বরে বাংলাদেশে সেরা ব্যাটার। দীর্ঘ একটা পথ পারি দিয়েও আজ পর্যন্ত হাবিবুল বাশারকে টপকে যাওয়ার মত ব্যাটার খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ।

কতজনকেই তো চেষ্টা করা হল এই গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে। তবে লাভের লাভ যেন কিছুই হচ্ছে না। এই যেমন হালের নাজমুল হোসেন শান্তর কথাই ধরুণ। টানা কয়েক সিরিজ ধরেই শান্ত খেলছেন তিন নম্বর পজিশনে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি ওপেনার হলেও দল চাইছে তিনি বাংলাদেশের হয়ে খেলুক তিন নম্বরে। তবে তিনি যেন ব্যর্থতার মহাসাগর সাঁতরে তীর খুঁজে পেলেন না এখনও।

শান্ত ১৬ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন এই তিন নম্বর পজিশনে। এখনও তাঁর গড় ২৮.২৫। অথচ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করলে হাবিবুল বাশারে ৩১.৯৩ গড় বড্ড বেশি সময়োপযোগী। সেখানটায় শান্ত কিন্তু ব্যর্থ। আবার আমাদের টেস্ট ইতিহাসে সেরা ব্যাটার মুমিনুলের কথাই ধরা যাক। তিনিও খেলেছেন তিন নম্বর পজিশনে। তাঁর গড়টা বাকি দুইজনের থেকে বেশ এগিয়ে ৩৪.২৪। তবে তিন নম্বর জায়গাটা তিনি হারিয়েছেন। সাথে হারিয়েছেন ফর্ম।

হয়ত তাঁর ফর্মহীনতার কারণই হচ্ছে পজিশন পরিবর্তন। তবে সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের টেস্ট ক্রিকেট কিন্তু এখন আর আগের জায়গায় নেই। হাবিবুল বাশার যখন টেস্ট খেলতেন তখন বাংলাদেশ হাতে গোনা কয়েকটি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেত। আমাদের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতাও খুব বেশি ছিল না। তবুও হাবিবুল বাশার তিন নম্বরে একটা আস্থার স্তম্ভ হতে পেরেছিলেন। সমস্যাটায় এখানটায়।

বাংলাদেশের কোন ব্যাটারই তিন নম্বরে আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারছেন না। আমাদের এখনও মানদণ্ড হিসেবে হাবিবুল বাশারকেই কল্পনা করতে হয়। অথচ তিনি খেলা ছেড়েছেন আজ প্রায় ১৫ বছর হতে চলেছে। দেড় দশকেও সে জায়গাটা পূরণ করতে পারেনি। মুমিনুল হক হয়ত তাঁর সে জায়গাটা ফিরে পেলে নিজের ফর্ম ফিরে পেতে পারেন। তবে তিনিও তো প্রায় তাঁর ক্যারিয়ারের শেষের দিকে চলে এসেছেন।

মোহাম্মদ আশরাফুল, শাহরিয়ার নাফিসরাও এই পজিশনে মাঝেসাঝে এসেছিলেন। তারাও নিজেদের প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। থিতু হতে পারেননি। এক মুমিনুল ছাড়া আসলে আমাদের এই পজিশনে বলার মত কেউই নেই। সুযোগের সদ্ব্যবহার তরুণরা করতেও পারছেন না। অথচ বিশ্বের সফল ব্যাটারদের একটা বড় অংশ কোন না কোন সময়ে এই তিন নম্বরে খেলেই নিজের পরিসংখ্যান আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছেন।

কিন্তু আজ অবধি এই পজিশনে বাংলাদেশের হাল ধরবার মত একজন বিশ্বামানের ব্যাটার খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই ব্যর্থতা তরুণদের নাকি নির্বাচকদের, সে নিয়ে বিস্তর এক বিতর্ক অনুষ্ঠান হতে পারে। এই না পাওয়ার বৃত্ত থেকে তবুও বেড়িয়ে আসা সম্ভব হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link