পিটারসেনের পরিণতিই বরণ করবেন হেলস!

পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের আগে তিন ইংলিশ ক্রিকেটার সহ সাতজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় পুরো ইংল্যান্ড দলই এখন আইসোলেশনে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘোষিত দল দ্রুত পরিবর্তন করে ইসিবি নতুন করে ১৮ সদস্যর দল ঘোষণা করছে, যেখানে নয় জন নতুন মুখ। বেন স্টোকস প্রথম স্কোয়াডে না থাকলেও বিপাকে পড়ায় স্টোকসকে অধিনায়ক করেই নতুন দল ঘোষণা করছে ইসিবি।

আমার প্রসঙ্গটা এই দল নিয়ে নয়। প্রথম স্কোয়াড ঘোষণার আগে আশা না করলেও এই স্কোয়াডে অ্যালেক্স হেলসকে না দেখে বেশ অবাক হলাম। এর মাধ্যমে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) পক্ষ থেকে এক প্রকার জানান দিলো যে হেলসকে তারা দলে বিবেচনা করবেনা। এবং হেলসকে নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা ভাবনাও নাই।

তাহলে কি অ্যালেক্স হেলসের ক্যারিয়ার শেষ?

দুই বছর আগে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক আগ মূহূর্তে হঠাৎ ব্যক্তিগত কারণ দেখায়ে ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ায় অ্যালেক্স হেলস। পরবর্তীতে জানা যায় নিষিদ্ধ ঔষধ নেওয়ার কারণে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন তিনি। প্রথমে মাত্র ২১ দিনের জন্য নিষিদ্ধ করা হলেও পরবর্তীতে তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাদ দেওয়া হয়। এমনকি ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলেও আর রাখা হয়নি তাকে। সে সময় হেলসকে বাদ দেওয়ার নেপথ্যে ছিলো বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাশলে জাইলস ও নির্বাচকদের প্রধান এড স্মিথ।

দোষ যেহেতু করেছে অবশ্যই সেটার শাস্তি পাবে, এবং মনে করি পেয়েছেও! কিন্তু দল থেকে বাদ পড়ার দুই বছর পার হলেও আর জাতীয় দলে ডাক পাননি হেলস। সম্প্রতি চলতি বছর বিগ ব্যাশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি! সিডনি থান্ডার্সের হয়ে ১৫ ম্যাচে প্রায় ৩৯ গড়ে ৫৪৩ রান করেন হেলস। এক সেঞ্চুরির সাথে ছিলো তিন ফিফটি।

১৬১.৬০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন হেলস! তাঁর আশেপাশে বলতে শুধু ক্রিস লিন (১৫৪.৭২)। বাকিদের কেউই ১৫০ স্ট্রাইক রেট ছুঁতে পারেনি। এরপরেও সে জাতীয় দলে ডাক পায়নি। এরপর সিডনির কোচ সাবেক কিউই পেসার শেন বন্ড বেশ ক্ষোভ ঝাড়ছিলো ইসিবির উপর। সেখানে ‘হেলসের শাস্তি অতিরিক্ত’ বলে আখ্যা দেয় বন্ড।

আজকের ঘোষিত নতুন দলে যেখানে কাউন্টি ক্রিকেটের সেরা পারফর্মাররা জাতীয় দলে ডাক পেলো। সেখানে অভিজ্ঞ হেলস উপেক্ষিত! স্কোয়াড ঘোষণার পর সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার মাইকেল ভন এক টুইট বার্তায় বলেন, অ্যালেক্স হেলস নেই! তার মানে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ তার? আমরা সবাই ভুল করি। কিন্তু এটার জন্য এতো বড় শাস্তি!

এর আগে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে আরো অনেক ক্রিকেটারই অপরাধ করেছে, শাস্তিও পেয়েছেন। আবার জাতীয় দলে ফিরেও এসেছেন। বেন স্টোকস নিজেই সম্ভবত কয়েকবার শাস্তি পেয়েছিলো। কিছুদিন আগে কৈশোরের এক ভুলের কারণে ওলি রবিনসনকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় দল থেকে নিষেধাজ্ঞা দিছিলো ইসিবি। যেই ভুলের জন্য সে ক্ষমাও চাইছে এবং সে যেই ভুলটা তার অল্প বয়সে করছে সেটার শাস্তি তার পুরো ভবিষ্যত নষ্ট হবে? তবে সম্প্রতি দেখলাম ইসিবি সেই শাস্তি কমায়ে আনছে। রবিনসন দ্রুতই আবার ইংল্যান্ড ক্রিকেটে ফিরবে।

সবাই যদি নিজেদের ভুলের জন্য ক্ষমা পায় তাহলে হেলস কেনো না?! হেলস নিজেও সম্ভবত জানে না ঠিক কি কারণে ইসিবি তাকে দলে বিবেচনা করছে না। হয়তো ভিতরে কোনো অজানা কারণ আছে! ইসিবির এমন আচরণ নতুন না।

হেলসের কথা মনে আসলে কেভিন পিটারসেনের কথা মনে পড়ে! জোরপূর্বক তাকে অবসর নিতে বাধ্য করা হইছিলো। কেভিনের ক্যারিয়ার শেষ করার পিছনে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডই দায়ী। এখন তাদের বলির শিকার হচ্ছেন অ্যালেক্স হেলস। আপাতত হেলসের সামনে জাতীয় দলের রাস্তাটা বেশ কঠিন। অনেকটাই বন্ধ প্রায়! ভাগ্য যদি কখনো সহায় হয় তাহলে হয়তো ফিরতে পারবেন। নাকি পারবেন না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link