এলেন, দেখলেন, হ্যাটট্রিক করলেন

এলেন, দেখলেন আর জয় করে নিলেন। এই বাক্যটি যথার্থই মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির ক্ষেত্রে। তরুণ মৃত্যুঞ্জয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের অভিষেক ম্যাচেই স্মরণীয় করে রাখলেন নিজের অভিষেক। বা-হাতি এই পেস বোলার দেখালেন হেরে যেতে নয়, তিনি এসেছেন জয় করতে। নিজের নামের মাহাত্ম্যই হয়ত তাঁকে হেরে যেতে শেখায়নি।

২০২০ সালে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব ১৯ দল যখন বিশ্বকাপ জিতলো মৃত্যুঞ্জয় তখন ছিলেন সেই দলের একজন সদস্য। কিন্তু না তিনি শেষমেশ খেলতে পারেননি একেবারে টুর্নামেন্টের শেষ অবধি। তাঁর আগেই হানা দেয় ইনজুরি। যেই ইনজুরি শুধু যে তাঁর জীবন থেকে একটি স্বর্ণালী সুযোগ কেড়ে নিয়েছে তা নয়। কেড়ে নিয়েছে পুরো একটি বছর। কিন্তু তিনি তো দমে যাওয়ার পাত্র নন।

সেটাই তিনি প্রমাণ করলেন বিপিএলে। নিজেকে প্রমাণ করার একটি সুযোগ তিনি খুব করে খুঁজছিলেন। সেই সুযোগটা এলো সিলিটের বিপক্ষে চট্টগ্রাম পর্বে ঘরের দলের হয়ে। প্রায় দুইশ রান তাড়া করতে নামা সিলেট সানরাইজার্স ব্যাটাররা দারুণ শুরু পান এনামুল হক বিজয়ের হাত ধরে। ১৮ তম ওভার পর্যন্ত যেখানে দুই দলেরই জেতার সম্ভাবনা প্রখর, ঠিক তখন সিলেটের ব্যাটিং অর্ডার তছনছ করে দিয়ে মৃত্যুঞ্জয় তুলে নেন এবারের বিপিএলের প্রথম হ্যাট্রিক।

১৮ তম ওভারটার শুরুটা একদমই ভাল হয়নি তাঁর। দারুণ শুরু করা এনামুল হক বিজয় প্রথম বলে একটি ছক্কা হাঁকান, পরের বলে চার। চাপে পড়ে যান তরুণ মৃত্যুঞ্জয়। ঠিক এরপরই পুরো বাংলাদেশ দেখে আসলে নিজের দিনে মৃত্যুঞ্জয় কি করতে পারেন। তৃতীয় বলেই ফেরান ছন্দে থাকা বিজয়কে। এরপরে সিলেটের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত পরিণত হন মৃত্যুঞ্জয়ের দ্বিতীয় শিকারে।

দারুণ এক সুযোগ। ইতিহাসের পাতায় নিজেকে তুলে দেওয়ার সূবর্ণ সুযোগ। এরপর বিদেশি অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রবি বোপারাকে অপ্রতিরোধ্য এক ইয়োর্কার বলে কুপকাত করে তৃতীয় উইকেট তুলে নেন মৃত্যুঞ্জয়।

বিপিএলের ইতিহাসের প্রথম হ্যাটট্রিকের মালিক পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ সামি। সেটা ২০১২ সালের কথা। দুরন্ত রাজশাহীর হয়ে প্রথম আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন মোহাম্মদ সামি।
এরপর থেকে শুরু হয় অপেক্ষা। অপেক্ষার অবসান হয় বছর তিনেক পর।

২০১৫ সালের আসরে বরিশাল বুলসের পেসার সিলেট স্টার্সের বিপক্ষে টানা তিন বলে তিন উইকেট নিয়েছিলেন আল-আমিন হোসেন। এরপর আবারও অপেক্ষা।

এরপর ২০১৯ সালের আসরে তিনটা হ্যাটট্রিকের দেখা পাওয়া যায়। ওই আসরে ঢাকা ডায়নামাইটসের রহস্য স্পিনার আলিস আল ইসলাম হঠাৎ করে এসেই রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন। সেটা ছিল আলিসের অভিষেক ম্যাচ।

ওই আসরে এর আগেই হ্যাটট্রিক করেন দুই বিদেশি। তাঁরা হলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল ও পাকিস্তানের ওয়াহাব রিয়াজ। এবার সেই তালিকায় যোগ হল বাংলাদেশের মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর নাম। তালিকায় তিনি তৃতীয় বাংলাদেশি।

বিপিএলে যত হ্যাটট্রিক

  • মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী (চট্টগ্রাম): ২৯ জানুয়ারি ২০২২
  • আন্দ্রে রাসেল (ঢাকা): ৩০ জানুয়ারি ২০১৯
  • ওয়াহাব রিয়াজ (কুমিল্লা): ২৮ জানুয়ারি ২০১৯
  • আলিস ইসলাম (ঢাকা): ১১ জানুয়ারি ২০১৯ৎ
  • আল-আমিন হোসেন (বরিশাল): ২৪ নভেম্বর ২০১৫
  • মোহাম্মদ সামি (রাজশাহী): ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link