যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড আছে তাঁর। চাইলে সুনিশ্চিত জীবনের ভরসায় পাড়ি জমাতে পারতেন সকল স্বপ্ন সত্যি হওয়ার দেশ আমেরিকায়। হার্শাল প্যাটেল যাননি। যাবেন কি করে, তিনি যে হতে চান বড় ক্রিকেটার।
অনেক দিন ধরেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলছেন প্যাটেল, কিন্তু বড় স্বপ্ন দেখাটা পূর্ণতা পাচ্ছিল না। অবশেষে সেই স্বপ্নটা উঁকি দিল ১৪ তম আসরের প্রথম ম্যাচেই। আইপিএল টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেটের দেখা পেলেন তারকাবহুল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে।
প্যাটেলের প্রিয় বিষয় মনোবিজ্ঞান। মানুষের ভেতরটা পড়তে ভালবাসেন। বোঝা গেল, ক্রিকেট মাঠেও সেটা কাজে লাগাচ্ছেন, অন্তত ব্যাটসম্যানদের মনাটা ভালভাবেই পড়তে পারছেন তিনি।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ক্রিস লিনের ঝড়ে দারুণ শুরু করে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। দলীয় ১৬ ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসেই হার্দিক পান্ডিয়াকে লেগ বিফোরে ফাঁদে ফেলে নিজের প্রথম উইকেট শিকার করেন হার্শাল প্যাটেল। এরপর নিজের তৃতীয় ও দলীয় ১৮ তম ওভারে ঈশান কিষাণকেও একই ভাবে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান তিনি।
মুম্বাইয়ের ইনিংসের শেষ ওভারে বল করতে এসে প্রথম দুই বলেই ক্রুনাল পান্ডিয়া ও কাইরেন পোলার্ডকে আউট করে হ্যাটট্রিকের সুযোগ বানান প্যাটেল! পরের বলে অভিষিক্ত মার্কো জেনসেনকে করা ইয়র্কার লেন্থের বল অল্পের জন্য লেগ স্টাম্প মিস করলে তার হ্যাট্রিকের আশা নিভে যায়! তবে পরের বলেই জেনসেনের স্টাম্প উড়িয়ে দিয়ে হ্যাাট্রিকের আক্ষেপ নিভিয়ে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগারের দেখা পান।
৪ ওভারে মাত্র ২৭ রানের বিনিমনে পাঁচ উইকেট শিকার করেন হার্শাল প্যাটেল। শেষ ওভারে এক রান আউট সহ চার উইকেটের বিনিময়ে দেন মাত্র এক রান! তার দূর্দান্ত বোলিংয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫৯ রানে আটকে যায়। এর আগে আইপিএল ক্যারিয়ারে ৪৮ ম্যাচে ৪৬ উইকেট পেলেও কখনোই পাঁচ উইকেটের দেখা পাননি।
আইপিএলের ১৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে কেউ পাঁচ উইকেট নিল। আর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে এটা তৃতীয় সেরা বোলিং। যদিও, আমেরিকায় স্থায়ী হয়ে গেলে হয়তো এর কোনোটাই আর হয় না।
২০০৫ সালে তার পুরো পরিবার আমেরিকার নাগরিকত্ব পেয়ে সেখানেই স্থায়ী হয়। কিন্তু ছোট থেকে ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন দেখা হার্শাল প্যাটেল ফিরে এসেছেন নিজ জন্মভূমিতেই। মাত্র ৮ বছর বয়সেই তার ছেলেবেলার কোচ তারাক ত্রিভেদির অধীনে অনুশীলন করা শুরু করেন। তাঁকে ভারতে রেখে দেওয়ার পেছনে এই কোচেরও বড় ভূমিকা ছিল। বড় ভাই তপন প্যাটেলও কোচের সেই আগ্রহে সায় দেন।
এরপর ভারতের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে সক্রিয় হন। অনূর্ধ্ব-১৯ খেলোয়াড়দের নিয়ে আয়োজিত ভিনু মানকড় ট্রফিতে সুযোগ পান। ২০০৮-০৯ মৌসুমে ২৩ উইকেট শিকার করেন তিনি। ২০০৯ সালে গুজরাট ক্রিকেট দলের হয়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বিজয় হাজারে ট্রফিতে মহারাষ্ট্রর বিপক্ষে তাঁর অভিষেক হয়।
২০১০ সালে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের স্কোয়াডে থাকলেও তিনি কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। একই বছর ২০১০ আইপিএলে ৮ লাখ রুপিতে তাকে দলে নেয় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। কিন্তু সেখানেও তিনি এক ম্যাচও খেলার সুযোগ পাননি।
রঞ্জি ট্রফিতে গুজরাটের হয়ে খেলার সুযোগ না পাওয়ায় এরপর হরিয়ানার হয়ে খেলা শুরু করেন হার্শাল! প্রথম রঞ্জি আসরেই (২০১১-১২ মৌসুম) বাজিমাত করেন। কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে যথাক্রমে কর্ণাটকা ও রাজস্থানের বিপক্ষে আটটি করে উইকেট নেন। মৌসুম শেষ করেন ২৮ উইকেট নিয়ে। কালক্রমে হরিয়ানা দলের অধিনায়কত্বও পেয়েছেন।
২০১১ সালে হারিয়ানার হয়ে নিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন তিনি৷ ব্যাঙ্গালুরু বিপক্ষে ৫ উইকেট পাওয়ার পর তিনি সবার নজরে আসেন! এরপর ২০১১ এবং ১২ দুই আসরের আইপিএলে তাঁকে নিলামে কিনে নেয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। ২০১২ সালে তাঁর আইপিএল অভিষেক। এর মধ্যে কিছু উত্থান পতন এসেছে। ২০১৮ সালে ২০ লাখ রুপিতে তাকে দলে নেয় দিল্লী ক্যাপিটালস। এরপর এবারের আসরের আইপিএলের নিলামে তাকে পুনরায় নিলাম থেকে কিনে নেয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। আর প্রথম ম্যাচেই সেই ভরসার প্রতিদান দিলেন হার্শাল।