হনুমা ‘সুযোগসন্ধানী’ বিহারি

বিশাখাপাটনাম, ২০১৯। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাটিতে তিন টেস্টের জন্য প্রস্তুতিতে ভারত দল। ২০১৯-২১ আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ঘরের মাটিতে ভারতের প্রথম ম্যাচ। ওই ম্যাচে অতিরিক্ত একজন ব্যাটার খেলানোর পরিকল্পনা করছিলো ভারত। আর সেখানেই ঘরের মাটিতে প্রথমবার দলে সুযোগ পান হনুমা বিহারি।

ভারতের সাবেক ফিল্ডিং কোচ রামাকৃষ্ণান শ্রীধর হনুমাকে হায়দ্রাবাদের সেন্ট জোন্স ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে কোচিং করিয়েছিলেন। বলতে গেলে শ্রীধরের হাত ধরেই জাতীয় দলে উঠে আসা বিহারির। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওই সিরিজে ভাইজাগ টেস্টের আগে শ্রীধরের কাছে এসে বিহারি বললেন, ‘স্যার এই টেস্টে আমার খেলা উচিত না। বরং আমার জায়গায় একজন অতিরিক্ত বোলার খেলানো উচিত। আমাদের ছয় ব্যাটারের প্রয়োজন নেই।’ ওই সিরিজে রোহিত শর্মা ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। তারপরেও মোহাম্মদ শামির বোলিং দাপটের কারণে পঞ্চম দিনে জয় পায় ভার‍ত।

শ্রীধর এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, ‘আগের টেস্টে জ্যামাইকায় সেঞ্চুরি পাওয়া সত্ত্বেও বিহারি দেখছিল আমার একজন অতিরিক্ত বোলার প্রয়োজন। তাই সে নিজের জায়গা ছাড়তেও রাজী ছিল।’ এরপর টিম ম্যানেজমেন্ট বিহারীর কথায় সাড়া দিয়ে ওই টেস্টে উমেশ যাদবকে দলে নেয়। ওই টেস্টে ইনিংস ও ১৩৭ রানের বিশাল জয় পায় ভারত!

শ্রীধরের মতে বিহারি যেকোন গেইম রিড করতে পারেন সহজেই! তাঁর বিচক্ষণতা সাবেক এই ফিল্ডিং কোচের নজরকেড়েছে বিশেষভাবেই। এমনকি রিজার্ভ প্লেয়ার কিংবা ডাগআউটে থাকলেও বিহারি দলকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতেন।

শ্রীধর মজার ছলে বলেছিলেন, ‘আমরা বিহারীকে সেনা (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) ডাকি। কারণ সে শুধু সেনা দেশগুলোতেই খেলে।’

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনি টেস্টে বিহারীর অসাধারণ পারফরম্যান্সের পরেও নাখোশ ছিলেন শ্রীধর। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁকে বলেছিলাম কেনো তুমি ইনজুরড হলে? তোমার ফিট থাকা দরকার ছিলো। ‘ কারণ ওর নিজের ফিটনেসের গুরুত্ব বোঝার দরকার ছিলো।’

শ্রীধরের মতোই হনুমার ছেলেবেলার ক্রিকেট কোচ ছিলেন জন মনোজ। সেন্ট জোনস ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে কোচিং করাতেন তিনি। শ্রীধরের কাছেই অনূর্ধ্ব ১৩ দলে বিহারিকে নিয়ে আসেন মনোজ। স্কুল ক্রিকেটে বিহারির দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

জন বলেন, ‘সবশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ওকে দলে না নেওয়ায় আমি হতাশ হয়েছি। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ দলের সফরে তাঁকে পাঠানো হলো, আবার খুশি হলাম। আমি সবসময়ই তাঁকে বলেছি, ‘ তোমার সময় আসবে, অপেক্ষা কর।’

সিডনিতে সেই ঐতিহাসিক টেস্টের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ সহ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও সুযোগ পাননি বিহারি। সবশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও তার জায়গায় সুযোগ পান শ্রেয়ার আইয়ার। এরপর সবশেষে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আবারও খেলার সুযোগ পান বিহারি! বিরাট কোহলি ও আইয়ার না থাকায় মূলত সুযোগ মেলে বিহারির। প্রথম ইনিংসে ২০ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন অপরাজিত ৪০ রানের ইনিংস।

এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাটিতে প্রথম টেস্টেই সুযোগ পান তিনি। তিনে ব্যাট করতে নেমে খেলেন ৫৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। প্রায় সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৩ টেস্ট। যেখানে বিহারির অভিষেকের পর ৩৫ টেস্ট খেলেছে ভারত! ৫,৬,৭ এ ব্যাটিং করা বিহারি এবার সুযোগ পেয়েছেন তিনে! তবুও এখন পর্যন্ত দলে কোনো স্থায়ী জায়গা পাননি এই ব্যাটার।

বিহারিকে দলে জায়গা পাঁকা করতে হলে প্রতিনিয়ত পারফরম্যান্সের লড়াই করতে হবে শ্রেয়াস আইয়ার, শুভমান গিলদের সাথে। তবে শ্রীধর মনে করেন তিন নম্বরে বিহারি আদর্শ একজন ব্যাটার হতে পারে! টেকিনিকের জন্য পুজারা একটু এগিয়ে থাকলেও সব দিক মিলিয়ে বেশ সম্ভাবনাময়ী এক রাইজিং স্টার হনুমা বিহারি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link