ভারতের কন্ডিশনে ‘বাজবল’ কৌশল কতটা উপযোগী?

টেস্ট ক্রিকেটে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ‘বাজবল’ কৌশলে গত কয়েক বছরে দারুণ সব সাফল্য পেয়েছে ইংল্যান্ড। তবে সেই সাফল্যের ধারা কি অব্যাহত থাকবে ভারত সফরে এসে? আপাতত চলমান সিরিজের চিত্র যা বলছে, তাতে ইংলিশদের ব্যর্থতার পাল্লায় নতুন সংযোজন হতে যাচ্ছে ভারত সফর।

ভারতের স্পিন দূর্গে এসেও অবশ্য শুরুতে চমক দেখিয়েছিল ইংল্যান্ডই। হায়দ্রাবাদ টেস্ট জিতে সিরিজে এগিয়ে গিয়েছিল তারাই। তবে এর পরের দুটি টেস্টে হেরে সিরিজ হারের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বেন স্টোকসের দল। বাজবল তত্ত্বের কোনো ফর্মুলায় যেন কাজে লাগছে না ভারতের এই কন্ডিশনে। বাজবল যুগে এসে জো রুটের রিভার্স স্কুপ বিখ্যাত হয়েছে। কিন্তু ভারতে এসে সেই রিভার্স স্কুপেই বেশি ভুগছেন ইংলিশ এ ব্যাটার।

শুধু তাই নয়। উড়ন্ত শুরু করেও তিন টেস্টেই ইংল্যান্ডের সংগ্রহ থেমেছে অল্প রানে। এই যেমন রাজকোট টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২ উইকেটে ২২৪ রান নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থাতেই ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু সেই ইংল্যান্ডেরই আবার ইনিংস থেমে যায় ৩১৯ রানে। অর্থাৎ শেষ ৯৫ রান তুলতেই তাঁরা হারায় ৮ উইকেট।

এমন ব্যাটিং কলাপ্সের নমুনা মিলেছে বাকি দুই টেস্টেও। হায়দ্রাবাদ টেস্টের প্রথম ইনিংসে শেষ ৭২ রানে হারায় ৮ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসের মাঝে ৫২ রান তুলতে ৪ উইকেট হারায় স্টোকসরা। এরপর বিশাখাপত্তনম টেস্টেও একই পরিণতি বরণ করেছে ইংল্যান্ড। মোদ্দা কথা, ভারতের বোলিং আক্রমণের সামনে ইংলিশ ব্যাটারদের বাজবল কৌশল পুরোপুরি বৃথা যাচ্ছে।

অবশ্য বাজবল কৌশলে ইংল্যান্ডের সফল হওয়ার সম্ভাবনাটাও বেশ ক্ষীণই ছিল। এখানে সফল হতে হলে মূলত স্পিনারদের বিপক্ষেই ভাল খেলতে হবে। কিন্তু ইংলিশ ব্যাটাররা এক রবীন্দ্র জাদেজাতেই কুপোকাত হয়েছে গত ম্যাচে।

এ ছাড়া কুলদ্বীপ যাদবের স্পিনের কুলকিনারা খুঁজে পায়নি তাঁরা। তাছাড়া ভারতের বেশির ভাগ পিচই স্পিনসহায়ক। ইংল্যান্ড এখন পর্যন্ত তাদের বাজবল তত্ত্বের বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে স্পোর্টিং পিচে। তাই ভারতীয় কন্ডিশনের এসে তাদের সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ কঠিনই বটে।

যদিও ভারতের মাটিতে ভারতকেই টেস্ট সিরিজ হারানো শেষ দলটা আবার তারাই। গত প্রায় এক যুগ ধরে দেশের মাটিতে কোনো টেস্ট সিরিজ হারেনি ভারত। এই সময়ে তারা খেলেছে ১৬টি সিরিজ। ঘরের মাঠে তাদের সবশেষ হার ২০১২ সালে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। অ্যালেস্টার কুকের নেতৃত্বাধীন দল চার ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল।

ইংলিশদের ওই সিরিজ জয়ে বড় অবদান ছিল গ্রায়েম সোয়ান ও মন্টি পানেসারের। অফ স্পিনার সোয়ান নিয়েছিলেন ২০ উইকেট, বাঁহাতি স্পিনে পানেসারের শিকার ছিল ১৭টি। এবারও সফরকারী দলে আছে চার বিশেষজ্ঞ স্পিনার। তাই বলাই বাহুল্য, ভারতকে হারাতে হলে বাজবল নয়, স্পিন দিয়েই হারাতে হবে।

হায়দ্রাবাদ টেস্টেও তাঁরা জিতেছিল এই স্পিনের কল্যাণেই। সিরিজ বাঁচাতে হলে একটি জয়ের সাথে ড্রয়ের বিকল্প নেই ইংল্যান্ডের সামনে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্টোকস অবশ্য বলেই রেখেছেন, তাঁরা পরের দুই টেস্ট জিতে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিতে চায়। এখন দেখার পালা, স্টোকসের এই চাওয়া কতটা পূরণ হয়।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link